রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকায় এমনই একটি দৃশ্য চোখে পড়ে। খামারবাড়ি মোড় থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক মেলার দিকে কয়েক পা এগুলেই দেখা যায়, জাতীয় সংসদের পাশে ফুটপাতে ২০ থেকে ২৫ বছরের একটি মেয়ে নির্দ্বিধায় ঘুমিয়ে রয়েছে।
এই কনকনে হাড় কাঁপানো শীতে তার বিছানায় লেপ, তোষক বা জাজিম নেই। গায়ে নেই লেপ-কম্বল। পাতলা একটি প্লাস্টিক বিছিয়ে গভীর ঘুমে মগ্ন সে।
সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ১০ টা থেকে সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত নাম না জানা মেয়েটির ঘুম ভাঙার অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু রাস্তার রিকশার বেল, গাড়ির হর্ণ, পথচারীর পায়ের শব্দ কোনো কিছুই তার ঘুমে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
আর এটাকে এককভাবে দেখার সুযোগ নেই। আমাদের সমাজের হাজারো মাথা গোঁজার ঠাঁইহীনদের প্রতীক এই মেয়েটি। যাদের কথা ভাবার বা তাদের জন্য কিছু করার কেউ নেই আমাদের এই ভদ্র সমাজে। যদিও এখানে আছে নামধারী অনেক প্রতিষ্ঠান। যারা দেশ-বিদেশ থেকে এদের উন্নয়ন করার কথা বলে কোটি কোটি টাকা এনে নিজেদের গাড়ি-বাড়ি বানানো ও ভোগ বিলাসে পিছিয়ে নেই।
সমাজে অনেক বিত্তবান আছেন দামি দামি কম্বল-তোষকের মাঝেও তাদের ঘুম আসে না। ঘুমের জন্য ওষুধের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হয় তাদের। অনেকে ক্ষেত্রে আবার ওষুধও কাজ করে না।
অথচ ঘুমের ওষুধ আর নানা ধরনের অপচয়ে তারা যে খরচ করে থাকেন তার কিছু এরকম নিঃস্বদের পেছনে খরচ করতেন তাহলে হয়তো আমাদের কাউকে রাস্তার পাশে শুয়ে থাকার দৃশ্য দেখতে হতো না।
যেমনটি বলছিলেন পাশে থাকা এক রিকশা চালক আব্দুর রহীম। ঘুমন্ত মেয়েটির ছবি তুলতে দেখে তিনি বলে ফেললেন, কি হবে স্যার এর ছবি তুইলা? এসব গরীবদের দেখার কেউ নাই স্যার। ওর ঘুমটা নষ্ট কইরেন না।
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, দেশ এগিয়ে যাক সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ নিয়ে। কাউকে রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে ঘুমিয়ে থাকার দৃশ্য যেন আর দেখতে না হয় এটাই প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৭
এমএইচকে/আরআই