ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাইদ খোকন ঘোষিত, খালপাড়ের অবৈধ স্থাপনা তুলে দেওয়ার খবর শুনেছেন আগেই। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রাথমিকভাবে আগামী ০৬ থেকে ০৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীর নন্দীপাড়া থেকে ত্রিমোহনী ও হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ এলাকায় অবৈধ দখলমুক্তির জন্য অভিযান চালানো হবে।
দোকান তুলে দিলে কী হবে জিজ্ঞেস করতেই রহিমার উত্তর, কী আর হইবো। তুইলা দিলে যামুগা। নন্দীপাড়া বাজার থেকে উত্তর-পূর্বমুখী প্রায় আড়াই কিলোমিটারের ত্রিমোহনী সড়ক মিলেছে ত্রিমোহনী ব্রিজে। সড়কের পাড়ঘেঁষে বয়ে গেছে মান্ডা খালের নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী অংশটি। পশ্চিম দিক থেকে এসে রামপুরা খাল মোহনা ছুঁয়ে মিশেছে বালু নদীতে। অন্যটি পূর্ব দিকে আসা মেশা মান্ডা খালের অন্য একটি শাখা। এই তিন খালের মিলিত স্থান ত্রিমোহনী। অর্থাৎ তিন মোহনা। রহিমাদের দোকানগুলো ত্রিমোহনী সড়কের হাতে হাত ধরে বয়ে চলা মান্ডা খালের নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী অংশের পাড়ে। বলা ভালো, খালের বুকে। ভরাট ও অবৈধ দখল হতে হতে এর প্রস্থ এখন ৩০ থেকে ৪০ ফুটে ঠেকেছে। এরও অধিকাংশ জায়গাজুড়ে উঠেছে ইসমাইল, ওসমান, আবুল কালাম, জামালদের হরেক দোকান।
অবৈধ উচ্ছেদ অভিযানে রহিমার ‘তুইলা দিলে যামুগা’র মতো দোকান গুটিয়ে চলে যেতে হবে সবাইকেই। সেক্ষেত্রে উচ্ছেদে ভাঙা পড়বে- মুরগি, শাকসবজি, চা, হোটেল, কাঠ, জ্বালানি কাঠ, মুদি দোকান, হাঁড়িপাতিল, দরজি দোকান, রিকশা-সাইকেল সারাই, সেলুন, বিস্কুটের কারখানা, রিকশা-সাইকেল গ্যারেজ, ভাঙাড়ি, মাছের দোকান, পান-সুপারি, বেড-বালিশ প্রভৃতির দোকান।
ত্রিমোহনী মোড় থেকে যতো পা নান্দীপাড়া মূল বাজারের দিকে এগিয়েছে, ততো পাল্টেছে দোকানের ধরন। এদিকটা বাঁশ-কাঠের বেড়ার দোকান হলেও মূল বাজারের দিকে টিনঘেরা ও পাকা দোকানের সংখ্যা বেশি। রয়েছে জেলা পরিষদ নির্মিত দোতলা মাদারটেক-নন্দীপাড়া বাণিজ্যিক বিপনী। খালের পাড়ঘেঁষে প্রশস্ত এ মার্কেটটিও মাথা তুলেছে। খালের পাড়ঘেঁষে কেবল দোকানপাটই নয়, রয়েছে বাড়িও। নিম্নবিত্ত মানুষ সব। কোথাও থাকার জায়গা নেই তাই সরকারি জমি পেয়ে টিন বা কাঠের বাড়ি তুলেছেন। এখন খাল সংস্কারের সরকারি অভিযানে সংসার গোটাতে হবে তাদের। একদিকে ত্রিমোহনী সড়ক, মাঝখানে খাল, ওপাড়ঘেঁষে কাঁচা-পাকা বাড়িঘর। চার-পাঁচতলা অ্যাপার্টমেন্টও রয়েছে। প্রত্যেকেরই দাবি, এসব ব্যক্তি মালিকানার জমি। সড়কের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের ব্যবস্থা নিজেদের নির্মিত সাঁকো। কোনোটি বাঁশের, কোনোটি কাঠ, লোহা কিংবা রড-সিমেন্টের। যেকোনো একটি সাঁকোর মাঝখানে গিয়ে সামনে-পিছনে তাকালে, উপরে সাঁকো আর নিচে কচুরিপানা ছাড়া কিছুই নজরে আসে না। অবস্থা যেনো ‘একটি বাড়ি, একটি সাঁকো’র চিত্র! এসব সাঁকো পেরিয়ে বাসিন্দারা ত্রিমোহনী সড়কে আসেন। অথচ বোর্ডে লেখা ঢাকা ওয়াসার পরিষ্কার নির্দেশ- ‘খালের মধ্যে সাঁকো, পানির লাইন, মাচা, ঘরবাড়ি, টয়লেট, দোকান, রিকশা গ্যারেজ ইত্যাদি নির্মাণ দণ্ডনীয় অপরাধ’।
মানেও পরিষ্কার, এই নির্দেশের আওতায় যেসব স্থাপনা পড়বে এর সবই ভাঙা পড়বে।
ততোক্ষণে সোমবারের (২৩ জানুয়ারি) সূর্য ডুবি ডুবি। ডিউটি শেষে ঘরে ফিরছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. জাহাঙ্গির আলম। কথাপ্রসঙ্গে জোর দিয়ে একটি কথা বলে গেলেন, অবৈধ স্থাপনা তুলে হয়তো ব্যক্তিবিশেষের ক্ষতি হবে কিন্তু এতে সবার ভালো হবে। আর দেশের ভালো ও উন্নয়নের জন্য যা করার তা করতেই হবে!
বাংলাদেশ সময়: ২১২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৭
এসএনএস