সোমবার (২১ জানুয়ারি) ও মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) দুইদিন খননকাজ শেষে এ তথ্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশ-চীনের প্রত্নতাত্ত্বিকদের অংশগ্রহণে এ খননকাজ চলে।
খনন কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রাথমিকভাবে অল্প পরিসরে পরীক্ষামূলক খনন করে কিছু সূত্র পাওয়া গেছে। বল্লাল বাড়ির নাম ডাক এখনো রয়েছে। বল্লাল সেন ছিলেন সেন বংশের রাজা। বিক্রমপুর ছিল সেনদের রাজধানী। এখন বল্লাল বাড়িটার দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে তার চারপাশে খাল খনন করা ছিল। এছাড়া রামপাল কলেজের দিক এখনো লো-ল্যান্ড, পানি জমে থাকে। আগের দিনে প্রাসাদের আশপাশে এ রকম অবস্থা ছিল, যাতে শত্রু পক্ষ সহজে আক্রমণ করতে না পারে।
তিনি বলেন, ২০১১ সাল থেকে বল্লাল সেনের বাড়ি খনন কাজ করার চেষ্টা শুরু করি। এখন জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় খনন করছি। এখান থেকে আমরা প্রাচীন ইট, ইটের টুকরা, মৃৎ পাত্রের টুকরো, কাঠ-কয়লা, পাথর, চাইনিজ সিরামিক, চারকোল পাওয়া গেছে। এছাড়া নিকটবর্তী রঘুরামপুর ও নাটেশ্বরে প্রথম দিকে যেসব প্রাচীন উপাদান পাওয়া যায় সেগুলোও পাওয়া গেছে। এখান থেকে চারকোল সংগ্রহ করে আমেরিকান গবেষণাগার ‘বেটা’তে পাঠানো হবে। চারকল কার্বন-১৪ পরীক্ষায় ব্যবহৃত হয় এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রত্ননিদর্শনের বয়স বা নির্মাণকাল নির্ধারণ করা যায়। পারিপার্শ্বিক অবস্থান দেখে এখানে প্রাসাদ ছিলো বলে ধারণা করা হচ্ছে। যা পাওয়া গেছে তা প্রাসাদের চরিত্রের সঙ্গে মিল রয়েছে।
সুফি মুস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, এখানে যাদের জমি রয়েছে তাদের নিশ্চিত করেছি বল্লাল বাড়ির কোনো জায়গা সরকার নেবে না। পরীক্ষামূলকভাবে আরো কয়েকটি জায়গায় খনন করা হবে। এ বছর আর বল্লাল বাড়িতে খনন হবে না। পরের বছর রিপোর্ট পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিক্রমপুরে সেনরা রাজত্ব করে গেছেন, এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় ১০০-২০০ বছরেও কেউ উদ্যোগ নেয়নি। এখন নেওয়া হয়েছে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
খননের উদ্যোক্তা অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি নূহ-উল-আলম লেনিন বাংলানিউজকে জানান, ২০১১ সালে রঘুরামপুর, নাটেশ্বর খনন কাজ শুরু করি। এ স্থানে রাজা বল্লাল সেনের বাড়ি। কিন্তু কখনো খনন না হওয়ার কারণে প্রাচীন কোনো স্থাপত্য দৃশ্যমান ছিল না। কিন্তু এখানে যারা ঘরবাড়ি করে দীর্ঘদিন ধরে থাকছেন তাদের অনুমতি সাপেক্ষে অল্প কিছু জায়গায় খনন কাজ শুরু করি। প্রাথমিকভাবে অল্প একটু জায়গায় খনন করে বেরিয়ে এসেছে প্রাচীন কিছু নিদর্শন।
তিনি বলেন, এখানে বর্গাকৃতির একটি দুর্গ ছিল। আমরা তো পুরোটা খনন করিনি, যতটুকু খনন করেছি স্থাপত্বের লক্ষণগুলো বেরিয়েছে। লক্ষণগুলো ও অন্যান্য জরিপ মিলিয়ে ধারণা করা যাচ্ছে, লক্ষণ সেনের বাড়িতে একটা প্রাচীর ঘেরা দুর্গের মতো প্রাসাদ ও মন্দির ছিলো। এটা যদি ব্যাপক আকারে খনন করা যায় তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সংযোজন করার সূচনালগ্ন বলা যেতে পারে।
ব্যক্তিগত ধারণা থেকে তিনি বলেন, বিক্রমপুর ও রামপালকে ঘিরে ১৩-১৪ বর্গমাইল এলাকায় আরো অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। এসব কাজে আমরা চীনা গবেষকদের সহায়তা নিয়েছি তারা আর্থিক ও কারিগরি দিক থেকে আমাদের সহায়তা করেছে।
জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা বাংলানিউজকে বলেন, জেলা প্রশাসন তাদের সহযোগিতা করছেন। যাদের জমিতে এসব খনন কাজ চলছে তাদের অনুরোধ করবো সহযোগিতা করার জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৮
এনটি