কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে বাড়ি থেকে বের হন তারা। বেশ কয়েকটি সড়কের নির্দিষ্ট স্থানে এসে ভিন্ন ভিন্ন দলে একত্র হন এসব কর্মজীবী মানুষের দল।
বছরের বারো মাসই এভাবে বাইসাইকেল নিয়ে কর্মস্থলে আসেন এসব কর্মজীবী মানুষগুলো। তবে ঝড়-বৃষ্টির সময়টাতে তাদের অনেক কষ্ট হয়। অনেক দিন তাদের পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে যেতে হয়। অথবা ভিন্ন মাধ্যমে বাড়তি টাকা গুণতে হয় কর্মস্থলে যেতে। তবু বাইসাইকেল নিয়ে বেঁচে থাকার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
এদের একেকজনের পেশা একেকরকম। কেউ রাজমিস্ত্রী। আবার কেউবা রঙমিস্ত্রী। কেউ স্বর্ণকার। কেউবা নির্মাণ শ্রমিক। এক কথায় বলতে গেলে কর্মজীবী মানুষ তারা। শ্রমিক বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন তারা। তবে তাদের শ্রমের দাম তুলনামূলক কম। আবার নির্ধারিত সময় কর্মস্থলে উপস্থিত হতে হয়। নিজের খাবারের ব্যবস্থাও নিজেকে করতে হয়। সামান্য এদিক সেদিক হলে ওইদিনের হাজিরা কাটা পড়ে যায়। অথবা সময় অনুযায়ী পারিশ্রমিক কমে দেওয়া হয়। তাই স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ তারা।
আর এসব কর্মজীবী মানুষদের কর্মস্থল বগুড়া শহর ঘিরে। বগুড়া শহরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ফুটপাতের ব্যবসা কেন্দ্রিক কাজকর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করেন মানুষগুলো। বগুড়া শহরতলী ও আশ-পাশের এলাকায় বসবাস করেন তারা।
জেলার শাজাহানপুর, গাবতলী, কাহালু, মহাস্থান, সাবগ্রাম, রানীরহাটসহ বগুড়া শহরতলী ও আশ-পাশের এলাকাগুলোতে এসব কর্মজীবী মানুষরা বাইসাইকেল নিয়ে শহর এলাকায় আসেন।
তাদেরই একজন আশরাফ আলী। তিনি পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। দিন শেষে কাজের পারিশ্রমিক পান ৩৫০ টাকা। আবার কোনো কোনো সময় পারিশ্রমিক কমও দেওয়া হয়। নির্মাণ শ্রমিক আশরাফ আলী বাংলানিউজকে জানান, সকাল বাড়ি থেকে খেয়ে কাজে আসি। দুপুরের খাবার নিজের। তাই বাড়ি থেকে দুপুরের খাবার নিয়ে আসি। যাতায়াত খরচও নিজের। দিনশেষে যে পারিশ্রমিক মেলে বাইসাইকেল নিয়ে কর্মক্ষেত্রে না আসলে দুপুরের খাবার ও আসা যাওয়া করতেই অনেক টাকা শেষ হয়ে যায়। তাই বাইসাইকেল নিয়ে আসা যোগ করেন শ্রমিক আশরাফ আলী।
লেদমিস্ত্রী আবু বক্কর বাংলানিউজকে জানান, কাজ শেষ করতেই রাত ৯টা বেজে যায়। আবার অনেক দিন আরো রাত হয়। এসময় গাড়ি পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও বাড়তে ভাড়া গুণতে হয়। আবার সকাল ৮টার মধ্যেই দোকানে আসতে হয়। অথচ সেই হিসেবে পারিশ্রমিক দেয় না মহাজন। কিন্তু তাই বলে তো আর বাড়ি বসে থাকলে পেটে ভাত যাবে না। গরিবের কর্ম করেই জীবন চালাতে হবে। এজন্য বাড়তি খরচ বাঁচাতে বাইসাইকেলে করে আসা যাওয়া করা হয়।
শহরের একটি দোকানে স্বর্ণকারের কাজ করেন সুবল নামে এক কারিগর। আরেকজন আব্দুল মজিদ রঙের কাজ করেন। তারাও নিয়মিত বাইসাইকেল নিয়ে কর্মস্থলে আসেন। বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে একই সুরে কথা বলে ভিন্ন কাজের এই দু’জন কারিগর।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৯
এমবিএইচ/এএটি