রংপুর: রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী চুড়ান্ত না হওয়ায় নির্বাচনী মাঠ সরগরম হয়ে উঠছে না। তফসিল ঘোষণার পরও অনেকটা সুনসান হয়ে আছে পরিস্থিতি।
জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচনে এক ধরনের টানাপোড়নের ফলে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৯ নভেম্বর। ১ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই এবং ৮ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ৯ ডিসেম্বর। এরপর প্রার্থীরা ১৭ দিন প্রচার-প্রচারণার সুযোগ পাবেন। ২৭ ডিসেম্বর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এক টানা ভোটগ্রহণ চলবে।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে বড় দলগুলো প্রার্থী চুড়ান্ত করতে পারেনি। এ কারণে মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে এক ধরনের সুনসাম নীরবতা পালন করতে দেখা গেছে।
রসিক নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের অনেক আগে থেকে বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজার রহমানকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু এ নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের মধ্যকার দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
জাতীয় পার্টির একটি সূত্র থেকে জানা যায়, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে কোনো কাজ করতে পারছেন না জিএম কাদের। ফলে তিনি মেয়র মোস্তাফিজার রহমানকে সমর্থন দিয়ে রাখলেও মনোনয়ন দিতে পারছেন না। জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে কোনো নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার এখতিয়ার থাকে কেবল দলের চেয়ারম্যানের।
অপরদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রায় এক ডজন প্রার্থী এরই মধ্যে দলীয় মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তবে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীসহ দলীয় নেতাকর্মীরা।
এদিকে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলে জানিয়েছেন রংপুর মহানগর কমিটির আহবায়ক সামসুজ্জামান সামু। তিনি বলেন, এ সরকারের অধীনে বিএনপি আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না।
এছাড়াও জাসদ, বাসদ ও ইসলামী শাসনতন্ত্রসহ প্রায় এক ডজন প্রার্থী এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
রওশন এরশাদের সমর্থন নিয়ে পাল্টা প্রার্থী হিসেবে রংপুর পৌরসভার সবশেষ মেয়র আব্দুর রউফ মানিক নির্বাচনের মাঠে নামার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিসেব মেলাতে না পেরে তিনি পিছুটান দিয়ে আমেরিকা ফিরে যান।
এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, সময় হলে প্রচার প্রচারণা চালানো হবে। প্রতীক হিসেবে লাঙল না পেলেও নিজের জনপ্রিয়তার কারণে জয়ের ক্ষেত্রে তা প্রভাব ফেলবে না।
রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সফিক বলেন, বিগত দিনের চেয়ে রংপুর মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ অনেক সুসংগঠিত। আমরা খুব শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। শুধু সিটি করপোরেশন নির্বাচন নয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আওয়ামী লীগ চূড়ান্ত পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। আমরা প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া চালাচ্ছি। আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় রংপুর সিটি নির্বাচন বিচ্ছিন্ন কোনো অংশ নয়।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৮ জুন পৌরসভা থেকে ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশন গঠন হয়। এরপর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর। এতে ১ লাখ ৬ হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মরহুম সরফুদ্দিন আহমেদ ঝণ্টু প্রথম নগরপিতা হিসেবে নির্বাচিত হন। ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট পেয়ে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর দ্বিতীয় নির্বাচনের সময় এই সিটি করপোরেশনের ভোটার ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। এতে মেয়র ঝন্টুকে প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। নির্বাচনের কয়েক মাস পরে ঝন্টুর মৃত্যু হয়।
২০৫ দশমিক ৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের রংপুর সিটি করপোরেশনের বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। আর ভোটার রয়েছেন চার লাখের বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২২
এফআর