ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩২, ০৬ মে ২০২৫, ০৮ জিলকদ ১৪৪৬

মুক্তমত

মুফতী ফয়জুল করীম কি বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার?

শহিদুল ইসলাম কবির | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৪৫, মে ৫, ২০২৫
মুফতী ফয়জুল করীম কি বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার? মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। ওই নির্বাচনের ভোট শুরুর ঘণ্টাখানেক পরেই প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হাতে মারাত্মক হামলার‌ শিকার হন তিনি।

এ ঘটনায় দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানতে চেয়েছেন- ‘তিনি কি ইন্তেকাল করেছেন?’ তার এ প্রশ্নেও দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে।  

সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে হামলাকারীর বিষয়ে তখন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, বরং হামলাকারীদের নিরাপদে রাখা হয়েছে।  

হামলার আগে-পরে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে জাল ভোট ও ব্যাপক কারচুপি, কেন্দ্র দখলের মহোৎসব হয়েছে তার প্রমাণ দেশের ইলেকট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়া।

১২ জুন ২০২৩ তারিখে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকা লিখেছে- “বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের ওপর দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময় ফয়জুল করিমের গাড়ি ভাঙচুর ও তার সঙ্গে থাকা কর্মীদের মারধর করে নৌকার ব্যাজধারী নেতাকর্মীরা। মুফতি ফয়জুল করীম নিজেই সাংবাদিকদের এ অভিযোগ করেন। আজ দুপুরে এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি। ”

ফয়জুল করিম বলেন, ‘নৌকার কর্মীদের হামলার অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে যাই। রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়ে বের হয়ে ২২নং সাবেরা খাতুন স্কুল কেন্দ্রে গিয়ে দেখি, নৌকার ব্যাজধারী কর্মীরা ভিড় করছে। প্রিজাইজিং অফিসারকে এ কথা জিজ্ঞেস করতেই- আমার ওপর হামলা করে নৌকার কর্মীরা। তারা আমাকে কিলঘুষি মারে। এতে আমার ঠোঁট ফেটে যায়। ’ 

তিনি বলেন, ‘রক্ত যখন ঝরিয়েছি তাই শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত মাঠে থাকব। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়ে মাঠ থেকে বিদায় হবো’।  

২নং ওয়ার্ডের কাদের চৌধুরী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হাতপাখার কর্মীদের মারধরের অভিযোগের খবর পেয়ে প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম উপস্থিত হলে তার গাড়িতে ভাঙচুর ও সঙ্গে থাকা লোকজনের ওপর হামলা চালায় নৌকার কর্মীরা। এছাড়া ২নং ওয়ার্ডের শেরেবাংলা দিবা-নৈশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পোলিং এজেন্টের কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের তৎকালীন কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘হাতপাখার প্রার্থী ফয়জুল করীমের ওপর হামলায় যারাই জড়িত থাকুক তাদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনা হবে। ’ ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের গাফিলতির বিষয়ে তিনি তখন বলেন, ‘এটা তদন্ত করে কোনো পুলিশ সদস্যের গাফিলতি থাকলে তাকেও শাস্তির আওতায় আনা হবে। ’

এই সংবাদ বিশ্লেষণে স্পষ্ট যে, মুফতী ফয়জুল করীম ভোটকেন্দ্রে নৌকার কর্মীরা ভোটকেন্দ্র দখল করেছে বলে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়ে আরেক কেন্দ্রে গেলে নৌকার কর্মীরা তার ওপর সব হামলে পড়ে। নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে বদ্ধপরিকর হলে এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন তাৎক্ষণিক স্থগিত করে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করে ফের ভাট আয়োজন করতো।  

তৎকালীন পুলিশ কমিশনার অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা থেকে বিরত থাকার ঘটনার পরে তৎকালীন ফ্যাসিস্টদের রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতি অনাস্থা থেকে হাত পাখা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেননি। বরং মানুষের ভোটের অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচনকালীন সময়ে দেওয়া ঘোষণা অনুযায়ী লড়াই অব্যাহত রেখেছেন।  

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম সামনে থেকে জীবনের মায়া ত্যাগ করে পল্টন মোড়, শাহবাগ চত্বরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দেশের মানুষকে মাঠে নামতে উৎসাহিত করেছেন।  

এ আন্দোলনে বিজয়ের পরে ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য গত ১৭ এপ্রিল তিনি বরিশালের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল মামলা দায়ের করেছিলেন। মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমসহ দেশের মানুষ যখন ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় ছিলেন, তখন আদালত কর্তৃক মামলা গ্রহণ না করা বৈষম্যমূলক আচরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। আদালত কর্তৃক এমন ঘোষণা দেওয়ার ঘটনা হতাশাজনক।  

নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল নিশ্চয়ই ১২ জুন ২০২৩ তারিখে বরিশালে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিনের ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন। আমরা আশাবাদী উচ্চ আদালত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমকে মেয়র ঘোষণা দিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবে।

ইমেইল: shahid_kabir2007@yahoo.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।