বরিশাল: বরিশালের নেতাকর্মী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে জাতীয় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের মতবিনিময় সভার শেষে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরিকারীদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাত ১১টায় বরিশাল নগরের আমতলার মোড় এলাকায় এ বিক্ষোভ মিছিল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল মহানগর ও জেলার নেতাকর্মীরা।
মিছিল শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল জেলার সদস্য সচিব এসএম ওয়াহিদুর রহমান শান্ত বলেন, নাহিদ ইসলাম ভাই, ডা. মাহমুদা আলম মিতু ও ডা. তাসনিম জারা আপুসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বৃহস্পতিবার সকালে পটুয়াখালীতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে সন্ধ্যায় বরিশাল ক্লাবে আমাদেরসহ এনসিপির নেতারা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে ইফতার অনুষ্ঠান করেন তারা। যে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছাড়া বাইরের কারও অংশগ্রহণ করার কথা নয়। কিন্তু একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগের কায়দায় ইফতার ও মতবিনিময় শেষে নাহিদ ইসলাম ভাইকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করে এবং তাকে গাড়িতে উঠতে দেয়নি।
এ সময় ওই পক্ষ নাহিদ ইসলামের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় জানিয়ে তিনি বলেন, ওইসময় নাহিদ ইসলাম ভাই ও আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করা হয়। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল মহানগরের সংগঠক ইয়াসিন আরাফাতকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় এবং গোষ্ঠীগতভাবে আক্রমণ করে তাকে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। এমনকি আমাদের কর্মীরা মানবঢাল তৈরি করে সেখান থেকে আমাকে বের করে আনে।
তিনি বলেন, নবম-দশম শ্রেণির ছাত্রসহ কেডিসি ও পলাশপুর বস্তির ছেলেদের নিয়ে এসে নাগরিক পার্টি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটির নেতাদের ওপর হামলা চালায়।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম শাহেদ বলেন, যারা বরিশাল ক্লাবে অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি করেছে তাদের আমি ছাত্রলীগ বলি না। তবে তারা কমিটি হওয়ার পর থেকে ছাত্রলীগের কায়দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশালের কমিটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। তবে সেই অপচেষ্টাকে আমি বাধা প্রদান করায় আমার বিরুদ্ধে এবং আমার পক্ষে যারা অবস্থান নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ওই পক্ষটি অবস্থান নিয়েছে। সে সঙ্গে তারা আমাদের অপসারণের দাবি তুলছেন।
তিনি বলেন, আমাকে অপসারণের দাবি যৌক্তিক হলে সেটা যৌক্তিক পদ্ধতিতে কেন্দ্রে অভিযোগ দিলে, কেন্দ্র প্রমাণ সাপেক্ষে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতো। কিন্তু তারা তা না করে আজ এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ভাইসহ অনেক কেন্দ্রীয় নেতা ও অতিথিদের অবরুদ্ধ করে সন্ত্রাসী কায়দায় আমাদের পদত্যাগ করাতে। সেই অপচেষ্টা কমিটির সক্রিয় সদস্যরা তাৎক্ষণিক রুখে দিয়ে তাদের সেখান থেকে বের করে আনে।
তিনি বলেন, ওখানে আমাদের অনেককে অপমান-অপদস্থ করার পাশাপাশি শারীরিকভাবে অ্যাসল্ট করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব এবং এ অপতৎপরতার বিরুদ্ধে কেন্দ্রকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে এর আগে রাত ১০টায় বরিশাল প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অপর পক্ষের নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেন।
যেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক সুলাইমা জান্নাত সিফা বলেন, এখানে ওপেন সিক্রেট হচ্ছে দুটি কোরাম হয়ে গেছে। আমরা যারা ন্যায়ের পক্ষে কথা বলি তারা নাহিদ ভাইয়ের সঙ্গে বসতে চেয়েছিলাম, তিনি আমাদের পাঁচ মিনিট সময়ও দিয়েছিলেন। কিন্তু উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অন্য কোরাম আমাদের কথা বলতে দেয়নি এবং পরিস্থিতিটা ভিন্নখাতে নিয়ে যায়। তাদের একজন সংগঠক ইয়াসিন আরাফাত আমার গায়ে হাত দেয় এবং ওড়না ধরে টান দেয়, যা ডা. মাহমুদা মিতু আপু নিজেই দেখেছেন। এরপর কিছুটা ঝামেলা হয়।
তিনি বলেন, নাহিদ ভাইকে অপমান করতে নয়, আমরা চেয়েছি আমাদের মধ্যের সমস্যাটা ভাইয়া সমাধান করে দেন। কিন্তু সেটা তারা আমাদের করতে দেয়নি। এরপর কিছু হলুদ সাংবাদিক পুরো বিষয়টিকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যে আমরা নাহিদ ভাইয়ের পদত্যাগ চাইছি। কিন্তু কেন সেটা চাইবো, তিনি তো আমাদের একদফার ঘোষক ছিলেন।
তিনি বলেন, আমরা সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক শাহেদ ও জেলার সদস্য সচিবের পদত্যাগ চেয়েছি, কারণ তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অনেক অ্যালিগেশন আছে। আমার গায়ে দেওয়ার ঘটনায় আমি বিচার চাই। আমরা ইয়াসিনের পদত্যাগ চাই, কারণ সে সংগঠনে থাকলে মেয়েরা আরও হ্যারেজ হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র প্রতিনিধি লাবণ্য রহমান বলেন, নাহিদ ভাই পটুয়াখালী থেকে বরিশালে ইফতার মাহফিলে আসেন। এখানে তার ইচ্ছা ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কর্মীদের সঙ্গে পাঁচ মিনিটের জন্য হলেও কথা বলতে চেয়েছিলেন। এখানে তৃতীয় পক্ষ যারা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা কখনও চায়নি নাহিদ ভাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলুক। সেই জায়গা থেকে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে, সেজন্য আমরা বরিশালের নেতারা দুঃখ প্রকাশ করছি এবং নাহিদ ভাইয়ের কাছে ক্ষমাও চাচ্ছি। আমরা কেউ নাহিদ ভাইয়ের পদত্যাগ চাইনি, কারও মাথায়ও বিষয়টি আসেনি, সম্পূর্ণ অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল মহানগর ও জেলা কমিটিতে কিছু সদস্য আছে যাদের নিয়ে ন্যায়ের পক্ষের এ প্লাটফর্মে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে যেসব অ্যালিগেশন আছে সেসক ঘটনার তদন্ত কেন্দ্রীয় কমিটি করবে সে প্রত্যাশা যেমন রয়েছে, তেমনি অভিযোগগুলো প্রমাণ হলে তাদের এখান থেকে বাদও দেওয়া উচিত।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মহানগরের সদস্য নাফিজ ইমাম বলেন, আমরা সদস্যরা কোথাও কোনো জায়গাতে পাত্তা পাই না। আমরা আজ নাহিদ ভাইয়ের সঙ্গে সদস্যরা কথা বলতে চেয়েছিলাম। নাহিদ ভাই সেই সুযোগও করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তৃতীয় পক্ষের ঝামেলার কারণে সেটা আর পারিনি। এরপর বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আমি শহিদুল ইসলাম শাহেদ ও ওয়াহিদুর রহমানের পদত্যাগের কথা বলেছি কিন্তু সেখানে ভিন্ন কথা আসছে বলা হচ্ছে আমি নাকি নাহিদ ভাইয়ের পদত্যাগ চেয়েছি। এটি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বরিশাল ক্লাবের দ্বিতীয় তলায় ইফতার মাহফিল শেষে মতবিনিময় সভার শেষ দিকে এসেছে ছাত্রদের দুটি গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তবে সিনিয়রদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নাহিদ ইসলাম অনুষ্ঠান শেষ করে অতিথিদের নিয়ে সেখান থেকে নেমে আসেন।
এরপর তিনি আবারও বরিশাল ক্লাবের দ্বিতীয় তলায় উঠেন এবং কমিটির সদস্যদের সেখানে যেতে বলেন কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে দোতলা থেকে নেমে নাহিদ ইসলাম গাড়িতে ওঠেন।
এসময় ছাত্রদের একটি পক্ষ বরিশাল ক্লাবের গেট আটকে দেয়, যা নিয়ে অপর পক্ষের হাতাহাতি ঘটে। পরে কোতোয়ালি থানা পুলিশের সিভিল পোশাকের সদস্যরা গেট খুলে ভেতরে ঢুকে নাহিদ ইসলামের গাড়ি বের করে নিয়ে যান।
এ সময় কিছু ছাত্র গাড়ি বের হতে বাধা দিলেও কয়েক মিনিটের মধ্যে ক্লাব রোড পার হয়ে যায় নাহিদ ইসলামের গাড়ি। এরপর কিছু নেতা ডা. তাসনিম জারাকে ব্যারিকেড দিয়ে বরিশাল ক্লাব থেকে বাইরে নিয়ে যান। পরে ছাত্রদের একটি গ্রুপ কয়েকজনের ওপর ক্ষিপ্ত হয় এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও অবরুদ্ধ করে।
বাংলাদেশ সময়: ০২০০ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৫
এমএস/জেএইচ