সরকার যে সময়সীমার মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করতে চায়, তাতে আপত্তি নেই। তবে নির্বাচন আয়োজনের আগে গণহত্যাকারীদের বিচার, রাষ্ট্র কাঠামোর গুণগত পরিবর্তন, নির্বাচনের আগে বিচারকাজ দৃশ্যমান, নির্বাচনের আগে মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতাসহ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
বুধবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।
আখতার হোসেন বলেন, গত বছর জাতীয় শহীদ মিনারে একত্রিত হয়ে জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছিল। দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গতকাল ৫ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র পেয়েছি, তাতে জুলাইয়ের সকল শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। জুলাইয়ের সকল আন্দোলনকারী, শহীদ পরিবার, আহত সকলকে আইনি সুরক্ষা দেওয়ার কথা, প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে।
ঘোষণাপত্রের আরও পরিপূর্ণতার দাবি জানিয়ে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে সরকারের কাছে যে দাবিগুলো জানিয়ে এসেছিলাম, তার কিছু বিষয় এখানে অনুপস্থিত থেকে গেছে। এই ভূখণ্ডের মানুষের উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ের অন্যতম রেফারেন্স পয়েন্ট ‘৪৭-কে এখানে উল্লেখ করা হয়নি। বাংলাদেশের এই ভূখণ্ডের এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র পাওয়ার পেছনে ‘৪৭, ’৭১ এবং আমাদের ’২৪-এর যে আন্দোলন, তার সবকিছুর একটি সম্মেলন এই ঘোষণাপত্রকে আরও সম্মিলিত করতে পারে।
তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রে শহীদদের সংখ্যা প্রায় ১০০০ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ জাতিসংঘের রিপোর্টে ১৪০০ জন। সেক্ষেত্রে গত এক বছর ধরে সরকার শহীদ ও আহতদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছে। ঘোষণাপত্রে গত ১৬ বছরের বাংলাদেশের ইতিহাসের ঘটনা যুক্ত থাকলে জুলাই সংগ্রামগুলোর ঐতিহাসিক স্বীকৃতি সুস্পষ্টভাবে অর্জন করতে পারতো।
নতুন সংবিধানের দাবি জানিয়ে আখতার হোসেন বলেন, এনসিপি গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সংবিধান, সংবিধান পুনর্লিখন করতে সরকারের কাছে দাবি করে আসছে। ঐকমত্য কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়বস্তুতে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। এটি এখনো পর্যন্ত বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। সেই প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের যে নতুন রাজনৈতিক জনগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটেছে, তাদের অভিপ্রায়কে ধারণ করতে একটি নতুন সংবিধান আমাদের জন্য সমাধান।
তিনি বলেন, জুলাই সনদে যে সংস্কারগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধতা তৈরি হয়েছে এবং কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, সেইসব সংস্কারের বিষয়বস্তুকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়কাল থেকে বাস্তবায়ন করতে হবে। লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডারের (এলএফও) ওপরে এটাকে কার্যকর করতে হবে। এই জুলাই সনদ এবং ঘোষণাপত্রের কার্যকারিতার ভিত্তিতে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, দপ্তর সম্পাদক সালেহ উদ্দিন সিফাত প্রমুখ।
ডিএইচবি/এমজেএফ