ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলা

খালেদার অনুপস্থিতিতে চলছে তদন্ত কর্মকর্তার জেরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৬
খালেদার অনুপস্থিতিতে চলছে তদন্ত কর্মকর্তার জেরা খালেদা জিয়া

ঢাকা: প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশিদকে দ্বিতীয় দিনের মতো আসামিপক্ষের জেরা চলছে। অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় একই সাক্ষীকে জেরা ও নতুন সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি ধার্য করা হয়েছে।



জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রম চলছে রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালতে।

বৃহস্পতিবার(২১ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে দশটায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার ৩২তম ও শেষ সাক্ষী তদন্তকারী কর্মকর্তা হারুন অর রশিদকে খালেদা জিয়ার পক্ষে অসমাপ্ত জেরা করছেন আব্দুর রেজ্জাক খান।
 
দুই মামলায়ই খালেদা জিয়ার পক্ষে অনুপস্থিতির জন্য আবেদন জানান তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া। আদালত খালেদার অনুপস্থিতির আবেদন মঞ্জুর করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের আদেশ দেন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ৩২ জন সাক্ষী। অন্য ৩১ জনকে আসামিপক্ষের জেরা শেষ হয়েছে।

অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদকে আসামিপক্ষের জেরা ও নতুন সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। সর্বোচ্চ আদালতে এ বিষয়ে আপিল আবেদন বিচারাধীন থাকার কথা উল্লেখ করে এটি পেছাতে সময়ের আবেদন জানান খালেদাসহ জামিনে থাকা তিন আসামির আইনজীবীরা। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে ১১ ফেব্রুয়ারি দিন পুনর্নির্ধারণ করেন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা ছাড়া অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

জামিনে থাকা জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান আদালতে উপস্থিত আছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামি মোট ছয়জন। খালেদা ছাড়া অন্য পাঁচজন হচ্ছেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। আসামিদের মধ্যে ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক, বাকিরা জামিনে আছেন।

তাদের মধ্যে তারেক রহমানের পক্ষে হাজিরা দেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া এবং কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ আদালতে হাজির হয়েছেন।

২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

অন্যদিকে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

দুই মামলারই বাদী হলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।

জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।

২০১৪ সালের ১৯ মার্চ এ দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়।

খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও।

২০১৪ সালের ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে চালানোর আদেশ জারি করে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৬
টিএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।