ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

আ’লীগকে চটাতে চাইছে না জাপা

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৬
আ’লীগকে চটাতে চাইছে না জাপা

ঢাকা: জাতীয় পার্টি মনে করছে আগামী নির্বাচনও আওয়ামী লীগের অধীনে হবে। বিএনপির যে অবস্থা তাতে সরকারকে চাপে ফেলে কোন দাবি তাদের পক্ষে আদায় করা সম্ভব বলে মনে করছে না জাপা নেতারা।



তাই আওয়ামী লীগকে এখনই চটাতে চাইছে না জাতীয় পার্টির নেতারা। তারা চাইছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার ‍মাধ্যমে দলকে সংগঠিত করে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে। লক্ষ্য হচ্ছে আগামী নির্বাচনে সংসদে সম্মানজনক আসন নিশ্চিত করা। আগে এককভাবে সরকার গঠনের কথা বললেও এখন শক্তিশালী বিরোধীদল হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে দলটি কাজ করছে বলে জানা গেছে।

তবে একে ‘ক্ষয়িষ্ণু জাতীয় পার্টির, ক্ষয়িষ্ণু চিন্তা’ বলেও মন্তব্য করেছেন সিনিয়র অনেক নেতা। তারা বলেছেন, উপজেলা ও পৌর নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভরাডুবির কারণে এখন আর এককভাবে সরকার গঠনের স্বপ্ন দেখতে সাহস পাচ্ছে না জাতীয় পার্টির হাইকমান্ড। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে টেস্ট পরীক্ষা হিসেবে নিয়েছে তারা। এর ফলাফলের উপর নির্ভর করছে জাপার ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি যৌথসভায় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের প্রকাশ্যেই বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে আমাদের জন্য টেস্ট পরীক্ষা। এর ফলাফল থেকে বুঝতে পারবো ফাইনাল পরীক্ষার জন্য আমরা কতোটা প্রস্তুত। জনগণও সেভাবেই মূল্যায়ন করবে।
 
জাতীয় পার্টির নীতি নির্ধারকরা মনে করছে, খুব বড় ধরনের কোন পরিবর্তন না এলে আগামী নির্বাচনেও কোন রকম ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালের মতো একতরফা নির্বাচনের সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এমন পরিস্থিতি হলে গতবারের মতো ভুল করতে চায় না জাতীয় পার্টি। প্রয়োজন হলে এবার ‌আওয়ামী লীগের সঙ্গে দর কষাকষি করেই নির্বাচনে অংশ নেবে তারা।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এর বেশি ভাবতে পারছে না দলটির নীতি নির্ধারকরা। তবে আওয়ামী লীগ যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারে তাহলে এই হিসেবে বদলে যেতে পারে। পুরো পল্টি মারতে এক মুহূর্ত সময়ও নেবে না জাতীয় পার্টি।

জাতীয় পার্টি মনে করছে হঠাৎ করে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে পারে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলতে সরকার চলতি বছরের শেষ দিকেও নির্বাচন দিতে পারে। সে বিষয়ে মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে জাতীয় পার্টি।

এ ভাবনা থেকে কঠোর গোপনীয়তার মধ্যদিয়ে জাতীয় পার্টির সম্ভাবনাময় শতাধিক আসনের প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য হঠাৎ মধ্যবর্তী নির্বাচন হলে যেন শক্ত অবস্থান নিতে পারে জাতীয় পার্টি। আর তেমন পরিস্থিতি হলে জাতীয় পার্টিকে অবশ্যই পাশে পেতে চাইবে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে বিএনপিকে চাপে রাখার জন্য জাতীয় পার্টিকে সামনে ঠেলে দিবে আওয়ামী লীগ। আর এই সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে চায় তারা।

গত ২৩ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে খোদ এরশাদেই মুখ ফসকে এ কথা বলে ফেলেছেন। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ তাদের স্বার্থেই জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করবে। আমরা আর মধ্যবর্তী নির্বাচন চাইব না। এখন থেকে দলকে সংগঠিত করার কাজে মনোযোগ দেব।

এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী জিএম কাদের বাংলানিউজকে বলেছেন, আমাদের টার্গেট হচ্ছে আগামী নির্বাচনে এককভাবে তিন’শ আসনে প্রার্থী দেওয়া। আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। নির্বাচনেতো সবাই জিতবে না। কেউ জিতবে কেউ হারবে।

জাতীয় পার্টির যে সাংগঠনিক অবস্থা তাতে এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার মতো অবস্থা কি রয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির এই ভবিষ্যত কর্ণধার বলেন, মাঠ এখন ফাঁকা, হাতে অনেক সময় রয়েছে। আমরা যদি সত্যিকার বিরোধীদল হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারি তাহলে জনগণ জাতীয় পার্টিকে গ্রহণ করবে।
 
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের স্বাস্থ্যগত কারণও দলটির মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরশাদ মনে করছেন হয়তো আর খুব বেশি দিন তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না। যে কারণে এরই মধ্যে ছোট ভাই জিএম কাদেরকে জাতীয় পার্টির ভবিষ্যত কান্ডারি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

এরশাদ নিজেই যৌথসভায় বলেছেন, ‘আমার বয়স অনেক হয়েছে, আমি হয়তো আর বেশি দিন নেই। জীবনে আর চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। এখন আমার একটাই চাওয়া আমার মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টি বেঁচে থাকুক। জাতীয় পার্টি বেঁচে থাকলে আমি মরেও শান্তি পাবো। তোমাদের মাঝে আমি বেঁচে থাকতে চাই। ’

সিনিয়র অনেক নেতার কাছে এরশাদ তার ‍অভিপ্রায় ব্যক্ত করে বলেছেন, তার মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির লোকজন তার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালন করবে এটাই তার প্রত্যাশা। সে কারণে সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে গিয়ে ঝুঁকি নিতে চাইছেন না তিনি।

জাপা মনে করছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে খেলতে গিয়ে ধরা খেয়েছে বিএনপি। যেখানে এত বড় একটি দলের নাস্তানাবুদ অবস্থা সেখানে তো জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক ভিত অনেক দুর্বল। আবার দলের মধ্যেও রয়েছে চরম কোন্দল। এই অবস্থায় সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে বিপদে পড়তে চাইছেন না তারা। অনেক সিনিয়র নেতাই বলেছেন, ‘যাই হোক শান্তিতে আছি। পুলিশ দৌড়ানি দিচ্ছে না। এটাই কম কিসে। ’

আপাতত সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে দলকে এগিয়ে নিতে চান তারা। আগামী নির্বাচনে যদি আশি কিংবা ১’শ আসন নিয়ে বিরোধীদল হওয়া যায় তাহলে পরবর্তীতে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সহজ হবে। এখন সেভাবেই এগিয়ে যেতে চান।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৬
এসআই/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।