ঢাকা: কথায় কথায় ‘কঠোর’ কর্মসূচি দিয়ে ২০১১ সালের জুন মাস থেকে ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার ও দেশবাসীকে তটস্থ রাখা বিএনপি এখন ইস্যুর পর ইস্যু পেয়েও কিছু করতে পারছে না।
গত ১ বছর জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অসংখ্য ইস্যু তৈরি হলেও কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি।
গত ১৬ এপ্রিল প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান গ্রেফতার হওয়ার পর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী তাৎক্ষণিক প্রেস ব্রিফিং ডেকে ‘কঠোর’ কর্মসূচির হুমকি দেন।
‘অনতিবিলম্বে শফিক রেহমানকে নি:শর্ত মুক্তি না দিলে বিএনপি বসে থাকবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে তাকে মুক্ত করে আনা হবে’- রিজভীর এমন ঘোষণার দুই দিন পর ১৯ এপ্রিল সিনিয়র নেতাদের বৈঠক ডাকেন খালেদা জিয়া।
বৈঠকের খবর ছড়িয়ে পড়লে দলের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষিরা ধরে নিয়েছিলেন, শফিক রেহমানের সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক পরিচিতি কাজে লাগিয়ে একটা কঠোর কর্মসূচি দেবেন খালেদা জিয়া।
সূত্রমতে, সেদিনের বৈঠকে বেশ কয়েকজন প্রবীণ নেতা শফিক রেহমান ইস্যুতে ‘কিছু একটা’ করার পরামর্শ দেন বিএনপি প্রধানকে। তরুণ নেতারাও এই ইস্যুতে দলীয় কর্মসূচি পালনের পক্ষে মত দেন।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, বিষয়টিকে কেবল শফিক রেহমানকে হয়রানি করা হচ্ছে ভেবে নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। এর পেছনে সুদূর প্রসারী চিন্তা-ভাবনা সরকারের আছে। সুতরাং আমাদেরকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।
যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল তার বক্তব্যে বলেন, ম্যাডাম আমাদের বোধ হয় কিছু একটা করা দরকার। এভাবে ছেড়ে দিলে চলবে না।
জানা গেছে, শীর্ষ নেতাদের এসব বক্তব্য মনোযোগসহকারে শুনলেও কর্মসূচি দেওয়ার ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখাননি খালেদা জিয়া। কেবল শফিক রেহমানের ব্যাপারে এফবিআই’র কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেন শীর্ষ নেতাদের।
কেবল দলীয় ইস্যুতেই নয়, জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ও বৃহৎ রাজনৈতিক ইস্যুতেও কোনো কর্মসূচি দেওয়ার কথা চিন্তা করছে না বিএনপি।
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সীমাহীন সহিংসতা, ভোট কারচুপি, সন্ত্রাস ও প্রাণহানির ভুরি ভুরি অভিযোগ আনলেও- এ ইস্যুতে এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি বিএনপি।
কেবল সংবাদ সম্মেলন, প্রেস ব্রিফিং, ঘরোয়া বৈঠক, আলোচনা সভা, সেমিনার আর নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়েরেই সীমাবদ্ধ রয়েছে দলটি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা ও সন্ত্রাস সম্পর্কে ঢালাও অভিযোগ না করে বাস্তবতার নিরিখে প্রাণহানির বিষয়টি সামনে এনে কঠোর কর্মসূচি দিতে পারত বিএনপি। কিন্তু সরকারকে ‘নকআউট’ করার ‘অলীক’ স্বপ্নে গত তিন বছর একের পর এক ব্যর্থ আন্দোলনে বিএনপি তার নৈতিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ফলে একের পর এক ইস্যু দাঁড় হলেও কিছু করতে পারছে না বিএনপি।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮শ কোটি ডলার চুরির ঘটনায় গোটা দেশ ও আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক তোলপাড় হলেও এ ইস্যুতে কোনো কর্মসূচি দেয়নি বিএনপি।
কেবল দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ একটা পর্যবেক্ষণমূলক উপস্থাপনা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। এরপর তার ওই পর্যবেক্ষণ বিএনপির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের হাতে তুলে দেন দলটির অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম। পরে এ ইস্যুতে আর কোনো কর্মসূচি বিএনপি দেয়নি।
নিকট অতীতে খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বা কোনো মামলার চার্জশিট দেওয়া হলে দলের পক্ষ থেকে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হত।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একাধিকবার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলেও- এসব ইস্যুতে কোনো কর্মসূচি দেয়নি বিএনপি।
কেবল দলটির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল পৃথক পৃথক কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে দায় সেরেছে। যথারীতি মাঠে দেখা যায়নি তাদের।
তবে ইস্যুর পর ইস্যু হাতছাড়া হলেও কর্মসূচি না দেওয়ার বিষয়টিকে সাংগঠনিক দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন না দলটির শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, বিএনপি এখন দল গোছানোর কাজে আছে। এটাও বাংলাদেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দল গোছানো শেষ হলেই ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি দেবে বিএনপি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সংগঠন গুছিয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে কর্মসূচির দিকে এগুবো। সব ইস্যুই আমাদের পর্যবেক্ষণের মধ্যে আছে। জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আমরা এড়িয়ে যাচ্ছি না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে অবশ্যই আন্দোলন কর্মসূচি দেবে বিএনপি।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৬
এজেড/জেডএম