ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‍যুক্তরাষ্ট্রে জয়ের অ্যাকাউন্টে ২৫০০ কোটি টাকা, বললেন খালেদা

সিনিয়র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৬
‍যুক্তরাষ্ট্রে জয়ের অ্যাকাউন্টে ২৫০০ কোটি টাকা, বললেন খালেদা ছবি: বাদল- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের অ্যাকাউন্টে আড়াই হাজার কোটি টাকা জমা থাকার অভিযোগ করে এর উৎস তদন্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি তোলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

একইসঙ্গে তিনি সময় ক্ষেপণ না করে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে দেশের সংকট নিরসনে সরকারের প্রতি আহবান জানান।

শনিবার (৩০ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় কাকরাইল ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) মিলনায়তনে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি তোলেন।

সারা দেশে অব্যাহত গুম-খুনের দায় সরকারের বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপারন খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়া বলেন, দেশে গড়ে প্রতিদিন ১৪ জন খুন হচ্ছেন। আর এ ঘটনাকে সরকারের লোকজন বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চালিয়ে যাচ্ছেন।

খালেদা জিয়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে এক মামলার রায় নিয়ে এখন দেশে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এফবিআইয়ের একজন এজেন্টকে ঘুষ দিয়ে এক প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণ বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের ব্যাপারে কিছু তথ্য সংগ্রহ করায় সেই মামলাটি করা হযেছিল। সেই মামলার নথিতেই আছে প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের একটি অ্যাকাউন্টেই আড়াই হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ তিনশো মিলিয়ন ডলার জমা আছে।

তিনি বলেন, ‘এই টাকা কোথা থেকে গেছে? এই টাকার উৎস কী? এভাবে তাদের আরো কতো টাকা আছে, বাংলাদেশের মানুষ তা জানতে চায়? বাংলাদেশের মানুষ মনে করে এই টাকা বাংলাদেশের জনগণের টাকা।

বিএনপি চেয়ারপারসন অভিযোগ করেন, এভাবে দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত বিপুল টাকা বিদেশে পাচার করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা হয়েছে। এ নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। এ টাকা ফিরিয়ে আনা দরকার। কিন্তু এ টাকার ব্যাপারে সরকার নীরব।

খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, সরকার এই টাকার কথা ধামাচাপা দিতে প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছে। কারারুদ্ধ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকেও এই মামলায় জড়িয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা নাকি প্রধানমন্ত্রীর পুত্রকে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের রায়েই এধরণের অভিযোগকে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। এভাবে মিথ্যা প্রচারণা, অত্যাচার, নানা ইস্যু সৃষ্টি করে তারা তাদের অপরাধগুলো ঢেকে রাখতে চায়। জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে দিতে চায়।

তিনি বলেন, দেশ-জাতির এক গভীর সংকটকাল চলছে। দেশে গণতন্ত্র নেই। জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার নেই। বৈধ সংসদ নেই। তথাকথিত সংসদে কোনো কার্যকর বিরোধী দল নেই। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। সুশাসন নেই। সুবিচার নেই। রাষ্ট্রীয় প্রথা ও প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। নেই কোনো মানুষের নিরাপত্তা। সরকার কাউকে কোথাও কোনো নিরাপত্তা দিতে পারছে না, তবুও দাবি করছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। যা কিছু ঘটছে তা সব বিচ্ছিন্ন ঘটনা।

খালেদা জিয়া বলেন, দেশে কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থা নেই। প্রতিদিন গড়ে ১৪ জন মানুষ খুন হচ্ছে। নারী ও শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। পত্রিকার হিসাবে গত তিন মাসে দেড় হাজার লোক খুন হয়েছেন। দুর্নীতি ও লুটপাট করে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। শেয়ার বাজার থেকে লক্ষ কোটি টাকা লুটে নেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদেরকে নিঃস্ব করে ফেলা হয়েছে। ব্যাংকগুলো থেকে লুটপাট হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভের আটশো কোটি টাকা ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে। দফায় দফায় অবিশ্বাস্য রকমের ব্যয় বাড়িয়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকে কোটি কোটি টাকা লুণ্ঠন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলো স্বাভাবিকভাবে আইন অনুযায়ী তাদের কর্তব্য পালন করতে পারছে না। তাদেরকে রাখা হয়েছে শুধু গণবিচ্ছিন্ন ও অবৈধ সরকারকে জনগণের ক্ষোভ থেকে রক্ষা করার জন্য। তারা সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। বিচার বহির্ভূতভাবে যাকে খুশি তাকে হত্যা করছে। জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে গুম ও খুন করে ফেলছে।   যেখানে সেখানে খুনের শিকারদের মরদেহ পাওয়া যাচ্ছে। অনেকের মরদেহের সন্ধানও মিলছে না। জুলুম, নির্যাতন,  গ্রেফতার, হামলা, মামলা চলছে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের উপর। অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি ছাড়া। গ্রেফতার ও নির্যাতনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে সম্মানিত নাগরিকদেরকেও নির্যাতন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, গুপ্তহত্যা এবং অতর্কিতে হামলা চালিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ব্লগার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, লেখক, প্রকাশক, বিদেশি নাগরিক, দূতাবাস কর্মী এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকেরাও এ ধরণের হামলা ও হত্যার শিকার হচ্ছে।

খালেদা জিয়া বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসন আমলে এদেশে প্রথম জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটেছিলো। সে সময় রমনার বটমূলে বর্ষবরণ উৎসব, যশোরে উদীচীর সাংস্কৃতিক আয়োজন, ঢাকার পল্টনে সিপিবি’র জনসভায়, বানিয়াচংয়ের গির্জায়, খুলনায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ে বোমা হামলার ঘটনায় অনেক মানুষ হতাহত হয়েছিলো। তখনও প্রকৃত সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের আড়াল করে আওয়ামী লীগ দায় চাপিয়েছে বিএনপি ও বিরোধী দলের উপর। আমরা নির্বাচিত হয়ে সরকারে আসার পর, জঙ্গীবাদী তৎপরতাকে কঠোর হাতে দমন করেছিলাম।

তিনি বলেন, আজ আবার সেই জঙ্গীবাদের উত্থানের আলামত দেখে দেশবাসী গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বর্তমান সরকার এর দায় এড়াতে পারে না। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি ও আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে রুদ্ধ করে দিয়ে তারাই জঙ্গীবাদের উত্থানের পথ করে দিচ্ছে।

বিএনপি প্রধান বলেন, বর্তমান সরকার বৈধ নয়। কিন্তু রাষ্ট্র ক্ষমতা তো তারা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। কাজেই নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব তাদেরকেই পালন করতে হবে। তারা সেই দায়িত্ব এড়িয়ে চলছে। তারা বলছে, সকলকে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। এই কথা বলে দায়িত্ব এড়িয়ে কারো ক্ষমতায় থাকার অধিকার থাকে না।

জাগপার প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের সভাপতিত্বে  কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, ঢাবির শিক্ষক অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, কলামিস্ট সঞ্জীব চৌধুরী,  জাগপার সেক্রেটারী খন্দকার লুৎফর রহমান, প্রেসডিয়াম সদস্য অধ্যাপিকা রেহেনা প্রধান, সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন বাবলু, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ জামাল উদ্দিন প্রমুখ।

এতে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, শামা ওবায়েদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।

২০ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রকিব, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাঈদ আহমেদ, পিপলস লীগের মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুব হোসেন প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৬

এমএম/বিএস

**প্রতিদিন গড়ে ১৪ জন খুন হচ্ছেন

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।