সোমবার (০৮ মে) রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এটি অনুমোদন হয়।
খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বরচন্দ্র রায় ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বিশেষ আমন্ত্রণে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ। যিনি বিএনপির ‘ভিশন ২০৩০’ তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
নতুন ধারার রাজনীতির প্রতিশ্রুতি নিয়ে তৈরি এই ‘ভিশন ২০৩০’ ১০ মে (বুধবার) জাতির সামনে তুলে ধরবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এদিন বিকেল ৪টায় রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করবেন তিনি।
দলীয় সূত্রমতে, সংবাদ সম্মেলনের জন্য তৈরি খালেদা জিয়ার লিখিত বক্তব্য আজকের স্থায়ী কমিটিতে উত্থাপন হয় এবং প্রয়োজনীয় ক্রোচ চেকের পর তা চূড়ান্ত হয়। ক্ষমতায় গেলে নতুন ধারার রাজনীতি ও সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি। দলটির সেই পরিকল্পনা কোন পথে অর্জিত হবে, তারই বিস্তারিত রয়েছে ‘ভিশন ২০৩০’-তে । এরই কিছু অংশ লিখিত আকারে জনসম্মুখে তুলে ধরবেন খালেদা জিয়া। বাকি অংশ পুস্তিকা আকারে সরবরাহ করা হবে।
গণতন্ত্র, সুশাসন ও উন্নয়নকে মূলমন্ত্র ধরে ‘ভিশন-২০৩০’ শিরোনামে রচিত হয়েছে বিএনপির নির্বাচন-পূর্ব প্রাথমিক ‘ইশতেহার’। এটি নিয়ে গত দেড় বছর ধরে কাজ করছে দলটি ।
গত বছরের ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে প্রথম বারের মতো এই ‘ভিশন ২০৩০’ সামনে আনেন খালেদা জিয়া। বিষয়টি তখন ছিলো খসড়া আকারে। দলটির সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক গত কয়েক মাস ধরে এটি নিয়ে কাজ করেছে।
বিএনপি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’র কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘ভিশন-২০৩০’ তৈরির সময় তারা খালেদা জিয়ার সরাসরি তত্ত্বাবধানে কাজ করেছেন। মতামত নিয়েছেন বিশেষজ্ঞদের।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, ‘ভিশন-২০৩০’ কে পাথেয় ধরেই আগামী নির্বাচনের মূল ইশতেহার তৈরি করবে বিএনপি। এটিকে দলের অঙ্গীকারনামা হিসেবেও দেখছেন নীতিনির্ধারকরা । আগামীতে ক্ষমতায় গেলে কী করবে- সেটি বাংলাদেশর জনগণ, বন্ধু রাষ্ট্র ও বিদেশি কূটনীতিকদের জানাতে চায় বিএনপি। সেই লক্ষ্য নিয়েই ‘ভিশন-২০৩০’ নিয়ে জনম্মুখে আসছেন বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
জানা গেছে, নতুন ধারার রাজনীতি প্রবর্তন, সৃজনশীল উদ্যোগের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, জাতীয় সংসদকে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট করা, গণভোট চালু, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা, জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনাসহ নানা বিষয় থাকছে ‘ভিশন-২০৩০’-তে।
এছাড়া বিএনপি যেহেতু নতুন ধারার রাজনীতি ও সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় সেহেতু নতুন এক সামাজিক সমঝোতা বা চুক্তিতে উপনীত হতে উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা রয়েছে ‘ভিশন ২০৩০’- তে।
প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে- এই উপলব্ধি থেকে এর অবসানকল্পে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনার প্রস্তাব রয়েছে বিএনপির ‘ভিশন ২০৩০’-তে।
জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জনগণের সম্মতি গ্রহণের পন্থা ‘রেফারেন্ডাম’ বা ‘গণভোট’ ব্যবস্থা সংবিধানে পুনঃপ্রবর্তন করার বিষয়টিও থাকছে ‘ভিশন ২০৩০’-তে ।
সমৃদ্ধ সমাজগঠনে মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা পূরণে বাংলাদেশের সব ধর্মবিশ্বাসের মানুষ, পাহাড় ও সমতলসহ সব অঞ্চলের মানুষ এবং প্রতিটি নৃগোষ্ঠীর মানুষের চিন্তা-চেতনা ও আশা- আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে একটি জনকল্যাণমূলক, সহিষ্ণু, শান্তিকামী ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে বিএনপির ‘ভিশন ২০৩০’- এ।
ক্ষমতায় গেলে সুনীতি, সুশাসন ও সু-সরকারের সমন্বয় ঘটাতে চায় বিএনপি। গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক সুশাসনের জন্য নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, আইন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মতো সাংবিধানিক ও আধাসাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতি, অনিয়ম ও দলীয়করণমুক্ত করার কথা বলা হয়েছে ভিশন ২০৩০-তে।
এই ভিশন ২০৩০-এর পূর্ণাঙ্গ মুদ্রিত কপি সোমবার (০৮ মে) স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উত্থাপন করা হয়। সোয়া দুই ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। অবশেষে সর্ব সম্মিতক্রমে এটি অনুমোদন হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০০২২ ঘণ্টা, মে, ০৫, ২০১৭
এজেড/এনটি