ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

৭৭ বছরে কমরেড রাশেদ খান মেনন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৩ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২০
৭৭ বছরে কমরেড রাশেদ খান মেনন

ঢাকা: জীবনের আরও একটি নতুন বসন্তে পা রাখলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং ঢাকা ৮ আসনের সংসদ সদস্য কমরেড রাশেদ খান মেনন।

সোমবার (১৮ মে) ৭৭ বছরে পর্দাপণ করলেন ষাটের দশকের তুখোড় এই ছাত্র নেতা। তিনি ১৯৬৩-৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভিপি ও ৬৪-৬৭ সালে সাবেক পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি দায়িত্ব পালন করেন।

বর্ণাঢ্যময় রাজনৈতিক জীবনে মেনন অসংখ্যবার কারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তিনি ৬২ সালে নিরাপত্তা আইনে প্রথম কারাবন্দি হন। এরপর ৬৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় ও বিভিন্ন মেয়াদে নিরাপত্তা আইন, দেশরক্ষা আইন ও বিভিন্ন মামলায় কারাবরণ করেন। মেনন ৬৭-৬৯ সালে জেলে থাকাকালীন অবস্থায় জাতির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্য পান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুকে ক্যান্টনমেন্টে নেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন প্রয়োজনে জেলের বাহিরে তার যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন মেনন।  

১৯৭০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানের জনসভায় ‘স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা’ কায়েমের ঘোষণা দিলে ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার মেননের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। তার অনুপস্থিতিতে সামরিক আদালতে ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও সম্পত্তির ষাট ভাগ বাজেয়াপ্তের দণ্ডাদেশ প্রদান করা হয়।  

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর রাশেদ খান মেনন সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ার কাজ শুরু করেন। ২৫শে মার্চ পল্টনের শেষ জনসভায় তিনি পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। ২৫শে মার্চের কালো রাত্রে গণহত্যার পর ঢাকার অদূরে নরসিংদী শিবপুরকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাজ শুরু করেন।

১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদ সামরিক শাসন জারি করলে রাশেদ খান মেনন সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে অন্যতম ভূমিকা পালন করেন। ১৫ ও ৭ দলের যুগপৎ আন্দোলন পরিচালনায় ভূমিকার জন্য সামরিক শাসনামলে বিভিন্ন সময় তাকে আত্মগোপন করতে হয়।  

১৯৯২ সালের ১৭ আগস্ট তিনি ওয়ার্কার্স পার্টি কার্যালয়ের সামনে গুলিবিদ্ধ হন। প্রথমে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল এবং পরে লন্ডনে কিংস কলেজ হাসপাতালে দু’বার অস্ত্রোপচারের পর তিনি মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে আসেন।

রাশেদ খান মেনন ১৯৭৩ সনে ন্যাপ (ভাসানী) এর প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল থেকে দুটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। একটি আসনে বিজয়ী হলেও পরে পরাজিত ঘোষিত হন। ৭৯ সালে বরিশালে বাবুগঞ্জ ও গৌরনদী থেকে এবং ১৯৯১ সনে বাবুগঞ্জ উজিরপুর থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ঢাকা-৮ নির্বাচনী এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

২০১৩ সনের ১৮ নভেম্বর রাশেদ খান মেনন সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৪ সনের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-৮ আসন থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং মহাজোট সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি একই আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

রাশেদ খান মেনন ১৯৪৩ সনের ১৮ মে পিতা বিচারপতি আব্দুল জব্বার খানের কর্মস্থল ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার বাহেরচর ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামে। রাশেদ খান মেননের ভাইদের মধ্যে আছেন মরহুম সাদেক খান, কবি মরহুম আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ খান, প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম এনায়েতুল্লাহ খান, বোন বেগম সেলিমা রহমান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, শহিদুল্লাহ খান বাদল মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক। মেননের স্ত্রী লুৎফুন্নেসা খান বিউটি সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য। তার মেয়ে ড. সুবর্ণা খান ও ছেলে আইনের ছাত্র আনিক রাশেদ খান।

বাংলাদেশ সময়: ০৫০৩ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২০
আরকেআর/ওএফবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।