ঢাকা: নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে দলের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ এবং প্রাণহানির ঘটনায় বিব্রত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নিয়ে হতাহতের মতো ঘটনা পর্যন্ত গড়ানো দলের জন্য সুখকর নয় বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
গত মঙ্গলবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যায় কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ভায়াবহ সংঘর্ষ, গুলিবিনিময় ও হাত বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একজন নিহত ও ৪০ জনের মতো আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় বুধবার (১০ মার্চ) ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এ ঘটনা আওয়ামী লীগকে বিব্রতকর ও অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রকাশ্যে কিছু বলতে বা মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দু’জন সদস্য এবং সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্যের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে চাননি। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এলাকার ঘটনা এবং ঘটনার সঙ্গে তার ছোট ভাই জড়িত থাকায় বিষয়টি স্পর্শকাতর বলছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তাই তারা প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না।
তবে এই ঘটনা দলের জন্য অস্বস্তির ও বিব্রতকর বলে তারা মনে করেন। দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি আগেই সমাধান করলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতো না বলেও তারা মনে করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, এটা দলের সাধারণ সম্পাদকের এলাকা। এটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। সেখানে যে ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে কথা না বলাই ভালো। তবে গত কয়েক মাস ধরে সেখানে দুই গ্রুপের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও উত্তেজনা চলে আসছে। বিষয়টি নিয়ে এতোদিন চুপচাপ থাকা উচিত হয়নি। কেন্দ্র থেকে উদ্যোগ নিয়ে সমস্যার সমাধান করলে প্রাণহানির মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতো না।
বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচন কেন্দ্র করে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে এই গ্রুপিং তৈরি হয়। ওই সময় থেকে ওই এলাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে কয়েক দফায় সংঘর্ষও হয়েছে। এর আগে সংঘর্ষে স্থানীয় একজন সাংবাদিক নিহত হন। স্থানীয় রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র করে সেখানে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ এ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে।
কোম্পানীগগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার বক্তব্য কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা তৈরি হয়। কাদের মির্জা পৌর নির্বাচনের সময় নির্বাচনী পরিস্থিতি, দুর্নীতি ও নোয়াখালী অঞ্চলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দেন। তিনি বলেছিলেন সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ৩/৪টি আসন ছাড়া আওয়ামী লীগের অন্য এমপিরা পালানোর পথ পাবে না। তিনি গত কয়েক মাস ধরে তার এই বক্তব্য অব্যাহত রেখেছেন।
এই বক্তব্য কেন্দ্র করে নোয়াখালীর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় এমপি একরামুল করিম চৌধুযরীর সঙ্গে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। বসুরহাটে মুখোমুখি সংঘর্সে জড়িয়ে পড়ে আব্দুল কাদের মির্র্জা গ্রুপ এবং তার বিরোধীপক্ষ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান বাদলের গ্রুপ।
এদিকে কোম্পানীগঞ্জের এই ঘটনার পর এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে এলাকায় ব্যাপকহারে ধরপাকড় চলছে বলে জানা যায়। আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি দলীয়ভাবেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের উদ্যোগেও তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানা যায়।
গত ১০ মার্চ এক প্রেস বিফ্রিংয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যারাই জড়িত থাকুক, তাদের পরিচয় না দেখে আইনের আওতায় আনা হবে। ঘটনার বিচারের জন্য তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, রিপোর্ট এলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২১
এসকে/এএ