ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

না.গঞ্জ মহিলা দলের কমিটি নিয়ে তোলপাড়

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২১
না.গঞ্জ মহিলা দলের কমিটি নিয়ে তোলপাড়

ঢাকা: জাতীয়তাবাদী মহিলা দল নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটিতে একজন বহিষ্কৃত নেত্রীকে সভাপতি ও একজন মৃত নেত্রীকে সহ-দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলা মহিলা দলের সাবেক আহ্বায়ক নুরুন্নাহার ও মহানগর কমিটির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক সাজেদা খাতুন মিতা। তাদের এ অভিযোগ নিয়ে মহিলা দলে তোলপাড় চলছে।



এ বিষয়ে মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, কমিটি দেওয়ার আগে আমরা নুরুন্নাহারকে খুঁজেছিলাম। কিন্তু তিনি দেশে ছিলেন না। তাকে খুঁজে না পেয়ে কমিটি দেওয়া হয়েছে। একজন মৃত নেত্রী কিভাবে কমিটিতে স্থান পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। স্থানীয় নেতারা কমিটি পাঠিয়েছেন। আমরা সেটা অনুমোদন দিয়েছি।

অন্যদিকে অভিযোগকারী নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সাবেক আহ্বায়ক নুরুন্নাহার বাংলানিউজকে বলেন, আমি নারায়ণগঞ্জ জেলার দুইবার আহ্বায়ক ছিলাম। ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর ড. খন্দকার মোশাররফ স্যারের উপস্থিতিতে সম্মেলন হয়েছিল। সম্মেলনের পরে কেন্দ্রীয় সভাপতি-সম্পাদক আফরোজা আব্বাস ও সুলতানা আহমেদ আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দেন। এরপর আমরা নতুন কমিটি জমা দিলেও চার বছরে তা অনুমোদন হয়নি।

বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি চিকিৎসার জন্য ২ মাস ৭ দিন দেশের বাইরে ছিলাম। যেখানে ২০১৭ সালে সম্মেলনের পরে কমিটি দেওয়ার কথা, কিন্তু চার বছরেও দিল না, সেখানে দুইমাস আমি দেশের বাইরে থাকলাম এর মধ্যেই কমিটি দিয়ে দিল, এটা হতে পারে না।

নুরুন্নাহার আরও বলেন, নবগঠিত নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির সভাপতি দিলারা মাসুদ ময়না নারায়ণগঞ্জের মেয়র আইভির পক্ষে নির্বাচন করেছেন। এটা কেন্দ্রীয় সভাপতি আফরোজা আব্বাস নিজের চোখে দেখেছেন। ওই সময় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এখন পর্যন্ত তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করে তাকে সভাপতি বানানো হয়েছে। বুঝেন কত বড় পকেট কমিটি হয়েছে।  

তিনি অভিযোগ করেন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মামুন এই কমিটি করেছেন আর আহ্বায়ক তৈমুর আলম খন্দকার সই করেছেন। তবে মহানগর বিএনপির কারা সুপারিশ করেছেন সেটা জানি না।

নুরুন্নাহার আরও বলেন, জেলা কমিটিতে একজনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। তার নাম রুমা আক্তার। তিনি গত ২৩ বছর সোনারগাঁও থানার সভাপতি। কোনো একটা মহিলাকে দলে প্রবেশ করতে দেয় না। এই মহিলাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে যিনি ৫ম শ্রেণি পাস করেননি। সভাপতি যাকে করা হয়েছে মায়া (রহিমা শরীফ মায়া) তিনি নারায়ণগঞ্জে ভাড়া থাকেন। আমি স্থানীয় মেয়ে ডাক দিলে ২০০/৪০০ মহিলা আসবে। আমি ১২ বছর মেম্বারের দায়িত্ব পালন করেছি ইউনিয়ন পরিষদে। আমাদের রেখে একটা ভাড়াটিয়া মেয়ে, যার বাবার বাড়ি মাদারীপুর, শ্বশুর বাড়ি চাঁদপুর তাকে সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছে। সে কিভাবে দল চালাবে। তার না আছে জনবল, না আছে অর্থ। কোনো সম্মেলন হলেই মানুষের কাছ থেকে চাঁদা উঠানো শুরু করে।

আপনাদের দাবি কী জানতে চাইলে নুরুন্নাহার বলেন, আমাদের দাবি কমিটি করুক কোনো আপত্তি নেই। তবে সম্মেলনের মাধ্যমে করতে হবে। দীর্ঘদিন দলের জন্য শ্রম দিয়েছি। আমাদের বাদ দিয়ে কমিটি হতে পারে না। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সবার কাছে লিখিতভাবে আমরা এই দাবি জানিয়েছি।

তিনি বলেন, গত ১৩ নভেম্বর নয়াপল্টন কার্যালয়ে গিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর হাতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এটি তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পৌঁছাবেন বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।

মহিলা দলের ঢাকা বিভাগীয় টিমের প্রধান নুর জাহান মাহবুব বাংলানিউজকে বলেন, আমি ঢাকা বিভাগীয় টিমের প্রধান এটা ঠিক আছে। কিন্তু আমি নারায়ণগঞ্জের কমিটি করিনি। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। নারায়ণগঞ্জের সম্মেলন আগেই হয়েছে। দুদিন আগে শুধু কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। মহানগর কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক বিনু আক্তার দুই বছর আগে মারা গেছেন, সভাপতি দিলারা মাসুদ ময়নাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, তারা কিভাবে কমিটিতে আসলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এসব কিছু জানি না। আমাকে টিম প্রধান করার আগেই কেন্দ্রীয় নেত্রীরা নারায়ণগঞ্জের সম্মেলন করে ফেলেছেন। এখন শুধু ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এটা কেন্দ্র থেকে করেছে তারাই ভাল বলতে পারবে। আমিতো আর কেন্দ্রের থেকে বড় না।

মহানগর কমিটির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক সাজেদা খাতুন মিতা বলেন, চার বছর আগে সম্মেলনের পর আমরা একটি কমিটি জমা দিয়েছিলাম। সেই কমিটি নাকি অনেক আগে দেওয়া হয়েছে। ভাল কথা অনেকদিন হলে তারা আমাদের বলতো তোমরা আবার সম্মেলন করে কমিটি জমা দেও। সেটা না করে তারা বহিষ্কৃত নেত্রী দিলারা মাসুদ ময়না যিনি আওয়ামী লীগের মিছিল করেছেন এমন ছবিও আছে। আওয়ামী লীগের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সেসব ছবিও আছে। তাকে সভাপতি বানিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের মূল দলের (বিএনপির) সম্মেলনের সময় আয়শা আক্তার দিনা বিএনপির তোরণ লাথি দিয়ে ভেঙেছে। সেই সময় পেপারে ছবি এসেছিল। আমরা মনে করিনি এমন দিন দেখতে হবে, তাহলে ওই ছবিগুলি রেখে দিতাম। তাকে কিভাবে সাধারণ সম্পাদক বানায়। আমরা যারা দলের জন্য কাজ করি তারা এসব দেখে কষ্ট পাই।  

এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আফরোজা আব্বাসের মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ বলেন, অভিযোগ দিলে আমার কিছু করার নেই। আমাকে আফরোজা আব্বাস যে কমিটি এনে দিয়েছে সেটা সই করেছি। একজন মৃত আর একজন বহিষ্কৃত নেত্রী কিভাবে দলের দায়িত্ব পেলেন, এর জবাবে সুলতানা বলেন, এক বছর আগে সম্মেলন হয়েছে। সম্মেলনের পরে আমরা সাধারণত স্থানীয়দের দায়িত্ব দেই।  আমরাতো নিজেরা কমিটি করি না। । আফরোজা আব্বাস তাদের সাথে কথা বলেছে। সর্বসস্মতিক্রমে কমিটি দেওয়া হয়েছে।

নুরুন্নাহারের বিষয়ে তিনি বলেন, তারতো কোনো খবরই ছিল না। তিনি দেশে ছিলেন না। সুইজারল্যান্ড না কোথায় ছিলেন। সেইতো আমাদের ক্যান্ডিডেট ছিল, কিন্তু তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, নুরুন্নাহার যদি অভিযোগ দিয়ে থাকে সেটা সঠিক নয়। তাকে তো আমরা খুঁজেই পাইনি। সে এতদিন কোথায় ছিল। কালকে না পরশুদিন বিদেশ থেকে এসেছে। দুই বছর সে কোনো কর্মকাণ্ডে নেই। এমনকি তার স্থানীয় ফোনও বন্ধ ছিল।

মিতার বিষয়ে সুলতানা বলেন, তার নাকি পা ভেঙে বসে আছে। তারা টোটালি ইনএকটিভ। বিষয় হলো যখন একটা কমিটি দেওয়া হয় তখন যারা ইনএকটিভ থাকে তারা একটিভ হয়ে যায়। নুরুন্নাহারের অভিযোগ টোটালি ভিত্তিহীন বলেও দাবি করেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক।

মৃতরাও ঠাঁই পেল মহানগর মহিলা দলে!


বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২১
এমএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।