ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের কুশীলবদের বের করতে তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। সেসঙ্গে ওই হত্যাকাণ্ডে বিদেশে পালিয়ে থাকা আত্মস্বীকৃত ও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের বাংলাদেশের কাছে তুলে দিতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
সোমবার (৮ আগস্ট) জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে ‘বাঙালির গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মুক্তি সংগ্রামের নেপথ্যের সংগঠক’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের শিকার হননি বঙ্গমাতাও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। তাদের হত্যাকারী যারা, তাদের যারা দণ্ডপ্রাপ্ত বিদেশে পালিয়ে আছেন তাদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ওই সব রাষ্ট্রগুলোকে অনুরোধ করছি। যারা কথায় কথায় গণতন্ত্রের কথা বলেন, মানবতার কথা বলেন, মানবতার পক্ষে অবস্থান নিতে বলেন; তাদের কাছে জাতির পক্ষ থেকে আমাদের অনুরোধ, আপনারা তো সবচেয়ে মানবাধিকারের দেশ হিসেবে চিহ্নিত, আপনারা তো গণতন্ত্রের বড় দেশ হিসেবে চিহ্নিত, আপনাদের মতো দেশে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত এবং দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের অবস্থান বিশ্বের কাছে এবং বাঙালি জাতির কাছে সবচেয়ে বড় বেমানান।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে, কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কুশীলবদের মুখোশ এখনো উন্মোচন হয়নি। ৭৫ এর হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে যারা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল, যাদের জন্য সমাজ ও দেশ বিভক্ত হয়েছিল; এই বিভক্ত দুর করতে হলে ৭৫ এর হত্যাকাণ্ডের যারা কুশীলব ছিল, সেই জিয়াউর রহমানসহ তাদের মুখোশ উন্মোচন হওয়া প্রয়োজন। এজন্য তদন্ত কমিশন গঠন করে ৭৫ এর এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নেপথ্যে থেকে যারা ভূমিকা রেখেছিল, তাদের মুখোশও উন্মোচন করা হোক। তাহলে আমাদের ভবিষ্যতে যুব সমাজ ইতিহাস জানতে পেরে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং এই জাতি আস্তে আস্তে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
৭৫ এর হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বিচারের পথ বন্ধ করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে হানিফ বলেন, জিয়াউর রহমানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল, যারা আত্মস্বীকৃত ঘাতক তাদের বিচার করতে গেলে নেপথ্যে খলনায়কদের নাম বেরিয়ে আসবে। আর এতে জিয়াউর রহমানের নাম সবার আগে চলে আসবে। এজন্য তিনি ঘাতকদের বিচার বন্ধ করেছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার কারণেই এই বিচার করা সম্ভব হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর জীবনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসার অবদান তুলে ধরে হানিফ বলেন, বেগম মুজিবের বিচক্ষণতা ছিল প্রখর। রাজনীতিতে তিনি যুক্ত ছিলেন না কিন্তু নেপথ্যে থেকে রাজনীতিতে সহায়তা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তার যে পরামর্শগুলো ছিল তা ছিল অবিস্মরণীয়।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হকের সভাপতিত্বে এবং আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও উপ কমিটির সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, ইতিহাসবিদ ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক সুভাষ সিংহ রায়, দৈনিক আমাদের অর্থনীতির এডিটর ইনচার্জ মাসুদা ভাট্টি প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০২২
এসকে/আরআইএস