বরগুনা: শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলপথ ভাড়ানি খাল। খাকদোন নদী থেকে শুরু হয়ে পায়রা নদীতে মিশে যাওয়া এই খাল একসময় খরস্রোতা ও ব্যস্ত নৌপথ ছিল।
২০১৮ সালে পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) উচ্চ আদালতে মামলা করলে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট খালের দুই পাশে দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দখল উচ্ছেদের নির্দেশ দেন। ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল সেই নির্দেশ অনুযায়ী জেলা প্রশাসনের অভিযানে পূর্ব পাশে প্রায় ৫০টিরও বেশি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। তবুও নতুন করে দখল আর দূষণের কবলে পড়ছে খালটি।
বরগুনার শহরের প্রধান বাজারের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া এই খালটির দুই পাশে গড়ে উঠেছে প্রায় ১৫০টির বেশি অবৈধ স্থাপনা। বাসাবাড়ি ও দোকানের বর্জ্য খালে ফেলা হচ্ছে নির্বিঘ্নে। এতে খালের পানি যেমন দূষিত হচ্ছে, তেমনি চারপাশে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। স্থানীয়দের অভিযোগ, খালের দুই পাশে নতুন করে দখল হচ্ছে। পৌরসভা দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে খালটির পুরো সৌন্দর্য হারিয়ে যাবে।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী আরিফ রহমান বাংলানিউজকে বলেন, খরস্রোতা ভাড়ানি খাল একসময় পঁচাকোড়ালিয়া, তালতলী, চালিতাতলী, বালিয়াতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল। দখলদারদের কারণে খালটি চলাচল অনুপযোগী হয়ে গেছে। তিনি খালটি দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের ব্যাপক উদ্যোগ চান। তিনি বলেন, নদী ও খাল বাঁচাতে হবে আমাদের।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বরগুনা শাখার সভাপতি মুশফিক আরিফ বলেন, আমরা বহুদিন ধরে খালটি দখলমুক্ত করার জন্য আন্দোলন করেছি। শেষ পর্যন্ত আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে। অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে খালটি গত বছর একাংশ মুক্ত হয়েছে, যা আমাদের বড় প্রাপ্তি। তবে নতুন করে আবার দখল ও দূষণের কবলে পড়েছে খালটি। খালের দুই পাশের ছোট ছোট ঔষধি গাছগুলো এখন ময়লার ভাগাড়ে চাপা পড়েছে। স্থানীয় দোকানদার ও পরিছন্নতা কর্মীদের সচেতন করে দখল ও দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নদীর তীর ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে বরগুনা শহর। শহরের নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহনের সহজ রুট হচ্ছে এই খাল। এমনকি শহরের গৃহস্থালি ব্যবহৃত পানির অন্যতম উৎসও এই খালটি। কাজেই এর রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের সবার দায়িত্ব। বরগুনার অন্যান্য দখল হওয়া খালগুলোও একইভাবে দখলমুক্ত করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বরগুনা স্বাস্থ্য অধিকার জেলা ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর কবীর মৃধা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মুরগি, কাঁচাবাজার ও মাছ বাজারের বর্জ্য খালে ফেলে পানি দূষণ করছেন। অথচ এই পানি দিয়ে হাজারো পরিবার রান্না, গোসলসহ নানা গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করে। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। এই দূষণ রোধে সচেতনতাই একমাত্র উপায়।
সচেতন নাগরিকরা বলছেন, খাল সংরক্ষণে পৌরসভার উচিত নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো এবং নতুন করে দখল রোধে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করা। পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচার কার্যক্রমও চালাতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, খাল দখল ও দূষণ শুধু নৌপথের সমস্যা নয়, এটি পরিবেশের জন্যও ভয়াবহ। খাল শুকিয়ে গেলে শহরের জলাবদ্ধতা বাড়বে এবং স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বরগুনার মানুষ এখন অপেক্ষা করছে পৌরসভার কার্যকর পদক্ষেপের জন্য, যাতে ভাড়ানি খাল আবারও তার প্রাণ ফিরে পায় এবং শহরের সৌন্দর্য ও পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২৫
এমজে