সিরাজগঞ্জ: স্কুল জীবন থেকে শুরু করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, বরাবরই অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন শাহরিয়ার আলম সাম্য। ছোট থেকেই স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাকে চিনতেন অত্যন্ত শান্তশিষ্ট এবং নম্র-ভদ্র বলেই।
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় বসবাস ছিল সাম্যর। তবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রতিটি সামাজিক অনুষ্ঠানে আসতেন গ্রামে। তার খুন হওয়ার খবরে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
সাম্যর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার সড়াতৈল এলাকায়। বুধবার (১৪ মে) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার গ্রামের বাড়িতে ভিড় করেন শত শত আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষী। এ সময় অনেককে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়।
আগের রাতে রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে ছুরিকাঘাতে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত বিসিসিআই কর্মকর্তা ফখরুল আলম ফরহাদ।
সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি স্যার এ এফ রহমান হলের ২২২ নম্বর কক্ষে থাকতেন। ওই হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি।
সাম্যর প্রতিবেশী নূরনবী সরদার, দুলু সরদার ও কবিরসহ অনেকেই বলছিলেন, তারা এমন মেধাবী শিক্ষার্থীর অস্বাভাবিক ও অকাল মৃত্যু সহজে মেনে নিতে পারছেন না। তারা বলছিলেন, তাকে কেউ এভাবে খুন করতে পারে, সেটা চিন্তাও করা যায় না।
নুরনবী সরদার বলেন, গ্রামে এলে সাম্য সবার সঙ্গে সুন্দরভাবে মিশতো। সবাই তাকে ভালবাসতো। ছেলেটির এমন মৃত্যুতে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
সাম্যর বড় ভাই আহসান হাবিব বলেন, তার সম্পর্কে কিছু বলতে পারছি না। সে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল। উল্লাপাড়ার মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। আমাদের সবার আদরের ছোট ভাই ছিল সে। তাকে এভাবে হারাতে হবে ভাবতেও পারিনি।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, সাম্যর বাবা ২০১২ সাল থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকার মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার একটি বহুতল ভবনের সপ্তম তলায় বাস করেন। বাবা-মায়ের চার সন্তানের মধ্যে সাম্য ছিলেন সবার ছোট। তার মা চার বছর আগে মারা যান।
সাম্যর চাচা কায়সারুল আলম কায়েস বলেন, গত শুক্রবার ঢাকায় আমার বড় ভাতিজির গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান ছিল ঢাকায়। সেখানে সাম্যর সঙ্গে কথা হয়। জানতাম না এটাই হবে তার সঙ্গে আমার শেষ কথা। কী দোষ ছিল যে মা হারা ছেলেটিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো? আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসি চাই।
বুধবার রাত পৌনে ৮টার দিকে সাম্যর মরদেহ সড়াতৈলে আনা হয়। এশার নামাজের পর সড়াতৈল জান্নাতুল বাকী কবরস্থান ঈদগাহ মাঠে তার জানাজা হয়। পরে মা ও দাদীর কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হয়।
আরএইচ