হবিগঞ্জ: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনে জমে উঠেছে নির্বাচনী উত্তাপ। একদিকে বিএনপির দুই হেভিওয়েট মনোনয়ন প্রত্যাশী, অন্যদিকে মাঠে আছেন খেলাফত মজলিসের ‘বড় হুজুর’ খ্যাত নেতা।
জামায়াত ও এনসিপি লড়াইয়ে থাকলেও জনপ্রিয়তায় তারা কিছুটা পিছিয়ে।
আসনটি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এবার পুনরুদ্ধারে জোর লড়াইয়ে নেমেছে বিএনপি। আজমিরীগঞ্জের সনাতন ধর্মাবলম্বী ও বানিয়াচংয়ের আলেম-ওলামা- এ দুই ধরনের ভোটেই নির্ভর করছে ফলাফল।
সব মিলিয়ে সাতটি দলের নয়জন আলোচনায় আছেন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে উঠেছে বিএনপির দুই প্রার্থী ও খেলাফতের জনপ্রিয় নেতার মধ্যে। জামায়াত ও এনসিপির প্রার্থীরা মাঠে থাকলেও ভোটের বিবেচনায় তারা কিছুটা কোণঠাসা। নির্বাচনে শেষ হাসি কে হাসবেন, তা নির্ভর করছে হিন্দু ভোটের মোড় ও আলেমদের প্রভাবের ওপর।
বিএনপির হয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশায় রয়েছেন দুই প্রবীণ নেতা। একজন ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য কাজ করেছি। আওয়ামী লীগের আমলে ১৪টি মামলা হয়, যার মধ্যে ১৩টি মামলা আদালতে মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। ঢাকার দুটি কারাগারে ছিলাম দীর্ঘদিন। শতাধিক ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করেছি, এখনও আহত ও শহীদ পরিবারের পাশে আছি। ১৯৭৯ সালে প্রয়াত জনাব আলী বিএনপি থেকে এমপি হয়েছিলেন। এরপর আর কেউ হননি। আমি গত ১৬ বছরে ৪৮৬টি গ্রামে ঘুরেছি, দুই উপজেলার ওয়ার্ড পর্যন্ত সংগঠিত করেছি। একটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির সব প্রার্থী বিজয়ী হওয়ায় দল মাঠ পর্যায়ে শক্তিশালী হয়েছে। আমি মনোনয়ন পেলে জনগণ অবশ্যই গ্রহণ করবে ইনশাআল্লাহ।
অপর প্রার্থী আহমেদ আলী মুকিব আব্দুল্লাহ, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। তারেক রহমানের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত এ নেতা ১৩ বছর পর গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ পতনের মধ্য দিয়ে দেশে ফেরেন। সৌদি আরব প্রবাসী এ নেতা বলেন, দেশ স্বাধীন হলেও এখনও আমরা পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা পাইনি। আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠনের সুযোগ তৈরি হোক- এটাই চাওয়া। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষ থেকে মানুষের ঘরে ঘরে যাচ্ছি। ১৬ বছর দলের দুঃসময়ে পাশে থেকেছি, দুই হাত ভরে ব্যয় করেছি। আমি মনোনয়ন পেলে এ আসনটি নেত্রীকে উপহার দিতে পারব।
অন্যদিকে খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় আমির আব্দুল বাছিত আজাদ স্থানীয়ভাবে ‘বড় হুজুর’ নামে পরিচিত। আলেম-ওলামাদের কাছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্য এ নেতা বলেন, বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জের জনগণ আমাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। দুই উপজেলার আলেম-ওলামা ও সাধারণ মানুষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমার জন্য কাজ করছেন। আমি আশাবাদী- এ আসনের মানুষ আমাকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন।
২০০১ সালে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে এলাকায় আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন আজাদ, সে সময় লাখো মানুষের জমায়েতে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এলাকায় ঢুকতে পারেননি।
এদিকে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির ঢাকার হাতিরঝিল থানার সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান। যদিও তার রাজনৈতিক জীবনের বড় অংশ ঢাকায় কেটেছে, তবে তিনি এলাকায় সংযোগ বজায় রেখেছেন বলে দাবি করেন।
কিন্তু স্থানীয়ভাবে তাকে ঘিরে “বহিরাগত” ভাবনার কারণে ভোটে বড় ফায়দা তুলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এনসিপির পক্ষে আলোচনায় রয়েছেন হবিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ও সাবেক ছাত্রনেতা আবু হেনা মোস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন দরকার। গণঅভ্যুত্থানের পর এনসিপি সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। আমি সৎভাবে রাজনীতি করতে চাই বলেই এনসিপিতে এসেছি। মনোনয়ন পেলে মানুষ আমাকে গ্রহণ করবে।
একই দলের হয়ে মনোনয়ন চাইতে পারেন ব্যারিস্টার মোস্তাক আহমদ, যিনি শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে এলাকায় পরিচিত হয়েছেন।
এছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের পক্ষ থেকে বটগাছ প্রতীক নিয়ে মাওলানা হাবিবুর রহমান এ আসনে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। তার বাবা শায়খ আব্দুর রহমান ধুলিয়া এ আসনে তিনবার সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করেছেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের (হাতপাখা) মনোনয়ন পেয়েছেন মুফতি হাদিসুর রহমান এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (খেজুর গাছ) একক প্রার্থী মুফতি এখলাছুর রহমান রিয়াদ।
হবিগঞ্জ-২ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৩৩৪ জন। বানিয়াচংয়ের অধিকাংশ ভোটার ইসলাম ধর্মাবলম্বী, অনেকেই আলেম-ওলামার অনুসারী। অন্যদিকে আজমিরীগঞ্জে হিন্দু ভোটারের আধিক্য। আজমিরীগঞ্জের হিন্দুদের ভোট ঐতিহ্যগতভাবে আওয়ামী লীগ পেয়ে এসেছে। তবে এবার তারা কোনদিকে যাবেন, তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। বিএনপির ভেতরে বিভক্তি থাকলেও শক্ত সংগঠন এবং মাঠ পর্যায়ে সক্রিয়তার কারণে শেষ মুহূর্তে তারা সুবিধাজনক অবস্থানে যেতে পারে বলেই ধারণা বিশ্লেষকদের।
এসআই