ঢাকা, শনিবার, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৪ মে ২০২৫, ২৬ জিলকদ ১৪৪৬

সারাদেশ

নদীতে কচুরিপানার স্তূপ জমে দুর্ঘটনার ফাঁদ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৪৫, মে ২৪, ২০২৫
নদীতে কচুরিপানার স্তূপ জমে দুর্ঘটনার ফাঁদ ভাসমান কচুরিপানার ‘সেতু’

চোখের সামনে বিস্ময়। নদীর জলে ভাসছে কচুরিপানা— আর তার ওপর দিয়ে লোকজন হেঁটে পার হচ্ছেন! শুনে রূপকথার গল্প মনে হতে পারে, কিন্তু নীলফামারী সদর উপজেলার চাড়ালকাটা নদীর কচুকাটা সেতু এলাকায় সেটিই এখন বাস্তব চিত্র।

গত তিনদিন ধরে উজানের ঢলে ভেসে আসা কচুরিপানা এসে জমাট বেঁধেছে কচুকাটা সেতুর উত্তর পাশের প্রায় ২০০ মিটার এলাকাজুড়ে। নদীর গভীরতা যেখানে ১০ থেকে ১২ ফুট, সেখানেই পানির ওপর ভেসে থাকা কচুরিপানাগুলো এমনভাবে আটকে গেছে, যেন কেউ ইচ্ছে করে তৈরি করেছে একটি ‘ভাসমান সেতু’।

আর সেটিই এখন হয়ে উঠেছে স্থানীয়দের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্র। শিশু থেকে বৃদ্ধ— সবাই ছুটে আসছেন এই ব্যতিক্রমী দৃশ্য দেখতে। কেউ কৌতূহল নিয়ে হেঁটে পার হচ্ছেন, কেউ দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন, কেউ আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভে আসছেন এই অনন্য অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে।

স্থানীয় কিছু কিশোর তো এর মাঝেই করে তুলেছে খেলার মাঠ! কচুরিপানার ওপরই চলছে ফুটবল খেলা। পানি আর কচুরিপানার মধ্যখানে ফুটবলের এমন আয়োজন যেন গ্রামীণ জীবনের সরল আনন্দের প্রতিচ্ছবি। তবে আনন্দের মাঝেই লুকিয়ে আছে অদৃশ্য ঝুঁকি।

চোখের সামনে হাজারো মানুষের ভিড়— কেউ মাঝনদীতে দাঁড়িয়ে ‘সেলফি’ তুলছেন। কেউ  আবার সেতু ছেড়ে সরাসরি কচুরিপানার পথেই পার হচ্ছেন এপার-ওপার। এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না, তাই দিনভর চলেছে লোকজনের আসা-যাওয়া।

এমন ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কচুকাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ চৌধুরী। তিনি বলেন, ঘটনাটি জানার পর আমি নিজেও এসে দেখেছি— শত শত মানুষ কচুরিপানার ওপর দিয়ে পার হচ্ছেন, কিশোররা খেলছে। বিষয়টি যতটা আনন্দদায়ক দেখায়, ততটাই ঝুঁকিপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, এই ভাসমান কচুরিপানার স্তূপ কোনোভাবেই স্থায়ী বা নিরাপদ সেতু নয়। হঠাৎ পা পিছলে গেলে অথবা কচুরিপানা সরে গেলে নদীতে পড়ে গিয়ে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক।

ইতিমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে স্থানীয়দের সতর্ক করা হয়েছে এবং যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত কচুরিপানার স্তূপ ভেঙে সরিয়ে ফেলার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।  

একদিকে গ্রামের মানুষের আনন্দ, অন্যদিকে এক সম্ভাব্য বিপদের ছায়া। কচুরিপানার এই ভাসমান পথ যেন এক মিশ্র অভিজ্ঞতা— যেখানে প্রকৃতি নিজেই তৈরি করেছে অস্থায়ী আকর্ষণ, আর মানুষ সেটিকে বানিয়ে ফেলেছে বিনোদনের উৎস।

তবে মনে রাখতে হবে, প্রকৃতির তৈরি এই দৃশ্য যেমন সৌন্দর্যের, তেমনই সাবধানতারও। একটুখানি অসাবধানতায় যে উচ্ছ্বাস নিমিষেই পরিণত হতে পারে বিষাদে— সেই বাস্তবতা যেন ভুলে না যায় কেউ।

এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।