ফেনীতে গত দুদিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে মহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ১৬টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) রাত ১২ টা পর্যন্ত ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
ভাঙন কবলিত স্থানগুলোর মধ্যে মুহুরী নদীতে ১১টি, সিলোনিয়া নদীতে চারটি ও কহুয়া নদীতে একটি রয়েছে। মোট ১৬টি স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙেছে।
পরশুরাম উপজেলার মহুরী নদীর ভাঙনের স্থানগুলো হচ্ছে- চিথলিয়া ইউনিয়নের ধনীকুন্ডা, শালধর, নোয়াপুর, জংগলঘোনা বিদ্যালয়ের পাশে, জংগলঘোনা কালামিয়া বাড়ির পাশে ও পশ্চিম অলকায় তিনটিসহ মোট আটটি স্থান। সিলোনিয়া নদীর মেলাঘর কবরস্থানের পাশে মির্জানগর ইউনিয়নের কালীকৃষ্ণনগর ও গদানগর দুটি স্থানসহ চারটি স্থানে বেড়িবাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।
ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের দেড়পাড়া গ্রামে দুটি ও উত্তর শ্রীপুর নাপিতকোনা এলাকায় একটিসহ মোট তিনটি স্থানে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
এদিকে পরশুরাম উপজেলার বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের সাতকুচিয়া এলাকায় কহুয়া নদীর একটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।
পরশুরামের চিথলিয়া এলাকার বাসিন্দা কবির আহম্মেদ বলেন, হঠাৎ করেই রাতে ভাঙন দেখা দেয় নদী বাঁধে। ঘর-বাড়িতে ঢুকতে শুরু করে পানি। গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবারও হতে হলো।
টানা ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজানের পানিতে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানা প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে দুই উপজেলায় মোট ১৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবারের জন্য সাড়ে ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ১২টার দিকে ফেনী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাইফুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ফুলগাজী উপজেলায় ৩২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পরশুরাম উপজেলায় ৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখায় ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম (মোবাইলফোন নম্বর- ০১৮১৮-৪৪৪৫০০, ০১৩৩৬-৫৮৬৬৯৩) খোলা হয়েছে।
ডিসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ৪০০ করে মোট ৮০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্গতদের মধ্যে রান্না করা খাবার সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে শহরেও। শহরের শহীদ শহিদুল্লাহ কায়সার সড়ক, হাসপাতাল মোড়, কলা বাগান, রামপুর, শাহীন একাডেমি এলাকা, পাঠানবাড়ী এলাকা, চাড়িপুর, মাস্টারপাড়া, নাজির রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বেড়েছে দুর্ভোগ।
স্থানীয়রা বলছেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন না করার কারণে গেল বছরের মতো এ বছরও তাদের ডুবতে হচ্ছে।
ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, এক সময়ে সুপ্রশস্ত খালগুলো দখল হয়েছে। ফলে এই হাল শহরের।
ফেনী পৌর প্রশাসক গোলাম মো. বাতেন বলেন, বর্ষা আসার আগেই খালগুলো সংস্কার ও পরিষ্কার করা হয়েছে। শহরের বাসিন্দাদের অসচেতনতার কারণে খালগুলো অনেক সময় ভরাট হয়ে থাকে। এটিও জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। তবে জলজট পরিস্থিতির উত্তরণ মাঠে পৌর প্রশাসন কাজ করছে।
** ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ
এসএইচডি/এসআরএস