ঢাকা, সোমবার, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ জুলাই ২০২৫, ১৮ মহররম ১৪৪৭

সারাদেশ

ছেলে হত্যার বিচার দেখে মরতে চান শহীদ রুবেলের বাবা-মা

মো. আমিরুজ্জামান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৫৯, জুলাই ১৩, ২০২৫
ছেলে হত্যার বিচার দেখে মরতে চান শহীদ রুবেলের বাবা-মা

নীলফামারী: ১৯ বছরের টগবগে তরুণ রুবেল হোসেন। জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়ে শহীদ হন।

সেদিনের ঘটনা আজও ভুলতে পারেননি তার মা মিনি খাতুন।  

ছেলের স্মৃতি মনে পড়লেই তার বুক ভেসে যায় চোখের পানিতে। ছেলে হত্যার বিচার না দেখে মরতে চান না রুবেলের বাবা-মা।  

নীলফামারী সদর উপজেলার গোড়গ্রাম ইউনিয়নের ধোবাডাঙ্গা আরাজীপাড়া গ্রামে শহীদ রুবেল ইসলামের বাড়ি। স্বপ্ন ছিল আয়-রোজগার করে ছোট ভাইকে লেখাপড়া করাবেন। কিনবেন বাড়ির ভিটা, গড়বেন পরিবারের স্থায়ী ঠিকানা।

স্বপ্ন পূরণের আশায় চাকরি নিয়েছিলেন ঢাকার একটি পোশাক কারখানায়। আর বাবা চালাতে শুরু করেন রিকশা। বাবা-ছেলের জমানো টাকায় পূরণ করতে চেয়েছিলেন স্বপ্নগুলো। এগিয়ে যাচ্ছিলেন স্বপ্ন পূরণের পথে। ছোট ভাই রনি ইসলামকে পড়াচ্ছিলেন ষষ্ঠ শ্রেণিতে। স্বপ্ন পূরণে মা-বাবাকে নিয়ে বসবাস করতেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প এলাকায়।

ছাত্র-জতার অভ্যুত্থানের সময় গত ৫ আগস্ট উত্তাল আন্দোলনে উত্তপ্ত রাজপথ। সেদিন মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন রুবেল। রাজধানীর আদাবর এলাকা রূপ নেয় রক্তাক্ত রণক্ষেত্রে। এসময় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এ অবস্থায় তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ আগস্ট মৃত্যু হয় তার।

রুবেলকে হারিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন তার বাবা-মা। নিজের বসতভিটা না থাকায় বর্তমানে ছোট ছেলেকে নিয়ে অন্যের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করছেন তারা।

শহীদ রুবেলের মা মিনি খাতুন বলেন, ছেলে আগে ছিল, কামাই করছিল, সংসার ভালো চলছে। এখন ছেলেও নাই সংসারও চলে না। ছেলে গার্মেন্টসে চাকরি করে সংসার চালাইছে, নিজে চলছে। বাড়িঘর করতে চাইছিল। ছেলে আর করতে পারল না। এখন সবাই কিছু সহযোগিতা করছে, দেখাশোনা করে গেছে।
বিভিন্ন সহযোগিতার প্রসঙ্গে বাবা রফিকুল ইসলাম জানান, লাশ আনার সময় ২৫ হাজার, জেলা প্রশাসন ৩০ হাজার, আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশন এক লাখ, জামায়াতের পক্ষ থেকে দেড় লাখ এবং জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পাঁচ লাখ টাকা পেয়েছেন এ পর্যন্ত। সেই টাকা থেকে চিকিৎসাসহ অন্যান্য খরচ ও দেনা পরিশোধ করেছেন এক লাখ টাকার। সহযোগিতা পেয়েছেন, পাবেন কিন্তু ছেলেকে আর ফিরে পাবেন না। ছেলে হারানোর শোক নিয়েই বাঁচতে হচ্ছে তাদের। তিনি বেঁচে থাকতে ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান।

সূত্র জানায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নীলফামারীতে আহত হয়েছেন ১৫৯ জন ছাত্র-জনতা। তাদের মধ্যে অঙ্গহানিও হয়েছে বেশ কয়েকজনের। সেই সময়কার আন্দোলনে যোগ দিয়ে জীবন প্রদীপ নিভে গেছে চারজনের। তবে তারা কেউই নীলফামারীতে শহীদ হননি। শহীদ হয়েছেন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। তারা চারজনই ছিলেন কর্মজীবী।  নীলফামারীর চার শহীদ পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে ও আহতদের ১৫৯ জনের প্রত্যেককে এক লাখ করে টাকা দিয়েছে জুলাই ফাউন্ডেশন। এছাড়া আহত ও নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।