ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই বৃষ্টির পানিতে ধসে পড়েছে মধুমতি নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধের কয়েকটি অংশ। এতে নদীর তীরে বসবাসরত শতাধিক পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কাজের মনিটরিং ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় এবং যথাযথভাবে ডাম্পিং না করে সিসি ব্লক বসানোর কারণেই বৃষ্টির পানিতে বাঁধ ধসে পড়েছে।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, প্রকল্পের কাজ এখনও চলমান। কাজের দায়িত্ব এখনও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছেই রয়েছে, ফলে কোনো অনিয়ম হলে তার দায়ভারও তাদেরই নিতে হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ও টগরবন্দ ইউনিয়নের মিলনস্থল চর আজমপুর এলাকায় ৩০০ মিটার ডান তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স লিটন মল্লিক। কিন্তু গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে প্রায় ৩০ মিটার বাঁধ ধসে পড়েছে। এতে সিসি ব্লকগুলো ধসে ধীরে ধীরে নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে।
জেলা পাউবো সূত্রে জানা যায়, আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী উপজেলার সীমান্তবর্তী মধুমতি নদীর পূর্বপাড়ে দীর্ঘদিন ধরে তীব্র ভাঙনের ফলে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, স্কুল, মসজিদসহ নানা স্থাপনা বিলীন হয়েছে। নদী তীরবর্তী অনেক পরিবার কয়েকবার বসতি স্থান পরিবর্তন করেছে; কেউ কেউ নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রচেষ্টায় মধুমতি নদীর তীরে ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে উদ্যোগ নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। ‘মধুমতি নদী ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ৬ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮১ কোটি ১০ লাখ টাকা।
পাউবো’র তত্ত্বাবধানে ২৮টি প্যাকেজে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এর মধ্যে ২ নম্বর প্যাকেজের আওতায় আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চরআজমপুর এলাকায় ৩০০ মিটার বাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব পায় মেসার্স লিটন মল্লিক নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকলেও টানা বৃষ্টিতে বাঁধের একাধিক অংশ ধসে পড়ায় স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তবে কাজটি এখনও চলমান বলে জানিয়েছে পাউবো।
স্থানীয় বাসিন্দা হান্নান শরীফ (৬৩) বলেন, নদী ভাঙন প্রতিরোধে বাঁধ নির্মাণ শুরু হলে আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার আগেই বৃষ্টির পানিতে বাঁধ ধসে গেছে। দ্রুত মেরামত না করা হলে অর্ধশতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
আরেক বাসিন্দা শেফালী বেগম (৫৫) বলেন, স্থায়ী বাঁধ হচ্ছে দেখে দুই মাস আগে ধারদেনা করে একটা ঘর তুলেছি। কিন্তু এখন যদি এই বাঁধটাও নদীতে ভেঙে যায়, তাহলে তো আর আমাদের কোথাও বলার জায়গা থাকবে না। আমরা যেন নিরাপদে থাকতে পারি, সে অনুযায়ী সরকার যেন বাঁধটি করেন।
বাঁধ ধস সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স লিটন মল্লিকের স্বত্বাধিকারী লিটন মল্লিককে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
তবে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার জিয়াউর রহমান জানান, নদীতে অতিরিক্ত পানির চাপে বাঁধের কিছু অংশ ধসে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। পানি কমলে বাঁধটি পুনর্নির্মাণ করা হবে। আমাদের কাজ এখনো চলমান।
এ বিষয়ে কথা বলতে ফরিদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেনের মোবাইলফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে ধসে যাওয়া বাঁধ নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, আমি সদ্য ফরিদপুরে যোগদান করেছি। স্যারের (নির্বাহী প্রকৌশলী) সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে এবং ধসে যাওয়া অংশ দ্রুত পুনঃনির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাজের কোথাও অনিয়ম হয়েছে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এসআরএস