ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২, ০১ মে ২০২৫, ০৩ জিলকদ ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

সাক্ষাৎকারে হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ

কেউ ভয় দেখালে পাকিস্তানও জবাব দিতে প্রস্তুত

সিফাত কবীর, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:২৭, এপ্রিল ৩০, ২০২৫
কেউ ভয় দেখালে পাকিস্তানও জবাব দিতে প্রস্তুত বুধবার বাংলানিউজকে বিশেষ সাক্ষাৎকার দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। ছবি: বাংলানিউজ

বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ বলেছেন, ‘১৬ বছর পর বাংলাদেশের সঙ্গে একটি যথাযথ রাজনৈতিক যোগাযোগ চালু হয়েছে। ’ তিনি এটিকে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, “এটি দীর্ঘদিনের দ্বিপাক্ষিক ও ‘ঐতিহাসিক বিষয়গুলো সমাধানে’ সহায়ক হতে পারে।

” গত আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত হওয়ার আলোচনার প্রেক্ষাপটে তিনি এ মন্তব্য করেছেন।

কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে অস্ত্রধারীদের প্রাণঘাতী হামলার পর পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে চরমে উত্তেজনার মধ্যে সৈয়দ মারুফ দিল্লির কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ ছাড়াই ভারতের ‘যুদ্ধ উন্মাদনা’ তৈরির প্রবণতা আছে। তবে তিনি দৃঢ় ভাষায় বলেছেন, ইসলামাবাদ যেকোনো উসকানির জবাব দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। একইসঙ্গে তিনি আঞ্চলিক শান্তি ও সংলাপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) বাংলানিউজের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের হাইকমিশনার বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আঞ্চলিক নিরাপত্তা প্রেক্ষাপট, কাশ্মীর ইস্যু এবং দক্ষিণ এশীয় সহযোগিতা জোট সার্কের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলানিউজের সিনিয়র নিউজরুম এডিটর সিফাত কবীর

বাংলানিউজ: বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে পাকিস্তানের মূল্যায়ন কী?

সৈয়দ আহমেদ মারুফ: শুরুতেই বলি, আমি গত দেড় বছর ধরে এখানে আছি এবং আমি নিজে এই রূপান্তর প্রত্যক্ষ করেছি। রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে শুরু করে চলমান সংস্কার—বাংলাদেশ বহু দিক থেকেই একটি ন্যায্য রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে পরিচালিত এসব রূপান্তর বাংলাদেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য যথেষ্ট ন্যায়সঙ্গত ও ইতিবাচক বলে মনে হচ্ছে। এই রূপান্তর এতটাই আশাব্যঞ্জক যে, আমরা আশা করি একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হবে। এক্ষেত্রে পাকিস্তানের সরকার ও জনগণ বাংলাদেশের পাশে আছে।

বাংলানিউজ: পহেলগাঁও হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বর্তমান উত্তেজনাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

সৈয়দ আহমেদ মারুফ: দেখুন, পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে গুরুতর। এই উত্তেজনা শুরু হয়েছে প্রায় এক সপ্তাহ আগে, এবং এর সূচনা হয়েছে ভারতীয়দের একটি অনুমানের ভিত্তিতে, যা দ্বারা পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। তারা এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য দেয়নি যে পহেলগাঁওয়ে আসলে কী ঘটেছে, অপরাধীরা কারা, কোথায় তারা আছে এবং (পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার ক্ষেত্রে) প্রমাণ কী! বরং এখানে যুদ্ধ উন্মাদনা ছড়ানোর চেষ্টা দেখা যাচ্ছে, যেটা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে, আর এটা এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এটা এই অঞ্চল বা কোনো দেশের জন্যই ভালো নয়। পরিস্থিতি এখনো গুরুতর এবং পাকিস্তান যেকোনো হুমকির জবাব দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমরা প্রস্তুত।

বাংলানিউজ: ভারতে যখনই কোনো সন্ত্রাসী হামলা ঘটে, দিল্লির কর্মকর্তারা দ্রুতই পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করেন। আপনি এই প্রবণতাকে কীভাবে দেখেন?

সৈয়দ আহমেদ মারুফ: প্রথমত, আমি জানতে চাই যে তাদের হাতে কী ধরনের ‘জাদুর কাঠি’ আছে যে—কীভাবে কোনো ঘটনা ঘটার কয়েক মিনিট থেকে আধা ঘণ্টার মধ্যেই তারা সব তথ্য, সব প্রমাণ পেয়ে যায় এবং বলে দেয় যে এর পেছনে পাকিস্তান রয়েছে? তারা প্রতিবারই এমন করে। আমার অনেক প্রশ্ন আছে যেগুলোর জবাব ভারতীয়দের দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, অবৈধভাবে দখল করা ভারতীয় কাশ্মীরে সাত লাখ সামরিক বাহিনী মোতায়েন থাকার পরও কীভাবে এমন একটি আক্রমণ হলো? একদিকে তারা এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে ব্যর্থ, অথচ অন্যদিকে মাত্র কয়েক মিনিটেই পাকিস্তানকে দোষারোপ করে বসে। তাদের এই কথিত ‘দক্ষতা’ বিস্ময়কর যে—আধা ঘণ্টার মধ্যেই তারা সব জানে এবং পাকিস্তানের যোগসাজশের প্রমাণ আছে বলে দাবি করে। অথচ তারা কখনোই এসব ঘটনা প্রতিরোধ করতে পারে না। এই প্রশ্নের উত্তর তাদের দিতে হবে।

বাংলানিউজকে বুধবার বিশেষ সাক্ষাৎকার দেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফদ্বিতীয়ত, পাকিস্তান বারবার প্রমাণ চেয়েছে। এমনকি পাকিস্তান নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করে পুরো ঘটনাটি স্বাধীনভাবে তদন্ত করার এবং পক্ষপাতহীন তথ্যউপাত্ত উপস্থাপনের প্রস্তাবও দিয়েছে। কিন্তু ভারত সেই পথে হাঁটতে চায় না। বরং তারা যুদ্ধ-উন্মাদনা তৈরি করে—যুদ্ধ, যুদ্ধ, আরও যুদ্ধ—এবং ক্রমাগত উত্তেজনা তৈরি করে যাচ্ছে। আমরা সেটাই মোকাবিলা করে চলেছি।

বাংলানিউজ: পহেলগাঁওয়ের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ভারত যদি পাকিস্তানের ভেতরে কথিত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ বা সামরিক অভিযান চালায়, তাহলে ইসলামাবাদের অবস্থান বা প্রতিক্রিয়া কী হবে?

সৈয়দ আহমেদ মারুফ: আমরা এটা খুব স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি—এটা জোরালো ও পরিষ্কার বার্তা যে আমরা সঙ্গে সঙ্গে এবং সমানুপাতিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাব, এমনকি ভারত যেটা পরিকল্পনা করছে তার চেয়েও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে (জবাব দেব)। সেখানে দ্রুত, তাৎক্ষণিক, সমানুপাতিক এবং অত্যন্ত শক্তিশালী জবাব দেওয়া হবে। পাকিস্তান এভাবে জবাব দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

বাংলানিউজ: পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর ভারতে সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি পর্যালোচনা, এমনকি স্থগিত করার দাবি উঠেছে। পাকিস্তান এই হুমকিকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর এর কী প্রভাব পড়তে পারে? এছাড়া সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি নিয়ে ভারতের সাম্প্রতিক বিবৃতিগুলো দেখে আপনি কি মনে করেন, পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর পানি একটি রাজনৈতিক চাপের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে?

সৈয়দ আহমেদ মারুফ: সিন্ধু নদীর পানি পাকিস্তানের জনগণের জন্য জীবনরেখা (লাইফলাইন)—কৃষি থেকে শুরু করে প্রতিটি খাতই এর ওপর নির্ভরশীল। আমাদের ওপর কোনো রাজনৈতিক চাপ বা অন্য কোনো ধরনের চাপের প্রশ্নই আসে না। এই হুমকি দেওয়া হলেও আমরা কোনো চাপ অনুভব করছি না।

প্রথমত, এই চুক্তির প্রকৃতিই এমন যে, একতরফাভাবে কোনো পক্ষ এটিকে স্থগিত করতে পারে না—এটা মোটেও সম্ভব নয়। তবে কাল্পনিকভাবে যদি ধরে নিই যে এমন কিছু ঘটে, তাহলে এটিকে স্পষ্টভাবে যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এবং যখন তা যুদ্ধের আচরণ (অ্যাক্ট অব ওয়ার) হিসেবে দেখা হবে, তখন সেটা যুদ্ধেরই আচরণ হয়ে যাবে। এর অন্য কোনো ব্যাখ্যা হতে পারে না।

সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি সবসময়ই অক্ষুণ্ণ ছিল। কিন্তু এবার আমরা হুমকিটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি এবং এটিকে ‘যুদ্ধের আচরণ’ হিসেবে দেখছি। এটি রাজনৈতিক চাপ বলা হলেও আমরা বলছি, চাপের বিষয় নয়; এটি এর চেয়েও অনেক বেশি গুরুতর।

বাংলানিউজ: পাকিস্তান কীভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে ওআইসি এবং জাতিসংঘকে পাশে পাওয়ার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে? এই পরিস্থিতির ফলে গোটা অঞ্চলে কী প্রভাব পড়তে পারে? আপনি কি মনে করেন না যে উত্তেজনা প্রশমনে আঞ্চলিক দেশগুলোর একসঙ্গে দায়িত্ব পালন করা উচিত?

সৈয়দ আহমেদ মারুফ: এ অঞ্চলের একটি দেশ ছাড়া বাকি সবাই পাকিস্তানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখছে এবং স্বাভাবিকভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। একটি দেশ রয়েছে, যেটি এই অঞ্চলে অস্থিরতার পেছনে রয়েছে। নিঃসন্দেহে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সব সদস্য দেশের সম্মিলিত দায়িত্ব। আমরা এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধভাবে কাজ করছি।

বাংলানিউজ: পাকিস্তান নিজেই সন্ত্রাসবাদের শিকার। আপনার সরকার (ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের) পহেলগাঁওয়ে হামলার নিন্দা করেছে— আপনার মন্তব্য কী?

সৈয়দ আহমেদ মারুফ: পাকিস্তান বহু বছর ধরে এ অঞ্চলে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে সামনের সারির দেশ হিসেবে কাজ করেছে। সন্ত্রাসবাদ যে কতটা ভয়াবহ, সেটা আমরা খুব ভালোভাবে জানি—কারণ আমরা বহুদিন ধরে এটা মোকাবিলা করে চলেছি। পাকিস্তান এমন কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে কখনোই প্রশ্রয় দেয় না। পহেলগাঁওয়ে হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগীদের প্রতি পাকিস্তান সরকার সহানুভূতি প্রকাশ করেছে।

বাংলানিউজ: কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হওয়ায় ভারত অস্বস্তি বোধ করতে পারে। আপনি এই সম্পর্কে কী বলবেন?

সৈয়দ আহমেদ মারুফ: দেখুন, দেশগুলো পারস্পরিক স্বার্থ ও সম্মিলিত আগ্রহের ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রাখে। একইভাবে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান পারস্পরিক স্বার্থ, সাংস্কৃতিক মিল এবং ঐতিহাসিক সম্পর্কের ভিত্তিতে একসঙ্গে কাজ করছে এবং সম্পর্ক উন্নত করছে।

বাংলানিউজ: পাকিস্তান বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে চায় বলে জানিয়েছে। আপনি কি বলবেন, পাকিস্তান কী ধরনের অংশীদারত্বের কথা ভাবছে?

কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে অস্ত্রধারীদের হামলার জেরে সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছেসৈয়দ আহমেদ মারুফ: আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, কোনো প্রতিরক্ষাবিষয়ক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) বিবেচনায় নেই বা এমন কিছু সই হওয়ারও পরিকল্পনা নেই। তবে, বাংলাদেশ সরকার যদি কখনো প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চায়, তাহলে আমরা তা বিবেচনা করব।

বাংলানিউজ: পাকিস্তানের বালতিস্তান ও আজাদ কাশ্মীরসহ বিভিন্ন পর্যটন গন্তব্যে ভ্রমণে ক্রমেই আগ্রহী হচ্ছেন বাংলাদেশের তরুণরা, যা দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে এবং পাকিস্তানে ভ্রমণ সহজ করতে আপনারা কি কোনো বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছেন?

সৈয়দ আহমেদ মারুফ: বাংলাদেশি তরুণেরা এরইমধ্যে পাকিস্তান ভ্রমণ শুরু করেছেন। কিছু পরিসংখ্যান দেখুন—  ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশিদের জন্য ছয় হাজারের বেশি ভিসা ইস্যু করেছি। এর মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি পাকিস্তানে ভ্রমণ করেছেন—তাদের অধিকাংশই পর্যটক হিসেবে গিয়েছেন। আবার কেউ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন। চিকিৎসা নেওয়ার জন্যও অনেকে গিয়েছেন, বিশেষ করে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য। দক্ষিণ এশিয়ায় কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে পাকিস্তান শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করছি।

বাংলানিউজ: ১৬ বছর পর (ঢাকায়) বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। আপনি এটিকে কীভাবে দেখছেন?

সৈয়দ আহমেদ মারুফ: এত বছর পর এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক একটি অগ্রগতি। আলোচনায় আমরা বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের সব দিক নিয়ে কথা বলেছি। কেবল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নয়, নতুন কিছু দিকেও আমরা অগ্রসর হয়েছি। আগামী দিনে আপনি আরও সহযোগিতা ও অংশীদারত্ব দেখতে পাবেন। আমরা এই আলোচনার ফলাফলের ভিত্তিতে এখন কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

বাংলানিউজ: ১৯৭১ সালের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে জটিল ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ভবিষ্যতে আস্থা এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য পাকিস্তান কী পরিকল্পনা করছে?

সৈয়দ আহমেদ মারুফ: দেখুন, ১৬ বছর পর যথাযথ রাজনৈতিক যোগাযোগের দরজা খোলা হয়েছে। আমরা আলোচনা শুরু করেছি। ইনশাআল্লাহ, আগামী দিনে সব বিষয়, এমনকি ‘ঐতিহাসিক বিষয়গুলোর’ও সমাধান হবে। পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে বৈঠক উভয় দেশের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ।

বাংলানিউজ: পাকিস্তান সার্কের ভূমিকা কেমনভাবে দেখতে চায়?

সৈয়দ আহমেদ মারুফ: সার্কের ধারণা এবং এর জন্ম বাংলাদেশেই হয়েছিল। আমি জানি, সার্ক নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের গভীর সম্পর্ক রয়েছে, ঠিক তেমনি (প্রধান উপদেষ্টা) অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও। আমাদের প্রথম বৈঠকে ড. ইউনূস সার্ক প্রক্রিয়ার গুরুত্ব নিয়ে জোর দিয়েছেন। আমি আগেও বলেছি, একটি দেশ ছাড়া বাকি সব দেশই সার্ককে চায়। পাকিস্তান সার্ককে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করে।

বাংলানিউজ: কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?

সৈয়দ আহমেদ মারুফ: দেখুন, আশাবাদী থাকা উচিত। এটি আরও প্রজ্ঞার সঙ্গে সমাধান করা উচিত, কোনো আগ্রাসনের মাধ্যমে নয়। আগ্রাসন কেবল এই অঞ্চলের সমস্যা আরও জটিল করে তুলবে। শান্ত মাথায় এবং বিচক্ষণতার সঙ্গে সমাধান করতে হবে। শেষ পর্যন্ত আমরা শান্তি চাই। পাকিস্তান সবসময় শান্তি চায়। পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে ঘৃণা করে, কিন্তু পাকিস্তানকে কেউ ভয় দেখালে আমরা তা মোকাবিলায় প্রস্তুত। তবে আমরা এই অঞ্চল এবং বিশ্বজুড়ে শান্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বাংলানিউজ: আপনি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

সৈয়দ আহমেদ মারুফ: ভারত ও বাংলাদেশ কীভাবে তাদের সম্পর্ক গড়ে তুলবে ও বজায় রাখবে, সেটা তাদের বিষয়। আমি সেটি মূল্যায়নের কেউ নই।

আরএইচ/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।