ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

ক্রীড়াবিজ্ঞানে পড়া মালান খুঁজছেন ক্রিকেটের আয়ারল্যান্ড ‘ব্র্যান্ড’

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (স্পোর্টস) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
ক্রীড়াবিজ্ঞানে পড়া মালান খুঁজছেন ক্রিকেটের আয়ারল্যান্ড ‘ব্র্যান্ড’

চট্টগ্রাম থেকে: ইউলিয়ান নাগালসম্যানকে হয়তো আপনি চিনবেন সহজেই। বায়ার্ন মিউনিখ থেকে সদ্যই বরখাস্ত হওয়া কোচ কখনো খেলতে পারেননি শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে।

ইনজুরিতে শেষ হয়ে যাওয়া স্বপ্ন পরে তিনি পূরণ করেছিলেন স্পোর্টস সাইন্স (ক্রীড়াবিজ্ঞান) ও কোচিংয়ে। আইনরিখ মালানকে খুব ভালো করে চেনার কথা নয় আপনার।

ভদ্রলোক আয়ারল্যান্ডের কোচ, কিন্তু দেখে আপনার মনে হওয়ার কথা নয় তেমন। বয়স এখনও কেবল ৪১। তার গল্পে নাগালসম্যানকে টানা কেন? কারণ মালানও তার মতো ক্রিকেটার জীবনের ইতি টেনে কোচিংয়ে মনোযোগী হয়েছিলেন অল্প বয়সে। পড়েছেন স্পোর্টস সাইন্স নিয়েও। তার অধীনেই ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপে হারিয়েছে আয়ারল্যান্ড। বাংলাদেশে ওয়ানডে সিরিজ খারাপ কাটলেও সাম্প্রতিক সময়ে ভালো ক্রিকেট খেলেছে আইরিশরা।

নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের সঙ্গে প্রায় নয় বছর কাজ করেছেন, ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায়ও। বাংলানিউজের মুখোমুখি হয়ে মালান বলেছেন ছিটকে পড়া ক্রিকেটারদের মনস্তত্ত্ব, স্পোর্টস সাইন্স, ক্রিকেটে ডাটার ব্যবহার, আইরিশ ক্রিকেট নিয়ে নিজের স্বপ্নসহ নানা প্রসঙ্গে।

বাংলানিউজ: আপনার জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়। পরে নিউজিল্যান্ডে কাজ করেছেন, এখন আয়ারল্যান্ডে। এই পুরো যাত্রাটা কেমন?

মালান: আমার দক্ষিণ আফ্রিকাতে জন্ম ও বেড়ে উঠা। কোচিংয়ের শুরুও করেছি ওখানেই। পরে নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ৯ বছর ছিলাম। এরপর এখন আয়ারল্যান্ডের জাতীয় দলের কোচিং করাচ্ছি। রোমাঞ্চকর যাত্রা সবমিলিয়ে। আশা করি অনেক লম্বা একটা পথচলার শুরু হলো কেবল।

বাংলানিউজ: ক্রিকেটার হিসেবে আপনি বড় কোনো নাম নন। কখনো জাতীয় দলে খেলতে পারেননি, এখন একটা জাতীয় দলের হেড কোচ। এটা কি স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ব্যাপার?

মালান: দেখুন, যখন আপনি একটা খেলা শুরু করবেন; অবশ্যই জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখবেন, নিজেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পরীক্ষা করার তাড়না থাকবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ক্রিকেটার হিসেবে সেটা আমি করতে পারিনি। কিন্তু আপনি যেমন বলেছেন, কাজের দিক থেকে এটা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ব্যাপারই।

এখন জাতীয় দল সামলাচ্ছি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের স্বাদ পাচ্ছি ও পরীক্ষা দিতে পারছি। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা খেলোয়াড়দের কাছে যেতে পারছি, তাদের উন্নতির জন্য পরামর্শ দিচ্ছি, নিজের ভাবনা জানাচ্ছি; এটা খুব উপভোগ করছি। আশা করি অনেকদিন এমনটা করতে পারবো।

বাংলানিউজ: একটু পেছনে ফিরে গিয়ে একটা জাতীয় দলের ড্রেসিংরুমে আপনার প্রথম দিনের কথা কী মনে করতে পারেন? প্রথম যখন পা রাখেন, কেমন লেগেছিল?

মালান: প্রথমবার?...এটা ছিল রোমাঞ্চকর। ওই অনুভূতি বলে বোঝানোর মতো না অবশ্যই। আমার প্রথম ম্যাচ ছিল ভারতের বিপক্ষে সম্ভবত...। পুরো টি-টোয়েন্টি সিরিজটা দারুণ ছিল আমাদের জন্য। আপনি যখনই নতুন ড্রেসিংরুমে যাবেন, একটা রোমাঞ্চ থাকে কীভাবে সবকিছু দেখছেন এবং এগিয়ে নিতে চাচ্ছেন।

খেলোয়াড়দের সঙ্গে সম্পর্ক গড়া, তাদের স্বপ্ন দেখানো, তাদের ভেতর বিশ্বাস তৈরি করা, দিনের পর দিন ধরে তাদের যাত্রার সঙ্গী হওয়া, খেলোয়াড়দের নিজেদের খেলায় উন্নতি করা যেটা আদতে দলকেই সাহায্য করবে; সবকিছু মিলিয়েই দারুণ অভিজ্ঞতা। এখন আমরা ভালো জায়গায় আছি, সামনে দারুণ পথ অপেক্ষায়।

বাংলানিউজ: জাতীয় দলে খেলতে না পারা নিশ্চয়ই কঠিন ব্যাপার ছিল। ধরুণ অন্য কিছুতেও, আপনি যখন জাতীয় দলে খেলতে পারবেন না অথবা স্বপ্নপূরণ হবে না; মানসিকভাবে এটা কতটা কঠিন?

মালান: যদি আমার কথা বলেন, এখনও কিন্তু স্বপ্ন আছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিজেকে পরীক্ষা করতে পারার। ক্রিকেটার হিসেবেই হতে হবে এমন না, কোচ হিসেবেও হতে পারে এটা। কিন্তু দিনশেষে, আমার কাছে আসল ব্যাপার হচ্ছে খেলোয়াড়দের মধ্যে থেকে তাদের সেরাটা বের করে আনা। তাদের যাত্রা প্রতিদিনই আলাদা।

আপনি কোচ হিসেবে আবার অনেকের এই পথচলার সঙ্গী হচ্ছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোচ হিসেবে আপনি একা কী করতে পারলেন তাতে কিছুই হবে না। একটা পরিবেশ তৈরি করতে পারা, স্বপ্ন দেখানো, সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করে একটা লক্ষ্য তৈরি করা। শুধু তৈরি করা না আসলে, সেটা বাস্তবায়নে প্রতিনিয়ত কাজও করে যেতে হবে আপনাকে।

বাংলানিউজ: ক্রিকেটার হিসেবে আপনি স্বপ্নপূরণ করতে পারেননি। ওই অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই এখন আপনার শিষ্যদের কঠিন সময়ে কাজে লাগে?

মালান: আমি বোধ হয় অনেকবার বলেছি, হাই প্রোফাইল ক্রিকেটার না হওয়া, অথবা বিভিন্ন জায়গায় ছিটকে পড়ার অভিজ্ঞতা এখন আমার অনেক কাজে আসছে। ক্রিকেটারদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা, তাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখানো অথবা ক্রিকেটারদের জায়গায় নিজেকে বসিয়ে ভাবা। একই সঙ্গে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে করা কাজ, এই চাকরির আগেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরিবেশে থাকা আমাকে সাহায্য করে অনেক বড় খেলোয়াড়ের সঙ্গে মিলিয়ে আমার ক্রিকেটারদের বলতে পারি- তারা কীভাবে ভাবতো এবং তাতে সে কীভাবে আরও উন্নতি করতে পারে নিজের।

বাংলানিউজ: আপনার স্পোর্টস সাইন্সে ডিগ্রি আছে। আপনার প্রতি আয়ারল্যান্ডের আগ্রহের এটাও একটা কারণ। একাডেমিক পড়াশোনা কী সত্যিই খেলার মাঠে কোনো কাজে আসে?

মালান: শতভাগ আসে। আমি বলবো শুধু স্পোর্টস সাইন্সই না, ডাটা এখন চারপাশে আমাদের, যেভাবে প্রয়োগ করছি আমরা; সঠিক মানুষ থাকা আপনার সঙ্গে, সেটাও মজার। স্কডি ইভান আমাদের ডাটা অ্যানালিস্ট, ব্রেন্ডন এসেনসি কোচ; তারা খুবই প্রো-অ্যাকটিভ।

আমরা যেভাবে সেটআপ বা রিকোভারি করি, যেভাবে ডাটা প্রয়োগ করি, বিশ্লেষণ করি প্রতিপক্ষকে; এসব বিষয় এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমাদের খেলায়। এটা আমাদের খেলোয়াড়দের অনেক সাহায্য করে সেরা সুযোগ দেওয়া পারফর্ম করার জন্য।

বাংলানিউজ: আপনি যেহেতু ডাটার কথা নিয়ে আসলেন, এটা নিয়ে আরেকটু জানতে চাই। আপনার কি মনে হয় যত দিন যাবে ততই খেলাটা আরও সংখ্যা নির্ভর হয়ে যাবে?

মালান: দেখুন, আমার মনে হয় এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন্ডটা বোঝা। আমরা কীভাবে ডাটা ব্যবহার করে আরও কিছু এড করতে পারি অথবা বাদ দিতে পারি। ক্রিকেটের সৌন্দর্য হচ্ছে, এটা বেসবল থেকে একটু আলাদা। বেসবলে আপনি জানেন বল কোথায় পড়বে, ক্রিকেটে সেটা জানা খুব জরুরি কিছু না। পিচের কন্ডিশন বুঝে ডাটাকে ব্যবহার করতে হবে। এটা এখনও আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একই সঙ্গে এটা ক্রিকেটারদের ব্যাপার। আমি কোচ হিসেবে কেবল কিছু একটা তাদের সামনে নিয়ে যেতে পারি। এর বেশি কিছু না।

বাংলানিউজ: আপনার কোচিংয়ের দর্শনটা কেমন, ডাটা নির্ভর?

মালান: ভালো প্রশ্ন। আমার মনে হয় কোচিং দর্শন বদলে যায় নিয়মিতই। হয়তো প্রতিদিন না; তবে বদলায়। ক্রিকেটার, ম্যান ম্যানেজমেন্ট গুরুত্বপূর্ণ এই পর্যায়ে। আপনার সামনে কে আছে, তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া...। তবে সবকিছুর শেষে হচ্ছে খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনতে পারা। কোনো একটা পর্যায়ে হয়তো আপনি ক্রিকেটারকে সমর্থন দেবেন, কখনো আবার সরাসরি কিছু কথা বলার সৎ সাহস লাগবে। কিন্তু দিনশেষে সবকিছু পারফর্মের ওপর নির্ভর করে। সবাই চায় তাদের ক্রিকেটারদের এতে সাহায্য করতে।

বাংলানিউজ: আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটে ফিরে আসি। একজন কোচের চোখে ওখানকার ক্রিকেটটা কেমন?

মালান: আমরা ভালো সময়ে আছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছি। আমাদের চ্যালেঞ্জ আছে কি না? অবশ্যই আছে। অনেকদিন হলো টেস্ট খেলি না, এখন খেলবো। নিজেদের পরীক্ষা করার জন্য এটা ভালো সুযোগ। কখনো আসলে এ ব্যাপারে শূন্যতা ছিল না, কীভাবে খেলবো, কোন ব্র্যান্ডের ক্রিকেটটা আমাদের। আমার মনে হয় সেটা ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে আয়ারল্যান্ড প্রমাণ করেছে। এই দলটা অনেকদিন ধরে ওয়ানডে ক্রিকেটে ভালো করছে। আশা করি নিজেদের এমন অবস্থায় নিয়ে যাবো, সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে পারবো।

বাংলানিউজ: আপনি এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় কাজ করেছেন, নিউজিল্যান্ডে তো অনেকদিন ছিলেন। এই দেশগুলো ক্রিকেটের বড় নাম। আয়ারল্যান্ড এখনও তেমন না। দুই জায়গায় পার্থক্যটা কী দেখেন?

মালান: দেখুন, পার্থক্যের চেয়ে আমি মিল খুঁজে পাই বেশি। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট যেভাবে চলে আর আয়ারল্যান্ড চলতে চায়; একই পথ। আমি সৌভাগ্যবান নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৯ বছরের লম্বা অভিজ্ঞতা আছে। আশা করি সেটা আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট দল ও এখানকার ক্রিকেট কমিউনিটিকে কয়েক ধাপ এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। এমন বীজ বুনে যেতে চাই, ভবিষ্যতে যেন সুন্দর ছায়া দেয়। আমি তাদের ভবিষ্যতের ভিত্তিটাও তৈরি করে দিতে চাই।

বাংলানিউজ: আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটের একটা প্যাটার্ন অনেকদিনের। বড় টুর্নামেন্টে আসে, ভালো কোনো দলকে হারিয়ে দেয়। এরপর আবার আড়ালে চলে যায়। গত বিশ্বকাপেও আপনারা ইংল্যান্ডকে হারিয়েছেন, আপনার অধীনেই। কিন্তু সমস্যাটা হলো নিয়মিত বড় দলগুলোকে হারালেও তারা নিজেরা কখনোই বড় দল হয়ে উঠতে পারেনি...

মালান: দল হিসেবেই বলছেন তো?... এটা আমিও ভেবেছি। কিন্তু আমার মনে হয় যখন থেকে আমরা পূর্ণ সদস্য দেশ হলাম, কিছু চ্যালেঞ্জও সামনে চলে এসেছে। কোভিড বা এমন কিছু ব্যাপার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘরোয়া কাঠামো বা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ঠিকভাবে দাঁড় করানোয়। আমরা খুব বেশি ম্যাচও খেলতে পারিনি।

আমাদের বলবার্নি বা পল স্টার্লিংয়ের মতো ক্রিকেটার আছে, কিন্তু তারা খেলেছে কেবল তিনটা টেস্ট ম্যাচ। অথচ পুরো মৌসুমজুড়েই ওরা ক্রিকেট খেলে। আমরা যত বেশি খেলবো, আমাদের সামর্থ্য আরও বেশি দেখা যাবে। বাংলাদেশ বা শ্রীলঙ্কার মতো দলগুলোকেও শুরুর দিকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে, চ্যালেঞ্জিং ছিল তাদের পথচলা। কিন্তু যত বেশি ক্রিকেট তারা খেলেছে, দল সেটেলড হয়েছে, ভিত্তি তৈরি হয়েছে সবকিছু বড় করার; ভালো করেছে। আশা করি আমরাও এমন কিছু করতে পারবো, সময়ের সঙ্গে তিন ফরম্যাটেই মনে রাখার মতো দল হতে পারবো।

বাংলানিউজ: আয়ারল্যান্ড সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিল ২০১৯ সালে। এ বছর আপনাদের অনেকগুলো ম্যাচ আছে। এটা কতটা চ্যালেঞ্জিং হবে?

মালান: অনেক বেশি। আমি একটু আগেই বলেছি, আমাদের কিছু ক্রিকেটার আছে যারা ৩-৪ বছর ধরে টেস্ট খেলেনি। স্কোয়াডের ১৫ জনের ১০ জনই কখনো টেস্ট খেলেনি। অনেক ছেলেরই অভিষেক হবে এই সফরে। একই সঙ্গে এটাই চ্যালেঞ্জ, আপনাকে এসবের সামনে দাঁড়াতে হবে। রোমাঞ্চকর এক যাত্রারই সঙ্গী হবো আমরা।

কোচ হিসেবে এটাই আমার কাজ। কীভাবে ক্রিকেটারদের সাহায্য করতে পারি খুঁজে বের করতে হবে। কীভাবে টেস্ট খেলবো ঠিক করতে হবে। যেটা করতে চাচ্ছি তাতে ক্রিকেটারদের সাহায্য করতে হবে আমাকে। আমার জন্য এটা রোমাঞ্চকর অবশ্যই।

বাংলানিউজ: তিন ফরম্যাট খেলা চ্যালেঞ্জিং বলছেন, একটা চ্যালেঞ্জ কি এটাও যে আপনাদের আয়ারল্যান্ডের খেলোয়াড়দের পুলটা ছোট?

মালান: আমরা সবাই জানি এটা। নতুন কিছু নয় যে আয়ারল্যান্ডের জনসংখ্যা খুব বেশি না। কিন্তু আমার মনে হয় যেটাতে মনোযোগী হতে চাচ্ছি- ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো শক্তিশালী করে তৈরি করা আর টুর্নামেন্টগুলো নিয়মিত করতে পারা। ক্রিকেটারদের যদি তিন ফরম্যাট খেলতে হয়- তাহলে তাদের ভিত্তিটা শক্ত হতে হবে। ঘরোয়া টুর্নামেন্টের পর আয়ার‌ল্যান্ড 'এ' বা উলভসে খেলে অভিজ্ঞতা অর্জন করলে তারা জাতীয় দলে আরও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।  

বাংলানিউজ: আয়ারল্যান্ডের মতো দেশ, যাদের শক্তিশালী প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট নেই। তারা তিন ফরম্যাটে সত্যিই টিকে থাকতে পারবে?

মালান: যত দ্রুত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের পরিবেশ তৈরি করতে পারবো, তত দ্রুত উপরে উঠতে পারবো। আমরা তিন ফরম্যাটেই খেলতে চাই। ক্রিকেট আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট ও ক্রিকেটাররা গত ১০-১৫ বছর ধরে যে পরিশ্রম করেছে, টেস্ট স্ট্যাটাস বা এখন আমরা যেখানে আছি সেটারই পুরস্কার। আশা করি এই গ্রাফ কেবল উপরের দিকেই যাবে।

বাংলানিউজ: আয়ারল্যান্ডের অনেক ক্রিকেটারই পৃথিবী ঘুরে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলে। এখন যে ধাঁচের টেস্ট হয়। আপনার কী মনে হয় এটা আয়ারল্যান্ডকে টেস্টেও সাহায্য করবে?

মালান: একদম তাই। যেমনটা আগেও বলেছি, সাদা বলের ক্রিকেটাররা ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে দেখিয়েছে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ও সফল হতে পারে। এখন দেখার বিষয় কীভাবে আমরা টেস্ট খেলি। ওই ব্র্যান্ড ও আইডেন্টিটি খুঁজে বের করতে হবে। পারফরম্যান্সের প্যারামিটার সামনে রেখে বুঝতে হবে এটা প্রসেসের ব্যাপার। কিন্তু দিনশেষে প্রসেস আপনাকে ফল দেবে, সেটাই বোঝাবে ঠিক পথে আছেন কি না।

বাংলানিউজ: আইরিশরা কি তাহলে ইংল্যান্ডের মতো টেস্ট খেলবে?

মালান: হা হা হা! বাজবল পুরো দুনিয়াতেই ছড়িয়ে পড়েছে। আমার মনে হয় যেকোনো ‘বলই’ হোক, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। যা সামনে আছে, সেটাই খেলতে হবে। আমরা তেমনই হতে চাই। টি-টোয়েন্টিতেও এটাই আমাদের পথ। প্রো-অ্যাকটিভ হতে চেয়েছি, খেলাটা এগিয়ে নিয়ে গেছি। কিন্তু এটাও বুঝতে পারছি প্রতিটা বলই আলাদা। নিজেরা কীভাবে খেলতে পারি, সেটাই মূখ্য। আমাদের জন্য টেস্ট ক্রিকেটেও কিছুই আলাদা হবে না। সাদা বলের সফল ক্রিকেটার আছে আয়ারল্যান্ডের, তাদের লাল বলে নিজেদের মেলে ধরতে হবে। এটুকুই।

বাংলানিউজ: প্রসঙ্গটা যেহেতু এলো, এই প্রশ্ন দিয়েই শেষ করি। আপনার ব্যক্তিগত মতটা যদি বলেন, টি-টোয়েন্টির এমন ছড়িয়ে পড়া কি আসলেই টেস্টকে সাহায্য করছে?

মালান: ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন! আমার জন্য, লাল বল ক্রিকেট হচ্ছে ক্রিকেটের ভিত্তি, এটা সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। যদি আপনার লাল বলের ভিত্তি শক্ত হয়, সহজেই সাদা বলে যেতে পারবেন। আমি এখনও এটা প্রমাণের অপেক্ষায় আছি টি-টোয়েন্টির ক্রিকেটাররা টেস্টে সফল হবে। কিন্তু আমার মনে হয় এটা হয়তো দ্রুতই প্রমাণ হবে। কে জানে, ডাটাই হয়তো সামনে নিয়ে আসবে এসব।    

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
এমএইচবি/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।