চলছে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ১১তম আসর। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের পেস তারকা স্টিভেন ফিন অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের শেষ তিন বলে তিন ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফিরিয়ে তুলে চলতি আসরের প্রথম হ্যাটট্রিক উইকেট।
চেতন শর্মা (ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড, ১৯৮৭)
বিশ্বকাপে প্রথম বারের মতো হ্যাটট্রিক করার গৌরব অর্জন করেছিলেন ভারতের চেতন শর্মা। ১৮৮৭ সালের ৩১ অক্টোবর নাগপুরের রিদর্ভ অ্যাসোসিয়েশনের গ্রাউন্ডে গ্রুপ পর্বের একটি ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন তিনি। খেলার ৪২তম ওভারের শেষ তিন বলে মিডল, লেগ এবং অফ স্টাম্পে আঘাত হানে তার বল। বল তিনটিতে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন কেন রুথারফোর্ড, ইয়ন স্মিথ এবং ইয়েন চ্যাটফিল্ড।
সাকলাইন মোস্তাক (পাকিস্তান বনাম জিম্বাবুয়ে, ১৯৯৯)
বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক করেন পাকিস্তানের স্পিনার সাকলাইন মোস্তাক। ১৯৯৯ সালের ১১ জুন লন্ডনের দি ওভালে হ্যাটট্রিকটি করেন তিনি। জিম্বাবুয়ের প্রথম সাত ব্যাটসস্যানের একটি উইকেট না পেলেও, পরের তিনটি উইকেট পান সাকলাইন। হেনরি ওলোঙ্গা এবং অ্যাডাম হকলেকে স্ট্যাম্পিং এবং পমি এবাঙ্গওয়াকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে দলকে জয় উপহার দেওয়ার পাশাপাশি নিজের নাম ইতিহাসে লেখান সাকলাইন।
চামিন্দা ভাস (শ্রীলঙ্কা বনাম বাংলাদেশ, ২০০৩)
দিনটি ছিল ২০০৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার পিটারমারিটজবার্গ স্টেডিয়ামে ইনিংসের শুরুতেই চামিন্দা ভাসের প্রথম বলেই বোল্ড হন বাংলাদেশি ওপেনার হান্নান সরকার। পরের বলেই ফিরতি ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন আশরাফুল। আর এনামুল হক স্লিপে জয়াবর্ধনের হাতে ক্যাচ দিয়ে চামিন্দা ভাসের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করে দেন। এটা বিশ্বকাপের তৃতীয় হ্যাটট্রিক।
ব্রেট লি (অস্ট্রেলিয়া বনাম কেনিয়া, ২০০৩)
একই বছর ১৫ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানের কিংসমিটের সাহারা স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ান পেসার ব্রেট লি বিশ্বকাপের চতুর্থ হ্যাটট্রিক করেন। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে কেনেডি ওটিনোকে সরাসরি বোল্ড করে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান। এর পরে ক্রিজে আসা ব্রিজাল প্যাটেলও রিকি পন্টিংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরত যান। আর ব্রেট লি’র হ্যাটট্রিক উইকেট হন ডেভিড ওবাইও।
লাসিথ মালিঙ্গা (শ্রীলঙ্কা বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ২০০৭)
ম্যাচটিতে জয়ের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ছিল ২১০। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪৫ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২০৫ রান সংগ্রহ করেছিল প্রোটিয়ারা। এরপরই মালিঙ্গার আগ্রাসনের শিকার হন দক্ষিণ আফ্রিকার চার ব্যাটসম্যান। গায়নার জর্জটাউন প্রেভিডেন্স স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচের ৪৬তম ওভারে বল করতে এসে মালিঙ্গার একটি স্লোয়ার ডেলিভারিতে শন পোলক বোল্ড এবং অ্যান্ড্রু হল ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। আর পরের বলেই জ্যাক ক্যালিসকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন মালিঙ্গা। কিন্তু শুধু হ্যাটট্রিক করেই শান্ত হননি মালিঙ্গা, পরের বলে মাখায়া এনটিনিকে দুর্দান্ত একটি ইয়র্ক মেরে বোল্ড আউট করেন।
কেমার রোচ (ওয়েস্ট উইন্ডিজ বনাম কেনিয়া, ২০১১)
২০১১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দিল্লির ফিরোজশাহ কোটলা স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ৬ষ্ঠ হ্যাটট্রিকটি হয়। কেমার রোচের গতির ভয়ে আগে থেকেই ডাচরা প্যাড শক্ত করে পরে ছিলেন! কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না পিটার সিলার এবং বার্নার্ড লুটসের। তারা এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্রেন্ড ওয়েস্টডিক বোল্ড হয়ে সাজঘরের পথে হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে ২১৫ রানের বিশাল জয় পায় উইন্ডিজ।
লাসিথ মালিঙ্গা (শ্রীলঙ্কা বনাম কেনিয়া, ২০১১)
একই দিনে কেমার রোচ এবং লাসিথ মালিঙ্গা হ্যাটট্রিক করে ২০১১ বিশ্বকাপ আসরে রেকর্ড বুকে প্রথমবারের মতো নাম তোলেন। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচের ৪৬তম ওভারে শেষ বলে অমিত মিশ্রকে এলবিডব্লিউ করে শূন্য রানে ফেরত পাঠান মালিঙ্গা। এরপর ফিরতি ওভারে বল করতে এসেই পিটার এনগোডো এবং শ্যাম এনগোচকে সাজঘরে পাঠিয়ে বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো হ্যাটট্রিক করার গৌরব অর্জন করেন মালিঙ্গা।
স্টিভেন ফিন (ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া, ২০১৫)
ইনিংসের শেষ তিনবলে তিন উইকেট নেওয়ার রেকর্ড এর আগে কেউ করতে পারেননি। এবারের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এ অনন্য কৃর্তী গড়েন স্টিফেন ফিন। ইনিংসের ৫০তম ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে ব্রাড হাডিনকে ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে সাজঘরে ফেরান ফির। এরপর ইনিংসের শেষ বলে মিচেল জনসনকে ফিরিয়ে হ্যাট্রিক পূর্ণ করেন ফিন। ১১তম বিশ্বকাপ আসরের এটাই প্রথম হ্যাটট্রিক।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫