ঢাকা: মাহেলা জয়ার্বধনের সেঞ্চুরি আর শেষ দিকে থিসেরা পেরেরার অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্যে ‘আফগান-লজ্জা’র হাত থেকে রক্ষা পেল সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকা। নিউজিল্যান্ডের ডানেডিনে পুল এ’র ম্যাচে আফগানিস্তানকে চার উইকেটে হারিয়েছে তারা।
রোববার (২২ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হওয়া ম্যাচে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তান ৪৯.৪ ওভারে ২৩২ রানে অলআউট হয়ে যায়। জবাবে বেশ কয়েকবার শঙ্কায় ভুগেও ৪৮.২ ওভারে ছয় উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় শ্রীলংকা।
গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে ১০৫ রানের বিশাল ব্যবধানের হারার পর ভাবা হয়েছিল লংকানদের সামনে দাঁড়াতেই পারবে না বিশ্বকাপের নবাগত দলটি। কিন্তু উল্টো মোহাম্মদ নবীর দলই ঘাম ঝরিয়ে দেয় অ্যাঞ্জেলা ম্যাথুসের দলের।
টার্গেট তাড়া করতে নেমে লংকান টপঅর্ডারে ধস
২৩৩ রান খুব একটা বড় টার্গেট নয় শ্রীলংকার জন্যে। কিন্তু সেই টার্গেট তাড়া করতে নেমেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়লো লংকান টপঅর্ডার। প্রথম ওভারেই থিরিমান্নিকে এলবিডব্লিউ করে আফগানদের প্রথম ব্রেক-থ্রু এনে দেন দৌলত জাদরান। দ্বিতীয় ওভার দ্বিতীয় বলে শাপুর জাদরানের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিলকারত্নে দিলশান। তখন লংকানদের স্কোর দুই উইকেটে দুই রান। দলীয় ১৮ রানে কুমারা সাঙ্গাকারাকে বোল্ড করে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু এনে দেন হামিদ হাসান। এরপর দলীয় ৫১ রানের মাথায় দিমুথ করুণারত্নে হামিদ হাসানের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হলে শ্রীলংকার স্কোর দাঁড়ায় চার উইকেটে ৫১ রান।
জয়াবর্ধনে ও ম্যাথুসের মূল্যবান পার্টনারশিপ
লংকানদের বিপদে ঘুরে দাঁড়ালেন অভিজ্ঞ মাহেলা জয়াবর্ধনে। তার যোগ্য সঙ্গী হয়ে ওঠেন অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলা ম্যাথুস। এই দু’জন পঞ্চম উইকেটে ১২৬ রানের পার্টনারশিপ গড়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। ম্যাথুস ৮১ বলে ৪৪ রান করে দলীয় ১৭৭ রানের মাথায় আউট হলে পঞ্চম উইকেট খোয়ায় শ্রীলংকা।
সেঞ্চুরি করে আউট হলেন মাহেলা, বিপদে লংকানরা
ইনিংসের ৪১তম ওভারের শেষ বলে ক্যারিয়ারের ১৯তম সেঞ্চুরি তুলে নেন মাহেলা জয়াবর্ধনে। এই ইনিংস খেলার পথে মাহেলার ব্যাট থেকে আসে আট চার এবং একটি ছয়ের মার। কিন্তু দলীয় ১৭৮ রানের মাথায় হামিদ হাসানের বলে থার্ড ম্যানে নওরোজ মঙ্গলের হাতে মাহেলা ক্যাচ দিলে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় লংকানরা।
থিসেরা পেরেরা এবং জীবন মেন্ডিসের ব্যাট উড়িয়ে দিল অঘটনের শঙ্কা
মাহেলা জয়াবর্ধনের বিদায়ের পর পরাজয়ের শঙ্কা ঘিরে ধরে শ্রীলংকাকে। কিন্তু সপ্তম উইকেটে থিসেরা পেরেয়া এবং জীবন মেন্ডিসের ৬০ রানের দুরন্ত পার্টনারশিপে শেষ পর্যন্ত ১৪ বল বাকি স্বস্তির জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে লংকানরা। থিসেরা পেরারা ৪৭ রানে অপরাজিত ছিলেন।
উজ্জীবিত শুরু আফগানদের
বোলিংয়ের মতো ব্যাটিংয়েও ভালো সূচনা করেছিল আফগানরা। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে জাভেদ আহমাদি এবং নওরোজ মঙ্গল প্রথম উইকেটে ৩৪ রান যোগ করেন। তবে দলীয় ৩৪ রানের মাথায় নওরোজ মঙ্গল এবং এর কিছুক্ষণ পরে জাভেদ আহমাদি আউট হয়ে গেলে আফগানদের স্কোর দাঁড়ায় দুই উইকেটে ৪০ রান।
তৃতীয় উইকেট পার্টানারশিপে ছিল বড় সংগ্রহের ইঙ্গিত
আসগার স্ত্যানিকযায় এবং সামিউল্লাহ শেনওয়ারির তৃতীয় উইকেটে ৮৮ রানের পার্টনারশিপে বড় সংগ্রহের ইঙ্গিত পাচ্ছিল আফগানরা। দুই ব্যাটসম্যানই বেশ সহজেই খেলছিলেন লংকান বোলারদের।
ব্রেক থ্রু এনে দিলেন হেরাথ
আফগানদের বড় রান সংগ্রহের ইঙ্গিতে আসগার স্ত্যানিকযায়ির উইকেট তুলে নিয়ে লংকানদের ব্রেক থ্রু এনে সেন বাহাতি স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ। স্ত্যানিকযায় ৫৭ বলে ৫৪ রান করে হেরাথের বলে মেন্ডিজের হাতে ধরা পড়লে ১২৮ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেট হারায় আফগানিস্তান।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালো আফগানরা
স্ত্যানিকযায় আউট হওয়ার পর দলীয় ১৫৮ রানের মাথায় সামিউল্লাহ শেনওয়ারি ৩৮ রানে করে আউট হলে বড় ধাক্কায় খায় আফগানরা। এরপর মোহাম্মদ নবী ২১ রান করে আউট হলে আফগানিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় পাঁচ উইকেটে ১৬৯ রান। এরপর অবশ্য শেষ দিকে মিরওয়াস আসরাফ ২৮ রানের ইনিংস ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান লংকান বোলারদের সামনে দাঁড়াতে পারেননি।
এই ম্যাচে জয়লাভ করলেও দুই ম্যাচ খেলে গ্রুপে চতুর্থ অবস্থানেই আছে শ্রীলংকা। আর আফগানিস্তান আছে তাদের পরের স্থানেই। যথারীতি প্রথম ম্যাচে জয় ও দ্বিতীয় ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় পুল এ’র তৃতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ। গ্রুপের শীর্ষে যথারীতি স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৫