ঢাকা: প্রতিবন্ধীদের অবহেলা না করে তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিতে বাবা-মা, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (০২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে পাঁচ জাতির আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ‘আইসিআরপি টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ফর পিপল উইথ ফিজিক্যাল ডিস্যাবিলিটিজ’ এর উদ্বোধনকালে এ আহবান জানান তিনি।
এ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে স্বাগতিক বাংলাদেশসহ আফগানিস্তান, ইংল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তানের শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটাররা অংশ নিচ্ছেন। প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের নিয়ে বিশ্বে এই প্রথমবারের মতো বহুজাতিক এ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষকে আমি এ অনুরোধটা করবো, কারো ছেলে-মেয়ে সন্তান কেউ যদি মানসিক, দৃষ্টি বা শারীরিক প্রতিবন্ধী হয় তাদেরকে দয়া করে কেউ অবহেলা করবেন না। আমাদের শিক্ষক, অভিভাবক থেকে শুরু করে সমাজের সব স্তরের মানুষের কাছে এটা আমার আবেদন থাকবে, প্রতিবন্ধীদের অবহেলা করবেন না। কারণ তারাও যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারে যদি তাদের সে সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধিতা তাদের জীবনের গতিতে কোনো বাধা হতে পারে না। প্রতিবন্ধীদের ভিতরে এক ধরনের ট্যালেন্ট থাকে, দক্ষতা থাকে। সেটাকে খুঁজে বের করা এবং তাদের সমাজে একটা অবস্থান তৈরি করে দিতে হবে। তাদের ভেতরে যে সুপ্ত যে প্রতিভা রয়েছে সেগুলোকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে।
আমরা চাচ্ছি, মানুষের ভেতরে সেই চেতনাটা ফিরিয়ে আনা যে, একটা ছেলে বা মেয়ে প্রতিবন্ধী হলেই সে সংসারের বোঝা না, সমাজের বোঝা না, রাষ্ট্রের বোঝা না। বরং সেও দেশের জন্য সম্পদ হতে পারে যদি তাকে সুযোগ করে দেওয়া হয। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সুযোগ করে দেওয়ার সেই ব্যবস্থাটাই নিচ্ছি।
প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কল্যাণে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা এটাকে সব সময় সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরা ক্রিকেটকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছি এবং ক্রিকেট যথেষ্ট উন্নতি লাভ করছে। যারা ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড তারা কেন বাইরে পড়ে থাকবে? তাদেরকেও আমাদের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসতে হবে।
শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধকতা থাকলেই যে তারা সমাজ থেকে, সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে সেটা হয় না। তারাও যে পারে যেকোনো একটা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে, তারাও যে পারে একটা দেশের জন্য জাতির জন্য সম্মান নিয়ে আসতে। আমাদের প্রতিবন্ধী যারা তারা কিন্তু এটা প্রমাণ করেছে।
বিশেষ অলিম্পিকে ২১টির মতো স্বর্ণসহ প্রায় ৭০টির মতো পদক তারা নিয়ে এসেছে। যা আমাদের সুস্থ খেলোয়াড়রাও কিন্তু পারে নাই। সুস্থ যারা পারেনি, প্রতিবন্ধীরা ঠিকই পেরেছে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি, আইসিআরসি প্রতিনিধি দলের প্রধান কিস্ট্রিন চিপোলা প্রমুখ।
শারীরিক প্রতিবন্ধীরাও সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারেন সেই বার্তা সারা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিতে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি) এ টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ সমাজের কুসংস্কার ও বৈষম্য কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে বলেও মনে করেন আয়োজকরা।
এ টুর্নামেন্টে আইসিআরসিকে সহায়তা করছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)।
উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। তবে বৃষ্টির কারণে খেলা এখনও শুরু হয়নি। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ টুর্নামেন্ট চলবে। টুর্নামেন্টের বাকি খেলাগুলো সাভারের বিকেএসপি ক্রিকেট মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৫
এমইউএম/এএসআর
** পর্দা উঠলো প্রতিবন্ধীদের নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের