ঢাকা: গ্রীষ্মের তপ্ত রোদ আর গরমে কুঁকড়েই যাবার কথা ওদের। বয়স কতো হবে? ২০ এর বেশি তো কারোরই না।
রোদ আর গরমকে জয় করে ক্রিকেটের টানে তপ্ত দুপুরে সবার মিলন ঘটেছে টঙ্গী ইজতেমা মাঠে। দুই দলে ১১ জন করে ক্রিকেটার। ম্যাচ পরিচালনায় আছেন আম্পায়ার। খাতায় রান তুলছেন স্কোরার। পাড়ার ক্রিকেট বড় ময়দানে। সবাই তাই সিরিয়াস। মনির, শাওন, মোশাররফরা ১৪ ওভারে ১১৬ রান টপকাতে লড়ছে।
শেষ বিকেলে ওদের মধ্যেই ম্যাচ হবে আরেকটা। তবে ওভারটা কমে আসবে। মাগরিবের আজান পড়ার সময় যতটা বাকি সে হিসেবে ম্যাচের দৈর্ঘ্য অর্থাৎ কত ওভারের ম্যাচ সেটি ঠিক করা হবে। বোলিং দলের তাই তাড়াহুড়ো বেশি। দ্রুততম সময়ে ওভার শেষ করার চেষ্টায় রাব্বি, জাকির, সবুজরা।
১৪ ওভারের ম্যাচে মাঠের হিসেবে ১১৬ রানটা যে বড় টার্গেট, সেটি জানেন দু’দলের ক্রিকেটাররাই। তারপরও শাওন দুর্দান্ত সব শট খেলে ম্যাচ বের করে আনার চেষ্টা করছেন। বাউন্ডারি সীমানা বেশ বড় তাই সিঙ্গেলস-ডাবলস নেয়া সহজ। অযথা ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এলে দল বড় বিপদে পড়বে ভেবে শাওন মাটি কামড়ে খেলেই ওভারে ৭-৮ করে তুলছেন। জিততে হলে এভাবেই খেলে যেতে হবে। শাওনের ক্ল্যাসিকাল ব্যাটিং উইকেটের পেছন দিক থেকে দাঁড়িয়ে দেখতে অসাধারণ লাগছে। ফ্লিক, কাভার ড্রাইভ, স্কয়ার কাট, সুইপ, রিভার্স সু্ইপ সব ধরনের শট মিলিয়ে দারুণ এক প্যাকেজ।
উইকেট পড়লে সবার গলা ফাঁটিয়ে উল্লাস। সীমানায় ক্যাচ নিয়ে দূর থেকে ভোঁ দৌড়ে সতীর্থের কাছে ছুটে আসা, উইকেটের পাশে দাঁড়িয়ে গোল হয়ে ফিল্ডারদের ব্রিফিং-এ ব্যাপারগুলো ম্যাচটার রোমাঞ্চ আরও বাড়িয়ে তুলছে। দর্শক হিসেবে সিরিয়াস না হয়ে উপায় নেই। বড় কোনো ক্রিকেট বোদ্ধাও হয়তো এ ম্যাচ দেখে মন্তব্য করবেন, ‘অসাধারণ, দ্যাট’স সিরিয়াস ক্রিকেট!’
এমন রোমাঞ্চকর ম্যাচ; অথচ দর্শক মোটে ৪ জন। আমি, আমাদের ফটোসাংবাদিক, ঝালমুড়িওয়ালা ও একজন শরবত বিক্রেতা। পেঁয়াজ-মরিচ কাটা, লেবু ছ্যাঁচকাতেই ব্যস্ত ওনারা দু’জন। ম্যাচের উত্তেজনায় বুঁদ আমরা দু’জন। শেষ অবধি আশা জাগিয়েও ম্যাচটা জেতাতে পারেনি শাওন। ১৪ ওভারে ৯ উইকেটে ১০৫ এর বেশি করতে পারেনি তার দল। ১০ রানে ম্যাচ জিতে সে কি উল্লাস রাব্বি, জাকির, সবুজদের! ম্যাচ শেষে ৪৬ রানের ইনিংস খেলা শাওনের দীর্ঘশ্বাসটা ধরা পড়লো তার চোখেমুখেও।
মাঠে আমরা ছাড়া বাড়তি দর্শক না থাকার কারণ এখানকার সবাই ক্রিকেটার! বিশাল ইজতেমা মাঠে রোদের তেজে ঝলসে খেলা দেখতে আসার পাত্র তেমন কেউ নন। পুরো ময়দানে এক সঙ্গে চলে ২০টা ম্যাচ।
ছুটির দিন (শুক্রবার) হলে ক্রিকেটারের হাট বসে এখানে। সকাল থেকে জুমার নামাজের আজানের আগ পর্যন্ত চলে ৫০টা ম্যাচ। তাও নাকি ময়দানের কিছু অংশ ফাঁকা থাকে-এমনটা জানালেন লেবুর শরবত বিক্রেতা মোহাম্মদ শাহীন। শরবতের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে কথা হচ্ছিলো তার সঙ্গে, ‘শুক্রবার হইলে মাঠ ভরা দেখতেন। আইজ তো মাঠ ফাঁকা। ’
বিশাল ইজতেমা ময়দান; শ’দুয়েক মানুষকে ফাঁকা তো লাগবেই। ৮-১০ বছরের ছেলেরাও আসে এ মাঠে খেলতে। কে জানে, হয়তো এ মাঠ থেকেই আগামীতে উঠে আসবে মুস্তাফিজের মতো বিস্ময়কর প্রতিভা। পাড়ার ক্রিকেট হলেও সেটি সঠিকভাবে চর্চায় এখানকার তরুণরা অনেক সিরিয়াস, আশা তো করাই যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৭ ঘণ্টা, ২৬ এপ্রিল ২০১৬
এসকে/এমআর/এমএমএস