ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

দ্রুতই সংকট কাটিয়ে উঠবে নারী ক্রিকেট দল

মহিবুর রহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৩ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৬
দ্রুতই সংকট কাটিয়ে উঠবে নারী ক্রিকেট দল ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ফটো)

ঢাকা: যদি এমন হাতো! অনুশীলনের জন্য আর ছেলে ক্রিকেটারদের সঙ্গে একাডেমির মাঠ কিংবা ইনডোর স্টেডিয়াম ভাগাভাগি করতে হচ্ছে না বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে। ম্যাচ খেলতে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে না যক্ষের ধন শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দিকে।

আর ফিটনেস ধরে রাখতে নির্ভরশীল হতে হচ্ছে না ওই একাডেমি সংলগ্ন জিমনেশিয়ামটির উপর। তাহলে কতই না ভালো হত! মাশরাফি, সাকিবদের সঙ্গে সঙ্গে সালমা, জাহানারাদের উজ্জ্বল সাফল্যে আরও এগিয়ে যেত বাংলাদেশের ক্রিকেট।

হ্যা, বাস্তবে এমনটিই ঘটতে যাচ্ছে। কেননা খুব শিগগিরই এই সব সঙ্কট কাটিয়ে উঠার  দ্বারপ্রান্তে টাইগ্রেসরা। পর্যাপ্ত ম্যাচ ও অনুশীলনের জন্য তারা পেতে যাচ্ছে মাঠ। ফিটনেসের জন্য আলাদা জিসনেশিয়াম ও সুইমিং পুল।

এখানেই শেষ নয় শতভাগ প্রস্তুতি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের ফলাফল উজ্জ্বল করতে তাদের জন্য আলাদা ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং কোচও নিয়োগ দেয়া হবে। স্বাস্থ্যবান হবে তাদের বেতন কাঠামো আর উন্নত হবে খাবার ও আবাসন। বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে নিয়ে এমন আশার কথা শোনালেন নারী ক্রিকেট উইংয়ের চেয়ারম্যান এমএ আউয়াল চৌধুরী (ভুলু)।  

     

বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের জন্য ভিন্ন মাঠ, ইনডোর, জিসনেসিয়াম এবং বেতন কাঠামোর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উন্নয়নের বিষয়ে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’কে দেয়া এক সাক্ষা‍ৎকারে এই নারী উইং চেয়ারম্যান বলেন, ‘ছেলেদের মতো ঠিক একই রকম সুযোগ সুবিধা মেয়েদেরও থাকা উচিত কিন্তু আমাদের মাঠের সংকট। একাডেমিতে অনুশীলনের সময় দেখা যায় ছেলেরা অনুশীলন করছে। পুরোপুরি অনুশীলনের জন্য মেয়েরা কোন মাঠই পায় না। তাছাড়া পর্যাপ্ত মাঠ না থাকায় খেলার কোন সুযোগই আমরা পাই না। বড় মাঠে খেলার স্বপ্ন দেখতেই ভয়ই পাই। মূলত এই সব সুযোগ সুবিধার অভাবেই আমরা পিছিয়ে আছি। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মেয়েদের বড় মাঠে ভাল অনুশীলন দরকার। একাডমির মাঠে ৩০ গজের মধ্যে অনুশীলন করে কী আর এমন আহামরি ফলাফল করবে? এইসব সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত বলেই আমাদের মেয়েরা ভাল কিছু করতে পারছে না। ফলে আমরা পিছিয়ে আছি। ’

মাঠের সমস্যাতো বুঝলাম সমাধান করবেন কী ভাবে? উত্তরে এই সংগঠক জানালেন, ‘আমরা চট্ট্রগাম একাডেমিতে মেয়েদের নিয়ে গিয়ে অনুশীলনের কথা ভেবেছি। বিষয়টি আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে জানিয়েছি। উনি মেয়েদের জন্য ভাল একটি ভেন্যু খুঁজছেন। টিঅ্যান্ডটির মাঠ ও ফতুল্লার আউট ফিল্ডটাও যদি নিতে পারি তাহলে মন্দ হয় না কী বলেন?’

শুধু মাঠই নয় মিরপুরে নারী ক্রিকেট আবাসস্থল ক্রীড়া পল্লীর অনুন্নত খাবার ও আবাসসেনর বিষয়টিও তাকে ভাবিয়েছে। তাই মাঠের পাশাপাশি এই বিষয়টির উপর তিনি বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন বলে মনে হল। ‘ক্রীড়া পল্লীতে মেয়েরা ভাল খাবার পায় না। এখানকার খাবার জাতীয় পর্যায়ের সমমানের না। দেখা যায় ১০০-১৫০ মানুষের খাবার এক সাথে রান্না হয়। তাছাড়া ওখানকার আবাসন ও ততটা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যাটির সমাধান খুঁজতে হবে। ’

মাঠ, খাবার ও আবাসনের মত জীর্ণ দশায় নারী ক্রিকেট দলের কোচিং স্টাফও। ২০১৪ সালের আগষ্টে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের দায়িত্ব নেয়া লঙ্কান কোচ চম্পিকা গামাগে আজও সগৌরবেই আছেন।

কিন্তু ২০১১ সালে ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়ার পর মাঠের পারফরম্যান্সে উড়তে থাকা টাইগ্রেসরা তার অধীনে আসার পরই সাফল্যের দেখা পাওয়া রীতি মত ভুলেই গেছেন। তাই তাকে সরিয়ে নতুন কোচ ও কোচিং স্টাফ নিয়োগ দেয়া এখন সময়ের দাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টির সঙ্গে একমত পোষণ করেন ভুলু। ‘বর্তমান কোচ চম্পিকা গামাগে’কে’ আমরাই বেছে নিয়েছি। আমাদের মেয়েরা ইংরেজী ভাল না বোঝায় পার্শবর্তী দেশ শ্রীলঙ্কার কোচ আমরা নিয়োগ দিয়েছি কারণ গামাগে শ্রীলঙ্কান হওয়ায় ওর সাথে আমাদের মেয়েদের যোগযোগ ভাল কেননা ও বাংলা বোঝে ও বলতেও পারে। তবে অচিরেই দেশি কোচিং স্টাফ নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি আমরা ভাবছি। মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, মিজানুর রহমান বাবুল, এহসানুল হক সেজান আমাদের তালিকায় আছেন। ’

তবে, এর চাইতেও উন্নত কোচিং স্টাফের বিষয়টিও ভুলুর মাথায় আছে। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং কোচ নিয়েগের পাশাপাশি বিবেচনায় রেখেছেন তাদের বেতন কাঠামো আরও সমৃদ্ধ করার বিষয়টিও। কিন্তু সেখানে বাধ সাধছে মেয়েদের মাঠের নিষ্প্রভ পারফরম্যান্স ও অর্থের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি। ‘বিদেশি কোচের দাম বেশি। বেশি দাম দিয়ে আমাদের পক্ষে উন্নত কোচিং স্টাফ দেয়া কঠিন তার কারণ হলো নারী দলের জন্য আমাদের বাজেট খুব কম। ’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘মাঠের পারফরম্যান্স ভাল না হওয়ায় আইসিসি থেকে আমরা কোন সহযোগিতা পাচ্ছি না। দেশের পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানগুলোও হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে না। মেয়েদর খেলার মান ছেলেদের মত আপ টু দ্য মার্ক না হওয়ায় ফলে ওদের বেতন বাড়ানো এখনই সম্ভব নয়। বাইরেরর কোন জেলায় ওদের নিয়ে গিয়ে আমরা অনুশীলন করাবো সেই বাজেটটিও নেই। ছেলেদের জন্য বোর্ডে যেখানে ৩০০ কোটি টাকা জমা সেখানে মেয়েদের জন্য কোন টাকাই নেই। কেননা দিন দিন আমাদর ছেলে ক্রিকেট দল ভাল খেলছে। তাদের খেলা থেকে আমরা টাকা পাচ্ছি, মাঠে দর্শক আসছে। তাদের জন্য আমরা স্পন্সর পাই না। ফলে উন্নত কোচিং স্টাফসহ অন্যান্য আনুসঙ্গিক বিষয়গুলোর দিকে নজর দেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরেও আমরা চেস্টা করছি। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, ১১ মে, ২০১৬
এইচএল/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।