ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

স্পোর্টসের ডাক্তাররা সুন্দর ও কর্মঠ জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে

রিফাত আনজুম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, স্পোর্টস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২০
স্পোর্টসের ডাক্তাররা সুন্দর ও কর্মঠ জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী

একটি সুস্থ জাতি গঠনে ক্রীড়াক্ষেত্র বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। যেকোনো দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এই ক্রীড়াক্ষেত্র যে কত বড় ভূমিকা রাখতে পারে সেটা বর্তমান যুগে অনেক দেশই উপলব্ধি করছে।

ক্রীড়া পাগল জাতি হিসেবে বাংলাদেশের একটা পরিচিতি রয়েছে। তবে বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের সাফল্য নিয়ে বড় একটা প্রশ্ন রয়েই যায়।

বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ১৯৭১ সালে। এর ছয় বছর পর ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ)। তবে প্রতিষ্ঠার এত বছর পরেও বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদশের তেমন কোনো সাফল্য নেই। ক্রীড়াক্ষেত্রের যে জায়াগায় বাংলাদেশের সম্ভবনা রয়েছে সেখানেও নেই কোনো সাফল্য। এমনকি আমাদের উপমহাদেশ থেকে উৎপত্তি যে খেলা সেগুলোতেও পিছিয়ে বাংলাদেশ।

অনেক সময় ভালো অ্যাথলেট থাকলেও ইনজুরিতে পড়ে ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়। যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে অনেক সময় তৃণমূল থেকেই হারিয়ে যায় অনেক খেলোয়াড়। তবে খেলাধুলার কথা চিন্তা করলে অনেকেই রয়েছেন যারা শুধুমাত্র বিনোদোনের জন্য খেলাধুলা করে থাকেন। আর খেলাধুলা করতে গেলে ফিট থাকা বেশি জরুরি। ফিট থাকতে হলে শরীরের যত্ন নেওয়াটাও বেশি জরুরি।

খেলাধুলার সার্বিক দিক দিয়ে চিন্তা করলে এসব কিছু নিয়ে কাজ করে স্পোর্টস ডাক্তাররা। সারা বিশ্বেই এই স্পোর্টস মেডিসিনের ডাক্তারদের চাহিদা বর্তমান যুগে অনেক বেশি বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে স্পোর্টস মেডিসিনের ডাক্তারের কোনো চাহিদা নেই। পেশাদার খেলা হোক কিংবা, বিনোদোনের জন্য হোক শরীরটা ফিট রাখতে হলে স্পোর্টস মেডিসিনের ডাক্তার লাগবেই। কিন্তু বাংলাদেশে স্পোর্টস মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনা করা ডাক্তারের সংখ্যা হাতে গোনা দুই থেকে তিন জন।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী দেশের একমাত্র চিকিৎসক, যিনি খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ক্রীড়াঙ্গনের সার্বিক বিষয় নিয়ে। তিনি জানিয়েছেন, একটি দেশ বা জাতির সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য খেলাধুলা একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের যারা নীতিনির্ধারক রয়েছেন তারা এটা নিয়ে কখনো চিন্তা করেন না।

দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, '১৮ কোটি মানুষের দেশ, এখানে ১৮ হাজার ডাক্তার লাগবে। অনেক স্পোর্টসের ডাক্তার লাগবে। একজন দুজন ডাক্তার দিয়ে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। একটা মানুষের ভালো থাকার প্রথম উপায় হচ্ছে খাওয়া ও ব্যায়াম। কিন্তু এই দুইটার ব্যাপারে আমাদের দেশে কোনো গাইডলাইন নাই, এই বিষয়গুলো নিয়ে কেউ জানেও না। স্পোর্টসের ডাক্তাররা কিন্তু একটা সুন্দর ও কর্মঠ জাতি গঠনে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে, কারণ স্পোর্টস ডাক্তাররা কিন্তু এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে। '

তিনি আরো বলেন, 'বাংলাদেশে কিন্তু সব বিষয়ের জন্য অনেক ডাক্তার আছে। কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ের কোনো ডাক্তার নেই। ইউনিসেফ ঘোষণা করেছে যে স্পোর্টস একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা, যেটা দিয়ে আপনি সুস্থ জাতি গঠন করতে পারবেন। এজন্য আমাদের তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। স্পোর্টস মেডিসিন, স্পোর্টস ফিজিওথেরাপি, স্পোর্টস নিয়ট্রিশিয়ান, স্পোর্টস সাইকোলজি এই বিষয়গুলোর প্রতি আগ্রহ দেখাতে হবে। কারণ এখানে কোনো ডাক্তার নেই। '

দেশের সেরা এই স্পোর্টস মেডিসিন চিকিৎসক মনে করেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতি নির্ধারকদের এই বিষয়গুলো নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিৎ। পেশাগত খেলোয়ার যারা আছেন তাদের কথা চিন্তা করলেও বিষয়টা নিয়ে ভাবা উচিৎ।

তিনি বলেন, 'এগুলো পরিকল্পনার ব্যাপার। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ব্যাপার আমাদের যারা নীতিনির্ধারক রয়েছেন তাদের স্পোর্টস জ্ঞান নেই। তাদের স্পোর্টস সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। সরকারি পর্যায়ে নীতিনির্ধারক যারা রয়েছেন তারা ক্রীড়াকে পছন্দ করেন, তারা চান দেশে ক্রীড়া এগিয়ে যাক, উন্নতি হোক, তারা চান বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হোক। কিন্তু কিভাবে চ্যাম্পিয়ন হবে সেই জিনিসটা সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। এটা নিয়ে তো লেখাপড়া করতে হবে। এগুলো হচ্ছে স্পোর্টস এডুকেশনের বিষয়। '

ডাক্তারের পেশাগত দিক দিয়েও কোনো ধরনের পরিকল্পনা নেই। আলিম্পিক গেমস, এসএ গেমস, কমনওয়েলথ গেমস কোনোখানেই স্পোর্টস মেডিসিন ডাক্তার নিয়ে যাওয়া হয় না। বাংলাদেশে স্পোর্টস মেডিসিনের সংগঠন থাকলেও সেখানে স্পোর্টস মেডিসিনের কোনো ডাক্তার নেই।

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের মধ্যে একটা সংগঠন রয়েছে বাংলাদেশ স্পোর্টস মেডিসিন অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু আমরা কখনও এই সংগঠনের সদস্য হতে পারিনি। এই অ্যাসোসিয়েশনের কাজ হচ্ছে বিভিন্ন টুর্নামেন্টের সময় ট্যুর করা। সেখানকার যে কমিটি রয়েছে কেউই কিন্তু স্পোর্টসের রোগী দেখে না। কিন্তু এরা স্পোর্টস কমিটির মেম্বার। এদের কাজ হচ্ছে বিভিন্ন দেশের ট্যুর করা। আমাদের যাওয়ার কথা, আমাদের সুযোগ পাওয়ার উচিৎ। কারণ আমরা স্পোর্টস নিয়ে কাজ করি। কিন্তু আমাকে কখনো তারা ডাকেনি। বৈশ্বিক গেমসগুলোতে ডাক্তার যায়, তবে স্পোর্টসের ডাক্তার যায় না। আমরা স্পোর্টস নিয়ে পড়াশোনা করেছি কিন্তু আমাদের কেউ ডাকে না। এগুলো নিয়ে এখনই পরিকল্পনা করা উচিৎ। '

স্পোর্টস মেডিসিন যে খেলাধুলার জন্য একটা অপরিহার্য অংশ সেটা না বুঝলে খেলাধুলায় এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। দেবাশীষ চৌধুরী মনে করেন এই বিষয়গুলোর প্রতি সরকারের নজর দেওয়া উচিৎ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২০
আরএআর/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।