ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩২, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামে বেড়েছে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার 

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৫
চট্টগ্রামে বেড়েছে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার  ...

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে।

 

চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত নগর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১০ জন। এসব ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) জানিয়েছে, গত সেপ্টেম্বর থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৮টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ জানায়, জানুয়ারি থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ১৬টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১০১ রাউন্ড গুলি ও ২৯ রাউন্ড কার্তুজ।  

গত বছরের ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় মাসুদ কায়সার (৩২) ও মোহাম্মদ আনিস (৩৮) নামের দুইজনকে। এই ডাবল মার্ডারের ঘটনায় দায়ের হওয়া দুই মামলায় প্রধান আসামি করা হয় ছোট সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের। ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানাধীন শমশেরপাড়া এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে আফতাব উদ্দিন তাহসিন (২৬) নামের এক যুবককে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায়ও অভিযুক্ত হিসেবে উঠে আসে সাজ্জাদের নাম।

২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ থানাধীন কালারপুল এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে শর্টগান হাতে প্রবেশ করে গুলি চালায় সাজ্জাদ ও তার দুই সহযোগী। তারা ওই ভবনের মালিকের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। ৫ ডিসেম্বর অক্সিজেন মোড় এলাকার একটি সাততলা ভবনের পঞ্চম তলায় সাজ্জাদকে ধরতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় সে। এ ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্যসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হন। বিভিন্ন সময় সাজ্জাদ ও তার গ্রুপের সদস্যরা প্রকাশ্যে অস্ত্র ব্যবহার করেছে, এসব অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

চলতি বছরের ১৬ মার্চ ঢাকা থেকে সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে একাধিকবার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তার কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্রগুলোর হদিস মেলেনি। গত ১০ এপ্রিল রাঙ্গুনিয়ার লেবুবাগানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন আওয়াইমং মারমা নামের এক ব্যক্তি। আহত হন আরও দুইজন। এছাড়া ২৪ জানুয়ারি রাউজানে জুমার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় গুলিতে নিহত হন ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম। এ ঘটনায় একটি বিদেশি রিভলবার ও একটি দেশিয় এলজি উদ্ধারসহ রাউজানের শীর্ষ সন্ত্রাসী আরাফাত মামুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

রাউজানে আরও একাধিকবার অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে চলতি বছরের শুরু থেকে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদল নেতা পিয়ার মোহাম্মদ চৌধুরী বাবুকে গুলি করে আহত করে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া ২১ মার্চ খুলশী থানাধীন কুসুমবাগ এলাকায় দুইপক্ষের গুলি বিনিময়ের ঘটনায় নিহত হন একজন। গত শনিবার গভীর রাতে রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের গরীবউল্লাহ শাহ পাড়ায় ঘরে ঢুকে মানিক আব্দুল্লাহ নামের একজনকে মুখে ও পায়ে গুলি করে খুন করা হয়। এছাড়াও গতকাল রাউজান উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব রাউজানে মো. ইব্রাহীম (৩০) নামের একজন  দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন।

পুলিশের ধারণা, এসব অস্ত্রের বড় একটি অংশ দেশের সীমান্তপথে বিদেশ থেকে আসছে। যদিও কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, তারপরও বেশিরভাগ অস্ত্র এখনো সন্ত্রাসীদের দখলে রয়েছে- যা নাগরিকদের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী জহিরুল ইসলাম বলেন,  আমার অফিস থেকে ফেরার সময় প্রায়ই চন্দনপুরা এক্সেস রোড দিয়ে যেতে হয়। মার্চে যখন সন্ত্রাসীরা ওই জায়গায় প্রাইভেটকারে গুলি চালিয়ে মানুষ মেরে ফেললো, তখন থেকে আমি সন্ধ্যার পর বের হই না। বাচ্চার স্কুল শেষ হলেও একা আনতে সাহস হয় না। এই শহরে কি আমরা নিরাপদ?

রাউজানের হোটেল ব্যবসায়ী আবু সালেহ বলেন,  আমার এলাকায় গত জানুয়ারিতে এক লোককে নামাজ শেষে গুলি করে মেরে ফেললো। আমি ওই মসজিদের পাশেই থাকি। গুলির শব্দ শুনে এখনো ঘুম ভেঙে যায় রাতে। আমার দোকানে এক মাস ধরে সন্ধ্যার পর ক্রেতা আসে না। সবাই ভয় পায়। পুলিশ এসে কিছুদিন টহল দেয়, তারপর সব আগের মতো। অস্ত্র উদ্ধারের খবর শুনি, কিন্তু এলাকায় যে ভয় আর আতঙ্ক- সেটা তো যাচ্ছে না।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রামের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন,  অস্ত্র উদ্ধারে জোরালো অভিযান না থাকায় সন্ত্রাসীরা এখনো আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। জনগণ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলমগীর হোসেন জানান, বাকলিয়ার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে। আশা করছি, খুব দ্রুতই সেগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হবে।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেল বলেন, অবৈধ অস্ত্র ঠেকাতে চেকপোস্ট বসানো, গোয়েন্দা নজরদারি এবং অভিযান বাড়ানো হয়েছে। অস্ত্রধারীদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৫
এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।