চট্টগ্রাম: অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদল। কমিটি ভেঙে দেওয়ার ১ বছর ২ দিন পার হলেও গঠন করা হয়নি নতুন কমিটি।
দলটির কেন্দ্র ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন নিয়েও অন্ধকারে থাকছেন তারা। এ অবস্থায় দ্রুত চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের কমিটি গঠনের জন্য দাবি তুলেছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। যদিও দলের চরম দুর্দিন ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যুবদলে নেতৃত্ব দিয়ে উজ্জীবিত করার পাশাপাশি সংগঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন একাধিকজন। পাশাপাশি পদপ্রত্যাশীরা কেন্দ্রে লবিং করছেন।
২০১৮ সালের ১ জুন মোশাররফ হোসেন দীপ্তিকে সভাপতি ও মো. শাহেদকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় যুবদল। চার মাস পর ২৩১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর কমিটির মেয়াদ শেষ হলে সেটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
নেতা-কর্মীদের মতে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি কমিটি থাকতো, তবে প্রার্থীদের পক্ষে ওয়ার্ড ও থানা কমিটিসহ তৃণমূল পর্যায়ে প্রচারণা চালানো আরও সহজ হতো। বর্তমানে কমিটি না থাকায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে শৃঙ্খলার ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। নির্বাচনের আগেই কমিটি ঘোষণার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে কেন্দ্র। স্থানীয় নেতাদের পছন্দের কথা মাথায় রেখে নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ চলছে।
এ লক্ষ্যে চলতি বছরের জানুয়ারিতে মহানগর যুবদলের শীর্ষ দুই পদে দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের রাজনৈতিক জীবনের বিবরণ চাওয়া হয়। অর্ধশতাধিক পদপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তাদের রাজনৈতিক বৃত্তান্ত জমা দেন। প্রার্থীরা ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রামে নিজেদের ভূমিকা সেখানে তুলে ধরেন। গত ফেব্রুয়ারির শেষদিকে তাদের সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়।
তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা জানান, বর্তমানে কোনো কমিটি না থাকলেও তারা দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় রয়েছেন। তবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিতে নেতৃত্ব অপরিহার্য। বিশেষত জাতীয় নির্বাচনের আগে ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে নেতৃত্ব থাকা জরুরি। কমিটি থাকলে ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাইতে সুবিধা হবে। ইতিমধ্যে বিএনপির অন্য একটি সহযোগী সংগঠন উঠান বৈঠক থেকে শুরু করে ঘরে ঘরে প্রচারণা চালাচ্ছে, যেখানে যুবদলের কমিটি না থাকায় পিছিয়ে আছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে এবার জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নতুন কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এতে নগরের বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীদের পছন্দের নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি গঠন করা হতে পারে। দলের দুঃসময়ে মাঠে থাকা এবং মামলা-নির্যাতনের শিকার নেতা-কর্মীদের নেতৃত্বে আনার বিষয়টি হাইকমান্ড বিবেচনায় রেখেছে। এ কারণে পদপ্রত্যাশীদের তৎপরতাও বেড়েছে। তারা স্থানীয় সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছেও নিজেদের ত্যাগ ও পরিকল্পনা তুলে ধরছেন।
যুবদলের কেন্দ্রীয় ও নগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদকে সভাপতি করে নতুন কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তিনি বাদ পড়লে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় আছেন চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, নগর যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ইকবাল হোসেন, নগর ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাঈনউদ্দীন মোহাম্মদ শহীদ, নগর যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি ফজলুল হক সুমন, সাবেক সহ-সভাপতি শাহেদ আকবর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শহিদ ও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি সৈয়দ রাজিবুল হাসান রানা।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেহেতু কয়েক মাসের মধ্যে, আশা করা যায় এর আগেই কমিটি ঘোষণা করা হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদ বাংলানিউজকে বলেন, এক বছর ধরে কমিটি বিলুপ্ত। সংগঠনের কাজ এগিয়ে নিতে নতুন কমিটি জরুরি। তারেক রহমান অবগত আছেন। তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী শিগগিরই কমিটি ঘোষণা হবে।
কেন্দ্রীয় যুবদলের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আপাতত আংশিক কমিটি ঘোষণা করে পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হতে পারে। আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে থাকা ত্যাগী, পরীক্ষিত ও ক্লিন ইমেজের নেতাদের নেতৃত্বে আনার জন্য যাচাই-বাছাই চলছে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, কমিটি নিয়ে সুপার ফাইভের মতামত নেওয়া হয়েছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিলে শিগগিরই চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করবেন।
কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এবার ত্যাগী ও ক্লিন ইমেজের নেতাদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হবে। কোনো বিতর্কিত নেতার ঠাঁই হবে না।
এমআই/টিসি