ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

৩৪ দিন বিদ্যালয়ে গিয়ে বেতন তুলেছেন ৩ বছরের!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৩
৩৪ দিন বিদ্যালয়ে গিয়ে বেতন তুলেছেন ৩ বছরের!

সাতক্ষীরা: পাঁচ বছরে বিদ্যালয়ে গিয়েছেন মাত্র ৩৪ দিন। শিক্ষা ছুটি, মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ বিভিন্ন ছুটি দেখিয়ে বেতন তুলেছেন পুরো তিন বছর।

তার কারণে বিদ্যালয়টি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।  

পালানোর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা খেলেও চাকরি ফিরে পেতে এখন আদা-জল খেয়ে নেমেছেন তিনি। আলোচিত-সমালোচিত এ শিক্ষক হলেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সেনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা খাতুন।

নাজমা খাতুন তালা উপজেলার দাঁদপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদ সানার মেয়ে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাজমা খাতুন ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর সেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। মাত্র ৩৪ দিন বিদ্যালয়ে হাজির হয়েছিলেন তিনি। এরপর শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য তিনি দেড় বছরের ছুটির আবেদন করেন। ছুটি মঞ্জুর হওয়ার পর তিনি এক বছর মেয়াদে খুলনায় প্রশিক্ষণ নেন। নিয়মানুযায়ী বাকি ছয় মাস বিদ্যালয়ে সংযুক্ত থাকার কথা থাকলেও নাজমা খাতুন বিদ্যালয়ে ফেরেননি। পরে ২০১৯ সালের ২ জুলাই তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন করে অনুমোদন করিয়ে নেন। মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হওয়ার পর তিনি ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি দুই মাসের অসুস্থতাজনিত ছুটি মঞ্জুর করিয়ে নেন। সে ছুটি শেষ হলেও তিনি আর বিদ্যালয়ে ফেরেননি।

খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ০৪ জানুয়ারি নাজমা খাতুনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয় (স্মারক নং- ০৮.০১.৪০০০.০০০-১৯/৪)। মামলায় ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে চাকরি ও পলায়নের অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার (১৮) আলোকে চাকরি থেকে বরখাস্তের বিপরীতে চিঠি পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয় তাকে।

শিক্ষা অফিসের দায়িত্বশীল সূত্রে আরও জানা যায়, ভুয়া অসুস্থতাজনিত সনদ দেখিয়ে নয় মাসের ছুটি বৈধ করার চেষ্টা চলছে। আর এক্ষেত্রে নাজমা খাতুনের পক্ষ থেকে প্রভাব খাটানোর অভিযোগও রয়েছে।

বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা জানান, সেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ পদ রয়েছে চারটি। বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী ছিল তিন শতাধিক। প্রধান শিক্ষক না আসায় লেখাপড়ার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীরা অন্য বিদ্যালয়ে চলে যাওয়ায় এখন শিক্ষার্থী রয়েছে ১৩০ জন।

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মফিজুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটে পরিচালনা পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা একজন ডেপুটেশনে শিক্ষক চেয়েছিলাম। এ বিষয়ে আমরা অনেকবার শিক্ষা অফিসে গিয়েছি। তবে কোনো সুরাহা হয়নি। বরং তালা উপজেলার শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার ধমক খেতে হয়েছে।  

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) পাল শ্যামল কুমার জানান, পাঁচ বছর ধরে বিদ্যালয়টির অচলাবস্থা চলছে। ২০১৭ সালে যোগদানের পর নাজমা খাতুনকে আমরা বিদ্যালয়ে মাত্র ৩৪ দিন পেয়েছি। এরপর বিদ্যালয়ের সঙ্গে তার আর সংযোগ নেই। শুধুমাত্র তার কারণে বিদ্যালয়টির আজ এ করুণ অবস্থা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, করোনার পর ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে তার বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বিভাগীয় মামলা চলছে।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নাজমা খাতুন বলেন, চাকরি ফিরে পেতে অভিযোগের জবাব দিয়েছি।

খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক (প্রাথমিক শিক্ষা) মোসলেমউদ্দীন জানান, নাজমা খাতুনের জবাবপত্র পেয়েছি। আইন সবার জন্য সমান। আগামী ৩১ জানুয়ারি এ বিষয়ে শুনানি হবে। শুনানি শেষে সিদ্ধান্ত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।