কোপিয়াপো: চিলির সান হোসে অ্যাটাকামা মরুভূমিতে সোনা ও তামা খনিতে দুর্ঘটনায় আটক ৩৩ শ্রমিকের উদ্ধার কাজ এগিয়ে চলছে। পাইপের মধ্য দিয়ে একে একে সাফল্যের সঙ্গে তাদের ভূ-পৃষ্ঠে তুলে আনা হচ্ছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ১১টা ১১মিনিটে ২১ বর্গইঞ্চি একটি ফিনিক্স ক্যাপসুল লিফটে করে প্রথম উপরে তুলে আনা হয় ফোরেন্সিও অ্যাভালোসকে (৩১)। মুহুর্তের মাঝে সকলের উৎফুল্ল হর্ষ্যধ্বনিতে ফেটে পড়েন। বাংলাদেশ সময় ১৪ তারিখ মধ্যরাত পর্যন্ত ১৯ জনকে খনি থেকে তোলা হয়েছে।
দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ২ হাজার ৩০০ ফুট নিচে আটকে থাকা চিলির ৩৩ খনিশ্রমিকের ঐতিহাসিক উদ্ধার অভিযানে এ এক অভিনব অবিস্মরণীয় এবং সেইসঙ্গে প্রথম সাফল্য।
প্রথম সাফল্যের পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত সবাই হাততালি দিয়ে উদ্ধার তৎপরতা ও ফোরেন্সিও কে স্বাগত জানান। উপস্থিতদের মধ্যে তার স্ত্রী ও অন্যরা তাকে জড়িয়ে ধরে আনন্দ প্রকাশ করেন। পরে তাকে পাশের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
উদ্ধারের পর ফোরেন্সিওর বাবা আলফোনসো আভালোস চিলির টিভিএনকে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে জানান, ছেলের জন্য তিনি গর্বিত। একইসঙ্গে খনিতে আটকে থাকা অপর ছেলের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বলেও জানান তিনি।
অ্যাভালোস বলেন, ‘আমি তার জন্য গর্ববোধ করছি। সৃষ্টিকর্তাকে অশেষ ধন্যবাদ যে সে বের হয়ে আসতে পেরেছে এবং ভাল আছে। ’
অ্যাভালোসের অপর ছেলে রেনা আভালোস (২৯) এখন আটকা পড়ে আছেন।
স্থানীয় সময় রাত প্রায় বারোটায় দ্বিতীয় শ্রমিককে উদ্ধারের কাজ শুরু হয়। বারোটা নয় মিনিটে উদ্ধার ক্যাপসুলের সাহায্যে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে মারিও সেপুলভেদাকে (৪০) উপর তুলে আনা হয়।
একটি হলুদ ব্যাগ নিয়ে তিনি মাটির উপরে উঠে আসেন এবং সম্ভবত পাথর ভর্তি এ ব্যাগটি কর্মকর্তা ও উদ্ধারকর্মীদের কাছে হস্তান্তর করেন।
এরপর তিনি সেখানে উপস্থিত তার স্ত্রী ও চিলির প্রেসিডেন্টকে জড়িয়ে ধরেন এবং মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়ার আগে সেখানে অপেক্ষমান বাকি সবার উদ্দেশ্যে আনন্দসূচক হাত নাড়েন।
তবে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে যাওয়ার আগে তিনি তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমাদের কুকুরটি কেমন আছে?’
স্থানীয় সময় রাত প্রায় পৌনে একটায় ক্যাপসুলটিকে আবারও নিচে নামানো হয়। তৃতীয়জনকে উদ্ধারের জন্য।
প্রায় পনেরো মিনিট পর স্থানীয় সময় রাত একটা আট মিনিটে হুয়ান ইলানেস (৫২) নামের তৃতীয় শ্রমিককে উদ্ধার করে আনা হয়।
তৃতীয় শ্রমিককে উদ্ধারের এক ঘণ্টা পর বলিভিয়ার কর্লোস মামানিকে মাটির নিচ থেকে উপরে তুলে আনা হয়। নিরাপদে উপরে উঠে আসার পর মামানির স্ত্রী ভেরোনিকা তাকে আবেগে জড়িয়ে ধরেন।
এসময় চিলির প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির হাতে বলভিয়ার ছোট পতাকা দেখা যায়।
এদিকে চিলির পতাকা সম্বলিত টি-শার্ট পড়া মামানির হাতেও চিলির পতাকা দেখা যায় এবং তিনি ‘ধন্যবাদ চিলি’ বলে হর্ষধ্বনি করেন।
খনিতে আটকে পড়া সবচেয়ে কম বয়সী জিমি স্ন্যাজকে (১৯) উপরে তুলে আনা হয়েছে। উদ্ধার ক্যাপসুলের সাহায্যে পঞ্চম ব্যক্তি হিসেবে সানচেস উদ্ধার করে আনার পর জড়িয়ে ধরে এবং হর্ষধ্বনি করে তাকে স্বাগত জানানো হয়।
চিলির রাষ্ট্রীয় টিভি টিভিএন- এ প্রকাশিত ৩৩ শ্রমিক:
১) ফোরেন্সিও আভালোস (৩১)
২) মারিও সেপুলভেদাকে (৪০)
৩) হুয়ান ইলানেস (৫২)
৪) কর্লোস মামানিকে (২৩)
৫) জিমি সানচেস (১৯)
৬) ওসমান আরাইয়া (৩০)
৭) হোসে ওজেদা
৮) কোদিয়া ইয়ানেজ (৩৪)
৯) মারিও গোমেজ (৬৩)
১০) অ্যালেক্স ভেগা (৩১)
১১) জোর্গে গ্যালেগুইলস (৫৬)
১২) এডিসন পেনা (৩৪)
১৩) কার্লোস বারিওস (২৭)
১৪) ভিক্টর জামোরা (৩৩)
১৫) ভিক্টর সেগোভিয়া (৪৮)
১৬) ড্যানিয়েল হেরেরা (২৭)
১৭) ওমর রিগাদেস (৫৬)
১৮) এস্তেবান রোজাস (৪৪)
১৯) পাবলো রোজাস (৪৫)
২০) দারিয়ো সেগোভিয়া (৪৮)
২১) ইয়োন্নি বারিওস (৫০)
২২) স্যামুয়েল অ্যাভালস (৪৩)
২৩) কর্লোস বুগুয়েনো (২৭)
২৪) জোসে হেনরিকুইজ (৫৪)
২৫) রেনান অ্যাভালস (২৯)
২৬) কাউদিও অ্যাকুনা
২৭) ফ্রাঙ্কলিন লোবোস (৫৩)
২৮) রিচার্ড ভিলারোয়েল (২৭)
২৯) জুয়ান কার্লোস অ্যাগুইলার (৪৯)
৩০) রায়ুল বুসতুস (৪০)
৩১) পেদ্রো কোর্টেজ (২৫)
৩২) অ্যারিয়াল তিকোনা (২৯)
৩৩) লুইস উরজুয়া (৫৪)
বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১৩১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১০