বার্নার্দা লোরকা সচরাচর তার হুইলচেয়ারে বসেই কসমেটিকস ও হাতে তৈরি কাগজের ফুল সান্তিয়াগোর রাস্তায় রাস্তায় বিক্রি করেন। অথচ সব কাজকর্ম ফেলে তিনিও সান হোসে খনিতে ধূলিমলিন রাত কাটিয়েছেন।
চিলির খনিতে আটক শ্রমিকদের উদ্ধার কাজের বদৌলতে ভৌগলিকভাবে বিসদৃশ, শ্রেণী সচেতন ও ব্যক্তিস্বার্থের পুরো জাতির মধ্যে ঐক্য রচনা করেছে।
প্রবল উত্তেজনার মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি তামা উৎপাদনকারী চিলির ৩৩ জন শ্রমিকের সবাই অতিসত্ত্বর মুক্ত হতে যাচ্ছেন। মিস লোরকা এই অপোয় থাকা লোকজনের কাফেলার একজন সদস্য, যিনি আর্থিক ও নৈতিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।
ক্যাম্প হোপের খাবার ঘরে লোরকাসহ সহস্রাধিক সাংবাদিক ও খনিশ্রমিকদের পরিবার-পরিজন অপো করছেন। লোরকা বলেন, ‘লোকজন এখন অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। তবে চিলি অনেক বিভক্ত। ধনীরা অনেক ধনী, গরিবরা অনেক গরিব। এখানে একজন নাকউঁচু লোককেও অন্য সবার মতো এই কর্দমাক্ত রাস্তায় হাঁটতে হবে। পোলিশ করা জুতো পরে আপনি এখানে হাঁটতে পারবেন না। ’
বুধবার সকাল থেকে উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়েছে। এর আগে প্রস্তুতি নেওয়া হয় দুই মাস ধরে। গত ৫ আগস্ট তারা খনির অভ্যন্তরে আটকে যাওয়ার পর ২২ আগস্ট জানা যায় শ্রমিকরা জীবিত রয়েছে। এরপর থেকে উদ্ধারকারী দল ৬২২ মিটার সংকীর্ণ সুড়ঙ্গ খনন করে। এর মধ্য দিয়ে ৫৪ সেন্টিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট ক্যাপসুল প্রবেশ করানো যায়। এই ক্যাপসুলে ভিতরে কেবল একজন মানুষ ধরবে।
শ্রমিকদের পরিবারগুলো খনি সদরদরজার বাইরে একটি অস্থায়ী শহর গড়ে তুলেছেন। দুর্ঘটনার পর থেকে তারা সেখানেই বসবাস করছেন।
নীল জামা পরা একদল নারী প্রত্যেক সপ্তাহেই এখানে আসেন। তারা গাজরের পিঠা, ভাজা পনির মেশানো টাটকা রুটি ইত্যাদি অপোয় থাকা পরিবারগুলোর সদস্য, সমর্থক ও সাংবাদিকদের মধ্যে বিলি করে দেন।
কয়েকদিন আগে, রুবেন ফিগুয়েরোয়া তার মেয়ের তৃতীয় গ্রেডের ফলাফল হাতে নিয়ে হাজির হয়েছেন। শ্রমিকদের দেখাবেন। এখানে আসার আগে সান্তিয়াগো থেকে ১২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন। এরপর একটি ট্রাকযোগে বাকি পথ শেষ করেছেন। ফিগুয়েরোয়া বলেন, ‘আপনাকে তাদের সমর্থন করতেই হবে। ’
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শ্রমিকদের পরিবার-পরিজনদের সহানুভূতি জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন। উপরন্তু, চিলির একজন খনিমালিক এদুয়ার্দো ফারকাস শ্রমিকদের জন্য একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চালু করেছেন। অ্যাকাউন্টে প্রত্যেক শ্রমিকদের জন্য ১০ হাজার মার্কিন করে দানও করেছেন।
এই সংকট মুহূর্তে আন্তর্জাতিক সহায়তাও এসেছে। দীর্ঘদিনের দুই শত্র“ দেশ বলিভিয়া ও চিলি একে অপরের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। আটকে খাকা শ্রমিকদের মধ্যে বলিভিয়ার নাগরিক ২৩ বছর বয়সী কার্লোস মামানি রয়েছেন।
কর্মীরা অন্যান্য দেশের মধ্যে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও আর্জেন্টিনা পতাক উত্তোলন করেছে। এর মধ্যে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত মাই আল কাইলা খনিস্থল ঘুরে গেছেন। সেখানে তার দেশের পতাকাও উড়িয়ে এসেছেন।
এরই মধ্যে বিতর্ক উঠেছে, ভবিষ্যতে কিভাবে এই সমস্যার মোকাবিলা করা হবে। কেউ বলছেন খনির দায়িত্ব নেওয়া উচিৎ রাষ্ট্রের। অনেকে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলছেন। এমনকি এরকমও দাবি উঠেছে যে, ছোট খনিগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ। বোঝা যাচ্ছে, সব নাগরিকের মধ্যে দেশের শিল্পনীতি সংস্কারের দাবিটা বেশ জোরেসোরে উঠেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১০