ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তান: বন্যার পর শীতের জুজু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১০
পাকিস্তান: বন্যার পর শীতের জুজু

হায়দারাবাদ: বন্যার ধকল থেকে বেরুতেই পারল না পাকিস্তান, এরই মধ্যে শীতের জুজু এসে ভর করেছে। হাজার হাজার শিশু অনাহার, অর্ধাহারে তীব্র পুষ্টিহীনতায় ভুগছে।

ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিদিনই কেউ না কেউ।

আসন্ন শীতেই ভালো বাসস্থানের অভাবে নোংরা, সাদামাটা তাবুর মধ্যে দিনযাপন করা এসব শিশু নতুন করে ঝুঁকির পড়েছে। সরকারি কর্মকর্তা ও জাতিসংঘের কর্মীদের মুখে এরই প্রতিধ্বনি পাওয়া গেল। পুষ্টিকর খাবার এবং পরিষ্কার পানির অভাবে শরণার্থী শিবিরে থাকা দুই লাখ ৫০ হাজার রোগা ও জীর্ণ শিশুর জীবন এ মুহূর্তে ঝুঁকির মধ্যে আছে। পাকিস্তানে বিপর্যয়কারী বন্যা শুরুর পর থেকেই দুর্ভাগা এ শিশুদের স্থান হয়েছে এসব শরণার্থী শিবিরে।

হায়দারাবাদের শরণার্থী শিবিরের স্বেচ্ছাসেবী পুষ্টিবিদ মোহাম্মদ আশরাফ বলেন, ‘এসব শিশুর জীবন ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে আছে। পুষ্টিহীনতা এক্ষেত্রে ভয়াবহ হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে এবং এর ফলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা আছে। ’ ত্রাণ সংস্থা ও সরকার এ পর্যন্ত খাদ্যের অভাবে ভয়াবহ মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে থাকা ৭৫ হাজার ৫০০ পুষ্টিহীন শিশু চিহ্ণিত করেছেন। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এ তথ্য জানায়। এর মধ্যে বন্যার কারণে পাকিস্তানের নিঃস্ব পরিবারগুলোর আরও এক লাখ ৮০ হাজার পুষ্টিহীন শিশুর অবস্থা বর্তমানে আরও শোচনীয় হয়ে পড়েছে। দ্য পিপলস ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন নামের ত্রাণ সংস্থার প্রধান খালেম শাইখ এ তথ্য জানান।

করাচীর পশ্চমের এক শহরতলির একটি তাঁবুতে বিলাওয়াল ও বখতিয়ারের সেবা করতে দেখা যায় তাদের মাকে। গুপ্তহত্যার শিকার পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর সন্তানদের নামে নাম রাখা তিন সপ্তাহ বয়সী যমজ এ শিশুদের তখন রোগা ও ফ্যাকাসে দেখাচ্ছিলো। তাদের মা নাজেরান বিবি (৩৮) বলেন, ‘তারা অসুস্থ। তাদের শরীর শুকিয়ে আসছে। কিন্তু আমাদের সেবা যতœ করার কেউ নেই। ’ সূর্যের প্রখর উত্তাপ থেকে শিশু সন্তানদের রক্ষার জন্য কাপড় দিয়ে তাদের জড়িয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তারা বুকের দুধ খায়। কিন্তু তাদের আমি কিভাবে খেতে দেব? খাওয়ার জন্য আমার কাছেই প্রয়োজনীয় খাবার নেই। ’ পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৩০ লাখ শিশু এ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জাতিসংঘের হিসেব থেকে জানা যায়। এর মধ্যে খাদ্যের অভাবে দুই লাখ ৫০ হাজার শিশুর অবস্থা বর্তমানে সংকটাপন্ন বলে ইউনিসেফ জানায়। এদিকে, শীতের আগেই খাদ্য মজুদ করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) কর্মকর্তারা সতর্ক করে দেন।

ডব্লিউএফপি’র মুখপাত্র জ্যাকি ডেন্ট বলেন, ‘তীব্র পুষ্টিহীনতার হার বেড়ে যাওয়ার কারণে পুষ্টি অবস্থার দ্রুত মূল্যনির্ধারণ এবং চিকিৎসা অবস্থা পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ’ তবে জাতিসংঘের ত্রাণের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খুব ধীরগতিতে ত্রাণ সাহায্য আসছে এবং তা জরুরি অভিযানকে হুমকির মধ্যে ফেলেছে বলে জানান তিনি । শুধু নভেম্বর ও ডিসেম্বরেই আরও ৮০ লাখ ডলার সাহায্য প্রয়োজন বলেও ডেন্ট জানান । এদিকে পুষ্টিহীনতার সঙ্গে সঙ্গে নোংরা পানি বিশেষত ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের চর্মরোগ, ডায়রিয়া এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা তৈরি করবে বলেও চিকিৎসকরা জানান।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১০ এনজে/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।