ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

বেঁচে থাকার লড়াই থামাইনি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১০
বেঁচে থাকার লড়াই থামাইনি

কপিয়াপো: ‘একটি টোনা মাছের এক তৃতীয়াংশ দিনে খেতে পেয়েছি। যে পানি আমরা পান করতাম তা ছিলে যন্ত্রের তেলের মতো।

পৃথিবীর অন্ধকার গহবরে নিজেদের সপে দিয়েছি। কিন্তু বেঁচে থাকার লড়াই থামাইনি। ’

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এভাবেই আটকাবস্থার বর্ণনা করেন চিলির খনি থেকে উদ্ধার হওয়া শ্রমিক রিচার্ড ভিলারোল।

ভিলারোল বলেন, আমরা মৃত্যুর অপেক্ষায় ছিলাম। কারণ আমাদের দেহ নিজেকেই খাচ্ছিল। আমি ভয়ে ছিলাম যে, আমার ছেলের সঙ্গে আর কখনো দেখা হবে না।

উদ্ধারের পর খনি শ্রমিকদের যে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সেখানে ভিলারোলকেও নেওয়া হয়। বিছানায় শুয়ে  ভিলারোল আগস্টের শুরুর দিকের দুর্ঘটনার বর্ণনা দেন।

ভিলারোল বলেন, ‘ওই সময় টার্নেলের ছাদ এবং সবকিছুতে ঝাঁকুনি খেলো। মুহুর্তের মধ্যে সবকিছু ভেঙ্গে পড়ল। আমরা এক থেকে দুই মিটারের মধ্যে কিছুই দেখতে পেলাম না। আমরা একটি ট্রলিতে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। কিন্তু আমরা পড়ে যাচ্ছিলাম। কারণ আমরা কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। ’

লুইস উরজা সিফট ফোরম্যান। তিনি তার লোকদের খারাপ খবরটি দিয়েছিলেন। তাদের বেঁচে থাকা সম্ভব হলেও কোনো দিন পৃথিবীর সূর্যের আলো দেখা সম্ভব হবে না।

ভিলারোল বলেন, ‘আমাদের একজন নেতা ছিলো। তিনি প্রতিদিনই বলতেন আমাদের শক্ত থাকতে হবে। আমাদের যদি তারা খুঁজে পায় পাবে, না পেলে নাই। ’

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে উরজা বলেন, ‘আমি আমার অনেক সহকর্মীর খারাপ অবস্থা লক্ষ্য করছিলাম। অনেকেই প্রথম দিন উঠে দাঁড়াতে পারছিল না। ’

ভিলারোল দুই বছর ধরে সান হেসে সোনা ও তামা খনিতে কাজ করছিলেন। কিন্তু তিনি কখনো তার মাকে জানাননি যে তিনি পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে আধ কিলোমিটার গভীরে কাজ করছেন।

কিন্তু দুর্ঘটনার পর ৬৯ দিন তার পরিবারের সদস্যরা খনির কাছে অবস্থান নিয়েছিলেন।

চোখে কালো চশমা। সাদা টি-শার্ট, মাথায় হ্যালমেট পড়া ভিলারোলকে যখন ২৭ জনের পর ভূপৃষ্ঠে তুলে আনা হলো তখন তার স্ত্রী জড়িয়ে ধরে চুমু খেলেন। ভিলারোল খুব কষ্ট করে হলেও অর্ধ হাসি হাসেন। এ পাশে দাঁড়িয়ে তার ছেলে ও বাবা হাতে তালি বাজাচ্ছিলেন। সে এক ঐতিহাসিক মুহুর্ত।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।