হাফলং: বরাইল পর্বতশ্রেণীর মধ্যে জাটিঙ্গা গ্রামের শান্তস্বভাব পরিবেশ প্রতিরাতেই নষ্ট হয়ে যায়। আসামের কাছাড় জেলার ওই গ্রামটিতে মানুষে মানুষে হানাহানি, মারামারি, খুনখারাবি বা এধরনের সহিংসতার কারণে যে এটা হয় তা কিন্তু নয়।
বহু বছর ধরে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত স্থানীয় লোকজন এই ঘটনা দেখে আসছে। সূর্য ডোবার সময়ে এই যাটিঙ্গা গ্রামে ঝাঁক বেঁধে পাখির দল হাজির হতে থাকে। একসময় পূর্ণ গতিতে দিগি¦দিক উড়াউড়ি শুরু করে। সামনের ভবন, গাছপালায় ধুপাধাপ আছড়ে পড়ে আর মারা যায়। গ্রামের দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই ঘটনা ঘটে আসছে বহু দিন থেকে। এখনো পর্যন্ত পাখিদের এই আত্মবিনাশের কারণ সঠিকভাবে জানা যায়নি।
হাফলং থেকে জাটিঙ্গার দূরত্ব মাত্র আট কিলোমিটার। এখানেই রয়েছে দিমা হাসাও জেলার সদর দপ্তর। অতিথি পাথির বিচরণ ত্রে জায়গাটি।
মাছরাঙা, সবুজ পায়রা, উড়োহাঁস, দাগযুক্ত ঘুঘু, পান্না ঘুঘু ও ধূসর সারসসহ আরও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এখানে বহু বছর ধরে দেখা যায়।
পাখিরা কি সত্যিই আত্মহত্যা করে? নাকি অন্য ব্যাপার আছে?
এ বিষয়ে আসামের সুপরিচিত পাখি বিশারদ আনোয়ারুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এটা ঠিক আত্মহত্যা না। সত্যি ঘটনা হলো, পাখিরা আলোর প্রতি প্রচণ্ড আকৃষ্ট হয় এবং সেই আলোর উৎসের দিকে ছুটে যাওয়ার সময় যে কোনো কঠিন বস্তুর সঙ্গে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা যায়। ’ একই কথা অভিমত পাওয়া গেল পরিবেশ সংরক বি ব্রহ্মের কাছে।
তবে আত্মহত্যার ঘটনা রহস্যের ঘের বেরিয়ে আসেনি। প্রশ্ন হচ্ছে কেন পাখিগুলো সূর্য ডোবার পরে এমন গতিতে আলোর দিকে ছুটে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ পাখিই দিবাচর। কেবল দিনেই তারা সক্রিয়।
ভারতের বিখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ প্রয়াত সলিম আলি এই ঘটনাটায় যারপরনাই আশ্চর্য প্রকাশ করেন। তার একটি লেখায় তিনি জানাচ্ছেন, ‘আমার কাছে এই ঘটনার সবচেয়ে হতবুদ্ধিকর দিক হচ্ছে, বহু প্রজাতির দিবাচর পাখি উড়াউড়ির পর দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়ার ব্যাপারটি। বিভিন্ন কোণ থেকে এই সমস্যাটার গভীর বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। ’
ভারতে প্রাণিবিজ্ঞান জরীপ বিভাগ একদল গবেষককে ১৯৭৭ সালে ওই স্থান পরিদর্শনে পাঠায়। পরে ইউরোপ, আমেরিকা, জাপানের বহু লোক এই বিষয়ে গবেষণা করেছেন।
তবে এতো এতো পাখির এমন নির্মম মৃত্যুতে মোটেও শোকসন্তপ্ত নয় স্থানীয় লোকজন। কারণ দেওয়ালে, ভবনে, গাছে আছড়ে পড়লে তারা সেই পাখি ধরে। রান্না করে খায়।
স্থানীয় গোপাল সাইনশাই বার্তাসংস্থা বলেন, ‘বহু বছর ধরে বহু পাখির যাতায়াত রয়েছে এখানে। তবু পাখির সংখ্যা কখনো কমেনি। আমার জীবনে বহু পাখি দেখেছি। ’
পাখিদের আত্মাহুতির ঘটনা দেখতে চাইলে শিলচর থেকে ১১০ কিলোমিটার ও গোয়াহাটি থেকে ৩৫০ অদূরে হাফলং-এ যেতে হবে। এই অঞ্চল দুটোই সবচেয়ে কাছাকাছি বিমানবন্দর। ট্রেনে যেতে চাইলে গৌহাটি থেকে লুমডিং পর্যন্ত ব্রডগেজ রেললাইনে। এখান থেকে আরেকটি মিটারগেজ ট্রেন হাফলং নিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১০