ঢাকা, সোমবার, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ জুলাই ২০২৫, ১৮ মহররম ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

চীন কেন প্রশান্ত মহাসাগরে শক্তি বাড়াচ্ছে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৪১, জুলাই ১৪, ২০২৫
চীন কেন প্রশান্ত মহাসাগরে শক্তি বাড়াচ্ছে?

প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংযোগ দেশটির পশ্চিম উপকূল ঘেঁষে। কিন্তু নিজের উপকূলের চেয়ে তার মনোযোগ চীনের উপকূলেই বেশি।

এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে জাপান, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া আর ফিলিপাইনকে বন্ধু বানিয়েছে দেশটি। তাদের সঙ্গে নিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বদিকে চলছে চীনকে সাগরে নামতে না দেওয়ার প্রস্তুতি।

মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ পেন্টাগনের নীতিগত প্রধান এলব্রিজ কলবির একটি গোপন স্মারকলিপি প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। সেখান থেকে জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন তাদের সামরিক মনোযোগ ইউক্রেন থেকে চীনের দিকে সরিয়ে নিচ্ছে। তাই চীনের সামরিক বাহিনীও প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে তার প্রভাব বাড়াচ্ছে। দেশটি নতুন নতুন অঞ্চলে জাহাজ ও বিমান পাঠাচ্ছে।

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র আর তার মিত্রদের বিভিন্ন বাড়াবাড়ি আর অনধিকার চর্চায় অনেকদিন থেকেই বিরক্ত চীন। তাই দেশটি সাগরে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে। তাদের সামরিক বাহিনী অনেকদিনের চেনা ভৌগোলিক সীমা ছাড়িয়েও এগিয়ে যাচ্ছে।

গত জুন মাসে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের দুটি বিমানবাহী রণতরী যৌথ মহড়া চালিয়েছে। তখন চীনা বাহিনী এক হাজারেরও বেশি বিমান উড়িয়েছে। আর উত্তর ফিলিপাইনে কথিত বিমানবাহী রণতরী বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে, সংঘাত বাঁধলে চীনের পক্ষে তার উপকূল ঘেঁষে থাকা প্রথম দ্বীপ শৃঙ্খল পার হওয়া এখন আরও বিপজ্জনক। কিন্তু দেশটি যে মার্কিন সামরিক শক্তিকে পাত্তা দিচ্ছে না, তারই প্রমাণ জুন মাসের ওই মহড়া।

প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের সামরিক শক্তি বাড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে উসকানি। দেশটির দাবি, চীনের বিশাল সামরিক মহড়া তাইওয়ানের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। স্বশাসিত দ্বীপটিকে চীন তার অংশ বলে দাবি করে। দ্বীপটির অধিকার নেওয়ার হুমকিও দিয়েছে দেশটি। তাইওয়ানের চারপাশে তাই চীনা সামরিক মহড়াকে আক্রমণের মহড়া বলতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।

চীন যদি তাইওয়ান আক্রমণ করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কী করবে? মার্কিন বাহিনী তাইওয়ানের সাহায্যে আসবে কি না, তা বলেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র আপাতত তাইওয়ানের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন অস্ত্র বিক্রি করছে। দ্বীপটির কিছু সৈন্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা শিল্পকে সহায়তাও দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

তবে এশিয়া-প্যাসিফিকে যুদ্ধ বাঁধলে যুক্তরাষ্ট্র একা আসবে না। দেশটি তার এশিয়ান মিত্রদেরও যুদ্ধে জড়াবে। দেশগুলোকে তাদের মোট দেশজ উৎপাদনের ৫ শতাংশ যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য খরচ করতে চাপ দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু জাপান তার ওই ব্যয় মাত্র ২ শতাংশে তুলতে চাইছে। দক্ষিণ কোরিয়া বলে দিয়েছে, তাদের সামরিক ব্যয় এর মধ্যেই অনেক বেশি।

তাইওয়ান থেকে ৫০০ মাইলেরও কম দূরে জাপানের ওকিনাওয়া দ্বীপে কয়েক হাজার সৈন্য জমা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জাপানে আরও আছে প্রায় ৫৫ হাজার মার্কিন সামরিক কর্মী। দক্ষিণ কোরিয়ায় সংখ্যাটি ২৮ হাজারেরও বেশি। মার্কিন সেনাবাহিনী গুয়ামে বেশ কয়েকটি পারমাণবিক সাবমেরিন এবং দূরপাল্লার বোমারু বিমান মোতায়েন করেছে। সেখানে ৫ হাজার মেরিন সেনা থাকার জন্য একটি নতুন ঘাঁটি তৈরি করা হয়েছে। মার্কিন বাহিনী ইদানীং ফিলিপাইনে আরও ঘাঁটিতে তাদের কার্যক্রম বাড়িয়েছে। লুজন দ্বীপে তাইফুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়েছে। সেখান থেকে চীনা সামরিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোতে আঘাত হানা যেতে পারে।

অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও মার্কিন সামরিক মহড়া চলছে। চীন ওইসব কার্যকলাপকে উস্কানি এবং অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা বলে থাকে। জুন মাসে, ব্রিটিশ বিমানবাহী রণতরীর একটি দল অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছিল। একটি ব্রিটিশ নৌযান তাইওয়ান প্রণালীর ভেতর দিয়ে যাত্রা করে। এমন আচরণের নিন্দা জানায় চীন। পশ্চিমা শক্তির এমন সব হুমকি ঠেকাতেই চীনকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হচ্ছে।

এমএইচডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।