ঢাকা, সোমবার, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

১৭ বছরের পুরানো ইস্যুতে মুখ খুললেন মানিক সরকার

আগরতলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৪০, জুলাই ২৯, ২০১৩
১৭ বছরের পুরানো ইস্যুতে মুখ খুললেন মানিক সরকার

আগরতলা(ত্রিপুরা): জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রীত্ব ইস্যুতে শেষ পর্যন্ত মুখ খুললেন মানিক সরকার। জানালেন ১৯৯৬ সালে জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রীত্বের দাবির বিপক্ষেই ভোট দিয়েছিলেন তিনি।



তিনি আরও জানান, জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী হতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল কি ঠিক তা নিয়ে মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি।

এবারই প্রথম এ ইস্যুতে মুখ খুললেন মানিক সরকার। বলা ভাল সিপিএমের কোন শীর্ষস্থানীয় নেতা এবারই প্রথম এ ইস্যুতে সবার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বললেন।

১৯৯৬ সালে দেশে তৃতীয় ফ্রন্টের সরকার গঠিত হয়। সেবার লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের পরাজয় ঘটে। দেশের কংগ্রেস এবং বিজেপির আওতামুক্ত দলগুলো জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে সরকার চেয়েছিলো। সেসময় তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং সিপিএমের অবিংসবাদী নেতা।

জ্যোতি বসু প্রধানমন্ত্রী হবেন কিনা এবং সিপিএম কেন্দ্রের সরকারে যাবে কিনা তা নিয়ে ভোটাভুটি হয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে। সে ভোটাভুটিতে ২ ভোটে হেরে যায় জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সিদ্ধান্তটি।

এরপর দেশের অকংগ্রেসি এবং অবিজেপি দলের শীর্ষ নেতারা ফের দাবি জানায়, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি যাতে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে। কিন্তু দ্বিতীয়বারের ভোটাভুটিতেও ফলাফল আগের মতোই থাকে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন নেতৃত্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মত দেয় জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সিদ্ধান্তের বিপক্ষে।

এরপর জ্যোতি বসু এ ঘটনাকে বলেছিলেন, ‘পার্টির ঐতিহাসিক ভুল’। জ্যোতি বসুর সেদিনের এ মন্তব্য নিয়ে প্রচুর জলঘোলা হয়েছে। অনেক লেখালেখিও হয়েছে। কিন্তু পার্টি এ সম্পর্কে কোন মতামত জানায়নি। এবারই প্রথম সিপিএমের কোন শীর্ষ নেতা প্রকাশ্যে মুখ খুললেন ১৭ বছরের পুরানো এ ইস্যুতে। সিপিএম নেতৃত্বের কাছে এ ইস্যুটি সবসময়ই খুব স্পর্শকাতর। সহজে কেউ এ নিয়ে কথা বলতে চান না।

১৯৯৬ সালে কেন্দ্রীয় কমিটিতে এ ইস্যুতে যখন ভোটাভুটি হয় তখন মানিক সরকার ত্রিপুরা থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। আজ তিনি পার্টির পলিটব্যুরো। সেদিন ত্রিপুরা থেকে প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী দশরথ দেবও ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে। নৃপেন চক্রবর্তী ছিলন তৎকালীন  সময়ে ত্রিপুরা থেকে পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য। কিন্তু যখন ভোটাভুটি হচ্ছে তখন তিনি পার্টি থেকে বহিষ্কৃত। ফলে ত্রিপুরা থেকে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে মাত্র তখন ছিল দুই জন সদস্য ছিলেন।

মানিক সরকার জানিয়েছেন, তিনি জ্যোতি বসু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু সেদিন দশরথ দেব কোন পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন তা এখনো জানা যায়নি।

এবারই প্রথম মানিক সরকার জানালেন তিনি সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে কোন পক্ষ অবলম্বন করেছিলেন। সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সাথে ত্রিপুরার সম্পর্ক চিরদিনই খুব নিবিড়। কিন্তু জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সিদ্ধান্তের পক্ষে সেদিন পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব নেতাই সমর্থন জানানো সত্ত্বেও সেদিন বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল ত্রিপুরা।

গত কিছুদিন আগে প্রয়াত বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট নেতা সমর মুখোপাধ্যায়ের স্মরণসভা আয়োজন করেছিল সিপিআই(এম) ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি। সে স্মরণসভার প্রধান বক্তা ছিলেন মানিক সরকার। রবিবার সন্ধ্যায় সে সভাতে দাঁড়িয়েই মানিক সরকার তুলে আনলেন ১৭ বছর আগের সেই ইতিহাস। যে ইতিহাস এখনো সিপিএমকে বিদ্ধ করে।

আজও অনেকে মনে করেন সেদিন হয়তো কেন্দ্রের সরকারে গেলে ভারতবর্ষের বুকে কমিউনিস্টদের চেহারা অন্যরকম হত। আবার সে বিতর্ককে নতুন করে উস্কে দিলেন মানিক সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৩
সম্পাদনা: কামরুল হাসান কাইউম, নিউজরুম এডিটর- eic@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।