ঢাকা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এ যুগে আজকাল ফেসবুক, টুইটার কিংবা ইউটিউবের মতো সাইটগুলো থেকে মতামত নিয়ে কোনো সাইট, ব্র্যান্ড বা পণ্য সম্পর্কে ধারণা নেওয়া হয়।
লাইক, ফলোয়ার কিংবা ভিউ দেখে সাইট, পণ্য বা ব্র্যান্ড সম্পর্কে ধারণা নেওয়া হলেও এ ব্যাপারে উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম গার্ডিয়ান।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গার্ডিয়ান জানায়, কোনো পণ্য বা ব্র্যান্ডের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য ভুয়া লাইক, ফলোয়ার এবং ভিউ তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে বিশ্বে। ‘ক্লিক ফার্ম’ খ্যাত এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে লাইক বাড়ানোর মাধ্যমে নিম্নমানের সাইট, ব্র্যান্ড বা পণ্যকেও জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ভুয়া লাইক বা ভিউ’র কারণে প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা আর হুমকির মুখে পড়ছে সত্যিকারের পণ্য বা ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানগুলোও। এছাড়া, এ ধরনের ভুয়া লাইক বেড়ে যাওয়ায় অপেক্ষাকৃত কম খরচে বিজ্ঞাপন প্রচারকারী ফেসবুক বা গুগলের মতো সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোর বিজ্ঞাপন ব্যবসাও হুমকির মুখে পড়েছে। পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে ৠাংকিংয়েও।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, এসব ভুয়া লাইক বা ভিউ তৈরিতে কাজ করছেন ঢাকাসহ বিভিন্ন প্রান্তের ফ্রিল্যান্সাররা। পণ্য বা ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি এক হাজার লাইকে ১৫ মার্কিন ডলার নিয়ে থাকলেও ‘ক্লিক ফার্মে’ কর্মরত শ্রমিকদের দেওয়া হচ্ছে এক ডলারেরও কম পারিশ্রমিক।
গার্ডিয়ান তার প্রতিবেদনে আরও জানায়, এ ধরনের ভুয়া লাইক ও ভিউ তৈরির ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই অনেক খ্যাতনামা ব্র্যান্ডও।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রখ্যাত গেমস সফটওয়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হাসব্রোও তাদের ফেসবুক পেজে ভুয়া লাইক যোগ করেছে। হাসব্রো’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের পেজটি মুছে ফেলে।
তারপর এক বিবৃতিতে জানায়, যা ঘটেছে সেটা আতঙ্কজনক এবং পেজ কর্তৃপক্ষের অজ্ঞাতসারেই ঘটেছে।
লাইক দিয়ে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখা যায়, প্রায় ৩১ শতাংশ ভোক্তা কোনো পণ্য বা ব্র্যান্ডের সম্পর্কের ধারণা নেওয়ার ক্ষেত্রে পণ্যটির রেটিং, লাইক ও মন্তব্য ঘেঁটে দেখেন।
সেক্ষেত্রে রেটিং, লাইক এবং মন্তব্য সন্তোষজনক হলে ওই পণ্য বা ব্র্যান্ডের দিকে হাত বাড়ান তিনি আর স্পষ্টভাবে প্রতারিত হন।
গার্ডিয়ান আরও জানায়, এসব ক্লিক ফার্মে অগোছালো রুমে একটি অন্ধকার দেওয়ালের সামনে কম্পিউটারে সারাক্ষণ লাইক দেওয়ায় ব্যস্ত থাকেন এখানকার কর্মীরা। এমনকি সারারাত কাজ করে ১০০০ লাইক বা ফলোয়ার যোগাড় করে পারিশ্রমিক পান মাত্র এক ডলার।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস, লিঙ্কড-ইন এবং ইউটিউবে জনপ্রিয়তা বাড়াতে অনেক বড় বড় কোম্পানিকেও প্রস্তাব দিচ্ছে ঢাকায় নিবন্ধিত শেয়ারইটডটকম (Shareyt.com)।
মাউস ক্লিক করার মতো সহজেই পণ্য বা ব্র্যান্ডের জনপ্রিয়তা বাড়াতে সহযোগিতা নিতে নিজেদের সাইটে আহবান জানায় শেয়ারইটডটকম। এমনকি কোনো কোনো সাইটকে ৠাংকিংয়ের শীর্ষ পর্যায়ে এনে দিতেও প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে শেয়ারইটডটকম’র মতো ‘ক্লিক ফার্ম’গুলোর পক্ষ থেকে।
শেয়ারইটডটকম’র স্বত্বাধিকারি শরফ আল-নোমানী বলেন, ‘৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ক্লিকই বাংলাদেশ থেকে আসে। ঢাকাকেন্দ্রিক এসব ক্লিক ফার্মে রাতদিন কাজ করছে ২৫ হাজার শ্রমিক। ’
ভুয়া লাইক বা ভিউ বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশ্বে ঢাকার অবস্থান তৃতীয় বলেও জানায় গার্ডিয়ান। এ ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে মিশরের রাজধানী কায়রো।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তিবিদ গ্রাহাম ক্লুলি বলেন, ‘অনেক খ্যাতনামা ব্র্যান্ডও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের অ্যাকাউন্ট খুলে ভুয়া লাইক-ভিউ’র আশ্রয় নিয়ে ভোক্তা বা দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করছে। ’
এতে সত্যিকারের জনপ্রিয় সাইট এবং ব্র্যান্ডগুলোর ক্ষতি হচ্ছে বলেও মনে করেন ক্লুলি।
এ নিয়ে আগামীকাল সোমবার যুক্তরাজ্যের টেলিভিশন চ্যানেল ফোরের ডিসপাচেস অনুষ্ঠানে একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৩
সম্পাদনা: হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর-eic@banglanews24.com