কলকাতা: হাজার চেষ্টা করেও মানুষের মন জয় করতে পারছে না সিপিএম। যে সমস্ত গরিব সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ তাদের দিকে ছিলেন শেষ পর্যন্ত তাঁরাও মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় চিন্তার মধ্যে থাকতে হচ্ছে সিপিএমকে।
এমতাবস্থায় কি করণীয়, সেব্যাপারে ভেবে কুল পাচ্ছেন না তারা। শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগের পর অভিযোগ করে যে কাজের কাজ কিছু হয়নি সেটা তারা উপলব্ধি করেছেন। পাশাপাশি সাধারণ মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষ যে বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি, সেব্যাপারেও নিশ্চিত হয়েছে তারা।
সিপিএমের শীর্ষ নেতারা জরিপ করে দেখেছেন, রাজ্যের ব্যাপক সংখ্যাক গরিব মানুষ এখনও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই রয়েছেন। মমতা এবং তাঁর দলকে ঘিরে নানা সমালোচনা হলেও সাধারণ মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষ এখনও তৃণমূল সুপ্রিমোকেই সমর্থন করে যাচ্ছেন। সমস্ত সমালোচনা উপেক্ষা করে এখনও মমতার সভায় ভিড় জমাচ্ছেন তাঁরা।
পঞ্চায়েত ভোটের বিপর্যয়ের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সিপিএমের উপলব্ধি, রাজ্যের সাধারণ মানুষ এখনও বিগত বামফ্রন্ট সরকারের আমলের নানা কার্যকলাপ নিয়ে বিরক্ত। যেকারণে তারা নির্বাচনের আগে সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যুকে হাতিয়ার করে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামলেও সাফল্য আসেনি।
এমতাবস্থায় বাংলায় সিপিএমের ভবিষ্যত নিয়ে কী করণীয়, সে ব্যাপারে দফায় দফায় আলোচনা চালাচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতারা। বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ব্যাপক পরাজয় কেন সেব্যাপারে যাচাই করতে দলের শীর্ষ নেতারা কলকাতায় আসতে উদ্যোগী হয়েছেন।
বিধানসভা নির্বাচনের পরে সিপিএমের আশা ছিল, লোকসভা নির্বাচনের আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামেরা ভালো ফল করবে। কিন্তু জেলা নেতাদের পাঠানো হিসাব নিকেশ কোনটাই মেলেনি। জেলা থেকে আসা ভুল রিপোর্ট নিয়ে ক্ষিপ্ত আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতারা।
সিপিএম সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত ভোটে বিপর্যয় নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলা থেকে প্রাথমিক রিপোর্ট এসে পৌঁছেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে দেখা গেছে, যারা বিগত বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ভোট দেননি।
আগামী ২২ তারিখ থেকে রাজ্য কমিটির বৈঠক বসছে। বৈঠকে বিভিন্ন জেলা নেতৃত্ব তাঁদের রিপোর্ট পেশ করবেন। ভোট বিপর্যয় নিয়ে উত্তপ্ত হতে পারে এই বৈঠক। এদিকে পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে বিমান বসুরা পঞ্চায়েতে বিপর্যয়ের জন্য সন্ত্রাসকে বড় করে দেখলেও সেটা নিয়ে একমত নন দলের অনেকেই।
জেলা নেতাদের সাফ বক্তব্য, মানুষ বামফ্রন্ট সরকারের অনেক গর্হিত কাজকর্মের কথা এখনও ভুলতে পারেনি। সেকারণেই সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষ বামেদের ফের শিক্ষা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে মাথা নত করে ক্ষমা চেয়ে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।
আপাতত মানুষকে ফের তাদের পাশে আনবার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে উদ্যোগী হয়েছেন সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব।
বাংলাদেশ সময় : ১৭০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৩
এসপি/ সম্পাদনা: এসএস