নিউইয়র্ক: বাংলাদেশে কোনো ধরনের সামরিক হস্তক্ষেপ চায়না য়ুক্তরাষ্ট্র। আর তাই নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশের চলমান সঙ্কট উত্তরণের অন্য কোনো বিকল্প নেই।
আজ মঙ্গলবার সকালে স্টেট ডিপার্টমেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন বক্তব্যই বেরিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই ভিশাল এর মুখ থেকে।
তিনি বলেন, সহিংসতা বাদ দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশের চলমান সঙ্কটে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ হলে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কি হবে ? বাংলা নিউজের এ প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই ভিশাল বলেন, “বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অফিসিয়াল অ্যান্ড প্রাইভেট অথাৎ সরকারি ও বেসরকারি মেসেজ বা বার্তা একটাই- গণতন্ত্রে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। জরুরি ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমেই সবার কাছে গ্রহনযোগ্য সুষ্ঠু, অবাধও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। অপার সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশে। অর্জিত অগ্রগতি ও সম্ভাবনাকে অবশ্যই বাস্তবে রূপ দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র সেটাই চায়। ”
নিশা ভিশাল বাংলাদেশের অর্জিত সামগ্রিক সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করে আরও বলেন, বাংলাদেশ একটি ‘ইনক্রেডিবল স্টোরি’ । অভাবনীয় অগ্রগতি হয়েছে এ দেশটিতে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা, শিশু ও প্রসূতি মায়েদের মৃত্যুর হার সহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে গত এক দশকে। স্টেট ডিপার্টমেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেবার পর এটাই নিশা দেশাই ভিশাল এর প্রথম সংবাদ সম্মেলন।
বাংলাদেশ সফরকালে তার অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান সংকটের মূল কারণ হিসেবে তিনি কি দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশকে অপার সম্ভাবনার দেশ হিসেবে পেয়েছি। তবে রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে। বড় দু’দলকেই দায়িত্বশীল আচরণের মধ্য দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে।
দু’দলের মধ্যে দ্বন্দ্বে ‘গণতন্ত্রের সংকট’ই বাংলাদেশে প্রধান সমস্যা বলেন তিনি।
মিয়ানমার, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের নির্বাচন এতদাঞ্চলের গণতন্ত্রের ভিতকে শক্তিশালী করার পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে মন্তব্য করে নিশা দেশাই ভিশাল বলেন, এ অঞ্চলের প্রতিটি দেশেই শক্তিশালী গণতন্ত্র দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আর তাই বাংলাদেশের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে।
ভারত বিশ্বে গণতন্ত্রের উৎকৃষ্ট উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতের আসন্ন নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সার্থে ঘনিষ্টভাবে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্র মুখিয়ে আছে।
আসছে দশকে বিশ্বের অর্ধেক বা ৫০ ভাগ জিডিপি’র উৎসস্থল হবে এই এশিয়া বলে ভবিষ্যতবাণী করেছে বিশেষজ্ঞদের প্রতিষ্ঠানগুলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, আফগানিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকেও এ অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নিউসিল্ক রোড এর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র খুবই আশাবাদী এবং প্রেসিডেন্ট ওবামা এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক ভারসাম্যেও পুনঃবিন্যাসের উপর বিশেষ ভাবে জোর দিচ্ছেন।
সংবাদ মম্মেলনের শুরুতেই নিশা দেশাই ভিশাল তার বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন ঢাকাতে এডওয়ার্ড কেনেডির ‘কোটেশন’ দেখেছি- “আমাদের দুদেশের সম্পর্ক জণগনের সঙ্গে জনগণের, নাগরিকের সঙ্গে নাগরিকের এবং বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুর, আমি বলতে চাই তার এই মন্তব্যের আলোকেই আমি সামনে এগিয়ে যেতে চাই। ”
বাংলাদেশ সময়: ২৩০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৩