ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

কয়েদি থেকে প্রেসিডেন্ট

হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৩
কয়েদি থেকে প্রেসিডেন্ট

ঢাকা: বর্ণবাদবিরোধী সর্বোপরি মানবাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে নেলসন ম্যান্ডেলা একটি অবিসংবাদিত নাম। ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই জন্মগ্রহণ করা এই বিশ্ব নেতার জীবনের সোনালি সময়ের বেশির ভাগই কেটেছে কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে।



১৯৫২ সালে স্বজাতির ওপর বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলায় প্রথমবার স্বদেশে নিষিদ্ধ হন তিনি। ১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট গ্রেফতার হওয়ার পর দীর্ঘ ২৭ বছর কারাগারে আবদ্ধ রাখা হয় ম্যান্ডেলাকে। ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নিঃশর্ত মুক্তির আগে প্রায় ১৮ বছর নির্জন রোবেন দ্বীপে বন্দি রাখা হয় মাদিবাকে।

অধিকারের দাবিতে যুদ্ধ, তারপর কারাবাস। এরপর নতুন ইতিহাস রচনা করেন ম্যান্ডেলা। ১৯৯৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে দেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন এই মানবাধিকার নেতা। ওই বছরেরই ১০ মে দায়িত্ব গ্রহণের পর ১৯৯৯ সালের ১৪ জুন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ভবনে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তারপর রাজনীতি থেকে অবসরে যান মানবতার মহানায়ক।
Mandela-Azad-1
বর্ণবাদবিরোধী মুক্তিযুদ্ধ
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, শৈশব থেকে বর্ণবাদী বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র ‍আন্দোলন গড়ে তোলা ম্যান্ডেলা ১৯৬১ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (এএনসি) সশস্ত্র অঙ্গসংগঠন উমখোন্তো উই সিযওয়ের (এমকে) নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতী ও চোরাগোপ্তা হামলার পরিকল্পনা ও সমন্বয় করেন। এতেও বর্ণবাদী সরকার পিছু না হটলে প্রয়োজনবোধে গেরিলা যুদ্ধে নামার পরিকল্পনা করেন তিনি। এজন্য ১৯৬২ সালে মরক্কো ও ইথিওপিয়া থেকে গোপনে সামরিক প্রশিক্ষণ নেন তিনি। নিজের সশস্ত্র সংগঠন এমকে’র জন্য অর্থ জোগাড় ও সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য বিদেশেই কাজ শুরু করেন তিনি। তবে প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পনা করে দেশে ফিরলে পরের বছর তাকে দেশের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।

এই সশস্ত্র আন্দোলনকে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে নিতান্তই শেষ চেষ্টা বলে অভিহিত করেন ম্যান্ডেলা। দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা নিপীড়ন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলন সফল হবে না বলে তিনি উপলব্ধি করেন এবং এ জন্যই সশস্ত্র আন্দোলনের পথ বেছে নেন।

অবশ্য, সশস্ত্র আন্দোলনের জন্য ষাটের দশকে ম্যান্ডেলা ও তার এএনসিকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার। এজন্য ২০০৮ সালের জুলাই পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারতেন না ম্যান্ডেলা ও তার সহযোদ্ধারা।
Mandela-Azad-2
গ্রেফতার ও রিভোনিয়ার মামলা
প্রায় দেড় বছর ফেরারি থাকার পর রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও নাশকতার অভিযোগে ১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট ম্যান্ডেলাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের তিন দিন পর ১৯৬১ সালে শ্রমিক ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেওয়া এবং বেআইনি পন্থায় দেশের বাইরে যাওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। ১৯৬২ সালের ২৫শে অক্টোবর ম্যান্ডেলাকে এই দুই অভিযোগে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয় দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী ও নিপীড়ক সরকার। দুই বছর পর ১৯৬৪ সালের ১১ জুন ম্যান্ডেলার বিরুদ্ধে এএনসি’র সশস্ত্র সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।

আগের দণ্ডে অভিযুক্ত ম্যান্ডেলা যখন কারাভোগ করছেন তখন এএনসি’র শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ১৯৬৩ সালের ১১ জুলাই জোহানেসবার্গের রিভোনিয়ার লিলেসলিফ ফার্ম থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রিভোনিয়ার মামলা নামে খ্যাত এই মামলায় ম্যান্ডেলাকেও অভিযুক্ত করা হয়। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগও আনা হয়।

ডজন খানেক অভিযোগে অভিযুক্ত ম্যান্ডেলা ১৯৬৪ সালের ২০ এপ্রিল প্রিটোরিয়ার সুপ্রিম কোর্টে আসামির কাঠগড়ায় দাড়িয়ে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে ম্যান্ডেলা জানান, বহু বছর ধরে এএনসি অহিংস আন্দোলন চালিয়ে এসেছিলো। কিন্তু শার্পভিলের গণহত্যার পর তাঁরা অহিংস আন্দোলনের পথ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এই গণহত্যা, কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকারকে অবজ্ঞা করে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র ঘোষণা দেওয়া, জরুরি অবস্থার ঘোষণা এবং এএনসিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরে ম্যান্ডেলা ও তাঁর সহযোদ্ধারা অন্তর্ঘাতমূলক সশস্ত্র সংগ্রামকেই বেছে নেন। সশস্ত্র আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো কিছুই হতো বিনাশর্তে আত্মসমর্পণের নামান্তর।

ম্যান্ডেলা আদালতে আরও জানান, ১৯৬১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারা এমকে’র ইশতেহার লেখেন। এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য হিসেবে তারা বেছে নেন সশস্ত্র সংগ্রাম। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো, অন্তর্ঘাতের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করা এবং বর্ণবাদী ন্যাশনাল পার্টির সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।
Mandela-Azad-3
ম্যান্ডেলার পক্ষে ব্র্যাম ফিশার, ভার্নন বেরাঞ্জ, হ্যারি শোয়ার্জ, জোয়েল জফ, আর্থার চাসকালসন এবং জর্জ বিজোস ওকালতি করেন। মামলার শেষভাগে হ্যারল্ড হ্যানসন আইনি সহায়তার জন্য যোগ দেন। কিন্তু মামলার শুনানিতে রাস্টি বার্নস্টেইন ছাড়া অন্য সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তবে ১৯৬৪ সালের ১২ জুন দেওয়া রায়ে ফাঁসির বদলে তাদের সবাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

কারাবাস
দণ্ড প্রাপ্তির পর ম্যান্ডেলার কারাবাস শুরু হয় নির্জন রোবেন দ্বীপের কারাগারে। এখানে ২৭ বছরের কারাবাসের প্রথম ১৮ বছর কাটান তিনি। কারাগারে থাকার সময় বিশ্বজুড়ে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ম্যান্ডেলার। দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৃষ্ণাঙ্গ নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন তিনি। সশ্রম কারাদণ্ডের অংশ হিসাবে রোবেন দ্বীপের কারাগারে ম্যান্ডেলা ও তাঁর সহবন্দীরা একটি চুনাপাথরের খনিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হন। কারাগারের অবস্থা ছিলো বেশ শোচনীয়। কারাগারেও বর্ণ বৈষম্য ছিলো। কৃষ্ণাঙ্গ বন্দীদের সবচেয়ে কম খাবার দেওয়া হতো। সাধারণ অপরাধীদের থেকে রাজনৈতিক বন্দীদের আলাদা রাখা হতো। বন্দিরা সাধারণ অপরাধীদের চেয়ে কম সুযোগ সুবিধা পেতেন।

ম্যান্ডেলা তার জীবনীতে জানান, তাকে চতুর্থ পর্যায়ের বন্দী হিসেবে গণ্য করা হতো, অর্থাৎ সবচেয়ে কম সুবিধাপ্রাপ্ত বন্দীদের তালিকায় তাঁকে রাখা হয়েছিলো। প্রতি ৬ মাসে স্বজনদের পক্ষ থেকে মাত্র একটি চিঠি পৌঁছে দেওয়া হতো এবং একজন দর্শনার্থীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হতো। ম্যান্ডেলাকে লেখা চিঠি কারাগারের সেন্সরকর্মীরা অনেকদিন ধরে আটকে রাখতো। চিঠি ম্যান্ডেলার হাতে দেওয়ার আগে অনেক জায়গায় কালি দিয়ে অপাঠযোগ্য করে দেওয়া হতো।

কারাগারে থাকার সময় লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় পড়াশোনা শুরু করেন ম্যান্ডেলা এবং আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮১ সালে তাকে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে প্রিন্সেস অ্যানের কাছে সেই নির্বাচনে হেরে যান ম্যান্ডেলা।
Mandela-Azad-4
দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েন্দা বিভাগের গুপ্তচর গর্ডন উইন্টার ১৯৮১ সালে নিজের ‘ইনসাইড বস’ শিরোনামের আত্মজীবনীতে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের একটি গোপন ষড়যন্ত্রের কথা ফাঁস করে দেন। ষড়যন্ত্র অনুযায়ী ১৯৬৯ সালে ম্যান্ডেলাকে কারাগার থেকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে কারাগারে হামলা চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার গুপ্তচররা এই ষড়যন্ত্রে অংশ নেয়। উদ্দেশ্য ছিলো, কারাগার থেকে ম্যান্ডেলাকে পালাতে দেওয়ার পর তাকে ধাওয়া করে পুনরায় গ্রেফতারের নামে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলা। এই ষড়যন্ত্রের খবর যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা জেনে ফেলায় তা নস্যাৎ হয়ে যায়।

১৯৮২ সালের মার্চ মাসে ম্যান্ডেলাকে রোবেন দ্বীপের কারাগার থেকে পোলসমুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এসময় ম্যান্ডেলার সঙ্গে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের উচ্চপদস্থ নেতা ওয়াল্টার সিসুলু, অ্যান্ড্রু ম্লাগেনি, আহমেদ কাথরাদা এবং রেমন্ড মলাবাকেও সেখানে নেওয়া হয়। ধারণা করা হয়, রোবেন দ্বীপে কারারুদ্ধ নতুন প্রজন্মের কৃষ্ণাঙ্গ রাজনৈতিক বন্দীদের ওপর ম্যান্ডেলা ও অন্যান্য নেতার প্রভাব কমানোর জন্যই এটা করা হয়। তবে ন্যাশনাল পার্টির তদানীন্তন মন্ত্রী কোবি কোয়েটসির মতে, ম্যান্ডেলাকে স্থানান্তর করার মূল লক্ষ্য ছিলো ম্যান্ডেলার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের গোপন বৈঠক ও আলোচনার ব্যবস্থা করা।

১৯৮৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পি ডব্লিউ বোথা ম্যান্ডেলাকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ’ করার শর্তে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

কোয়েটসিসহ অন্য মন্ত্রীরা প্রেসিডেন্ট বোথার এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। তারা বলেন, ম্যান্ডেলা কারামুক্তির লোভে পড়ে কখনোই নিজের সংগঠনকে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ থেকে সরিয়ে আনবেন না। আসলেই সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন ম্যান্ডেলা।
Mandela-azad-5
মেয়ে জিন্দজির মাধ্যমে এক বিবৃতিতে ম্যান্ডেলা বলেন, আমাকে মুক্ত করতে এ  কেমন প্রস্তাব, যেখানে জন-সংগঠনকেই নিষিদ্ধ করা হচ্ছে? কেবল মুক্ত মানুষই আলোচনায় বসতে পারে। বন্দীরা কখনো চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারে না।

তবে শেষ পর্যন্ত ম্যান্ডেলা ও ন্যাশনাল পার্টি সরকারের মধ্যে ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বরে আলোচনা শুরু হয়। ম্যান্ডেলার সঙ্গে কেপটাউনের ভোক্স হাসপাতালে দেখা করেন কোয়েটসি। ম্যান্ডেলা তখন প্রস্টেট গ্রন্থির শল্য চিকিৎসা শেষে আরোগ্য লাভ করছিলেন। পরের চার বছর ধরে ম্যান্ডেলার সঙ্গে সরকার একাধিকবার আলোচনায় বসে। কিন্তু এসব আলোচনায় বিশেষ কিছু অগ্রগতি হয়নি।

১৯৮৮ সালে ম্যান্ডেলাকে ভিক্টর ভার্সটার কারাগারে সরিয়ে নেওয়া হয়। মুক্তির আগ পর্যন্ত ম্যান্ডেলা এ কারাগারেই বন্দী ছিলেন। আস্তে আস্তে তার ওপরে কড়াকড়ি কমানো হয় এবং দর্শনার্থীদের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়।

ম্যান্ডেলার কারাবন্দিত্বের সময় তাঁর মুক্তির জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের ওপরে চাপ বাড়তে থাকে। ম্যান্ডেলার মুক্তির জন্য এই আন্দোলনের বহুল ব্যবহৃত শ্লোগানটি ছিলো ‘ফ্রি নেলসন ম্যান্ডেলা!’ (ম্যান্ডেলার মুক্তি চাই)।

১৯৮৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়ান বোথা। তার স্থলাভিষিক্ত হন ফ্রেডেরিক উইলেম ডি ক্লার্ক। রাজনৈতিক এই পটপরিবর্তনের পরই ডি ক্লার্ক ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ম্যান্ডেলাকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন।

দীর্ঘ কারাভোগের সময় আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির প্রতিনিধিরা বেশ কয়েকবার ম্যান্ডেলার সঙ্গে রোবেন দ্বীপ ও পোলসমুর কারাগারে দেখা করেন।

কারামুক্তি
১৯৯০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট ক্লার্ক এএনসি সহ বর্ণবাদবিরোধী অন্য সংগঠনগুলোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। একইসঙ্গে ঘোষণা দেন, ম্যান্ডেলাকে অচিরেই মুক্তি দেওয়া হবে। প্রেসিডেন্টের ঘোষণা অনুযায়ী ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভিক্টর ভার্সটার কারাগার থেকে ম্যান্ডেলাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ম্যান্ডেলার কারামুক্তির মুহূর্তটি সরাসরি সম্প্রচার করে বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমগুলো।
Mandela-Azad-6
কারামুক্তি লাভের পর নিপীড়িত জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন ম্যান্ডেলা। ভাষণে শান্তি রক্ষা ও কৃষ্ণাঙ্গ-শেতাঙ্গদের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখার আহবান জানান। একইসঙ্গে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সশস্ত্র সংগ্রাম শেষ হয়ে যায়নি জানিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ১৯৬০ সালে আমরা সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করতে বাধ্য হই। বর্ণবাদের হিংস্রতার হাত থেকে আত্মরক্ষার খাতিরেই আমরা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সশস্ত্র অঙ্গসংগঠন উমখান্তো উই সিযওয়ে গঠন করেছিলাম। সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করার পেছনের কারণগুলো এখনো রয়ে গেছে। তাই এ সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো পথ নেই। আমরা আশা করি, শান্তি আলোচনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ অচিরেই সৃষ্টি হবে এবং আমাদের আর সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার দরকার হবে না।

ম্যান্ডেলা আরও বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হলো বৈষম্যের শিকার কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য শান্তি নিয়ে আসা। আর স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করা।

শান্তি আলোচনা ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ
কারামুক্তির পর আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন ম্যান্ডেলা। ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত এই দলের নেতা ছিলেন তিনি। এই সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ অবসানের লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তিনি। এই শান্তি আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার পর ১৯৯৪ সালে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিপুলভোটে জয়লাভ করে দেশের ইতিহাসের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২২১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।