ঢাকা: এ প্রজন্মের সবচেয়ে বড় স্মরণানুষ্ঠান হতে চলেছে নেলসন ম্যান্ডেলার। আগামী মঙ্গলবার স্মরণানুষ্ঠানের পর বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের এ অবিসংবাদিত নেতাকে ১৫ ডিসেম্বর রোববার কুনুতে পারিবারিক সমাধিস্থলে চির সমাহিত করা হবে।
দক্ষিণ আফ্রিকান প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ব নেতা ও ম্যান্ডেলাপ্রেমীদের গণউপস্থিতির কথা মাথায় রেখে জোহানেসবার্গের এফএনবি স্টেডিয়ামে (সকার সিটি স্টেডিয়াম) এই স্মরণানুষ্ঠান আয়োজনের কার্যক্রম চলছে।
সবকিছু ঠিক থাকলে ম্যান্ডেলার এই স্মরণানুষ্ঠানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শতাধিক প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী এবং রাজপরিবারের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক দশকগুলোতে যে স্মরণানুষ্ঠান বা শেষকৃত্যানুষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি লোক সমাগম হয়েছিল তার মধ্যে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল, রোমান ক্যাথলিক পোপ জন পল দ্বিতীয়, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি, ইসরায়েলের নোবেলজয়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী যিতঝ্যাক রাবিন, যুক্তরাজ্যের রাজবধূ প্রিন্সেস ডায়ানা, আধুনিক চীনের স্থপতি মাও সেতুং ও মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের স্মরণানুষ্ঠান বা শেষকৃত্য উল্লেখযোগ্য।
উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ১৯৬৫ সালে উইনস্টন চার্চিলের শেষকৃত্যে উপস্থিত হয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের চারজন রাজা, দুইজন রানী, ফরাসি জেনারেল চার্লস দ্য গঁলা সহ ১১৩টি দেশের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী। তিন দিন ধরে চার্চিলের মরদেহে শ্রদ্ধা জানান দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ মানুষ।
২০০৫ সালে রোমান ক্যাথলিক চার্চের ধর্মগুরু পোপ জন পল দ্বিতীয়’র শেষকৃত্যে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাকসহ অন্তত ৮০টি দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান উপস্থিত ছিলেন। এপির খবরে বলা হয়, ওই শেষকৃত্যানুষ্ঠানে সিরিয়া ও ইরানের প্রেসিডেন্ট এবং জর্দানের বাদশাও উপস্থিত ছিলেন। ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের ওই শেষকৃত্যানুষ্ঠানে কমপক্ষে ৩ লাখ মানুষ তখন জড়ো হয়েছিলেন পোপকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। শেষকৃত্যানুষ্ঠানে প্রত্যক্ষ অংশ নিতে না পারলেও লাখো মানুষ টেলিভিশন পর্দায় শোকাশ্রুতে বিদায় জানান প্রিয় ধর্মগুরুকে।
১৯৬৩ সালে আততায়ীর গুলিতে নিহত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির শেষকৃত্যে ২৮টি দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও রাজা উপস্থিত ছিলেন। ওয়াশিংটনের রাস্তা দিয়ে যখন কেনেডির লাশবহর যাচ্ছিল তখন অনেক লোককেই হাউমাউ করে কাঁদতে দেখা গেছে।
১৯৯৫ সালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী যিতঝ্যাক রাবিনের শেষকৃত্যে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনসহ মোট ৪০টি দেশের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন কিছু আরব রাষ্ট্রের নেতাও।
১৯৯৭ সালে প্রিন্সেস ডায়ানার শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, তৎকালীন মার্কিন ফাস্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনসহ বেশকিছু রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা। নেতারা অপেক্ষাকৃত কম থাকলেও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ডায়ানাভক্তরা শেষকৃত্যানুষ্ঠানে জড়ো হন প্রিয় মানুষটিকে শেষ বিদায় জানানোর জন্য।
১৯৭৬ সালে দূর প্রাচ্যের কমিউনিস্ট বিপ্লবের নেতা ও আধুনিক চীনের স্থপতি মাও সেতুংয়ের স্মরণানুষ্ঠানে জড়ো হয় লাখো মানুষ। বেইজিংয়ের প্রাণকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সেই শেষকৃত্যে অবশ্য বিশ্ব নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বিশ্ব নেতারা না থাকলেও গণচীনের লাখো মানুষ প্রিয় বিপ্লবী নেতাকে শোকাশ্রুতে শেষ বিদায় জানায়।
১৯৮১ সালে আরব-ইসরায়েল শান্তিচুক্তির প্রবক্তা মিশরীয় প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন তিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, ডজনখানেক দেশের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রিন্স চার্লসসহ রাজপরিবারের অন্য সদস্যরা। তবে নিজেদের স্বার্থের বিরুদ্ধে চুক্তি স্বাক্ষর করার ক্ষোভ থেকে সাদাতের শেষকৃত্যেও যাননি আরব দেশগুলোর কোনো নেতা।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে উপর্যুক্ত নেতাদের শেষকৃত্য বা স্মরণানুষ্ঠানে এমন লাখো মানুষের উপস্থিতি থাকলেও ম্যান্ডেলার স্মরণানুষ্ঠানেই সবচেয়ে বেশি জনসমাগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যেই নিজের ব্যস্ততম শিডিউল সংক্ষিপ্ত করে ম্যান্ডেলাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যে আগামী মঙ্গলবারের আগেই জোহানেসবার্গে পৌঁছানোর কথা জানিয়েছেন বারাক ওবামা ও মিশেল। সঙ্গে নিয়ে আসছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বুশ দম্পতিকেও। আসছেন বিল ক্লিনটন ও হিলারি পরিবারও।
এছাড়া, রাশিয়া, চীন, জাপান, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ব্রাজিল, কিউবা, ভেনিজুয়েলাসহ বিশ্বের অনেক দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান ম্যান্ডেলার স্মরণানুষ্ঠানে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৩