সরকারের দমন-পীড়নে তিতিয়ে উঠেছিল জীবন । তাই পুরো বিশ্বের সঙ্গে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয় সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি পরিবার।
স্ট্যালিনের অত্যাচার থেকে বাঁচতে সাইবেরিয়ার জঙ্গলে ঘর বাঁধে ওই পরিবার। একে একে পরিবারের সবাই মারা যায়। বেঁচে রয়েছেন শুধু আগাজা লিকোভা।
পরিবারের শেষ ব্যক্তিটি ২৬ বছর আগে মারা গেলেও বাবা-মার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন তিনি। নির্জনে থেকেছেন। কিন্তু আর পারছেন না। বয়স হয়েছে অনেক।
৭০ বছরের এ বৃদ্ধা তাই সঙ্গী চেয়ে আবেদন করেছেন। সাইবেরিয়ার একটি পত্রিকায় ছাপানো হয়েছে তার হৃদয়স্পর্শী ওই আবেদনপত্র।
তিনি বলেছেন, আরও একজন খ্রিস্টান এখানে আসুক এবং তার সঙ্গে নিকটবর্তী শহর থেকে কয়েক শত মাইল দূরে তার সঙ্গে থাকুক। তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। শীতল আবহাওয়ায় কাবু হয়ে যান তিনি। একাকী টিকে থাকার সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তিনি। বাড়ির সব কাজ একাই করছেন।
আগাজা লিকোভা লিখেছেন, ‘আমি একাকী, আমার অনেক বয়স হয়েছে, আমার স্বাস্থ্য খারাপ, আমি অসুস্থ হচ্ছি। আমি শক্তি হারিয়ে ফেলছি। একজন ব্যক্তির, সহয়তাকারীর দরকার। এই বিশ্বে অনেক দয়ালু ব্যক্তি আছেন। বিশ্বে সবসময় দয়ালু ব্যক্তিরা থাকেন। যিশু খ্রিস্টের নামে কেঁদে কেঁদে আপনাদের কাছে আবেদন করছি, আমাকে একা রাখবেন না। একজন এতিমকে দয়া করুন। ’
আগাজার সঙ্গী বলতে তিন ছাগল, আটটি বিড়াল, একটি বনমোরগ, কয়েকটি মুরগি ও একটি কুকুর। খাবার সংগ্রহে তাকে পড়তে হয় নানা সমস্যায়। শীতের সময় তার এ কষ্ট বেড়ে যায়। আগুন জ্বালানোর লাকড়ি সহজে মেলে না।
আগাজার সুস্থ আছেন কিনা তা দেখতে প্রতিবছর তার বাড়িতে যান রাশিয়ার কর্মকর্তারা।
স্ট্যালিনের অত্যাচার থেকে বাঁচতে ১৯৩৬ সালে বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন আগাজা লিকোভার বাবা-মা। দ্য সাইবেরিয়ান টাইমসের মতে, আগাজা লিকোভা জন্মেছিলেন ১৯৪৪ বা ১৯৪৫ সালে। ১৯৭৮ সালের আগ পর্যন্ত তাদের অবস্থান কেউ জানত না। সেসময় সোভিয়েত ভূ-তাত্ত্বিকরা সায়ান পর্বতমালার উপর দিয়ে বিমানে ঘোরার সময় তাদের নজরে আসে লিকোভা পরিবার। ওই সময় আগাজার বয়স ছিল ৩৪।
আগাজা লিকোভের চার ভাই-বোন ছিলেন। তার ভাই সাভভিন, দিমিত্র ও বোন নাতালা ১৯৮০ এর দশকে মারা যান। মা মারা যান ১৯৬১ সালে। তাদেরকে যখন দেখতে পাওয়া যায়, তখন আগাজার বয়স ছিল ৩৪ বছর। তার বাবার মৃত্যুর সময় জানা যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৪