ঢাকা: প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের পর নিজেকে বার্কিনা ফাসোর রাষ্ট্রপ্রধান (হেড অব স্টেট) দাবি করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল হনোর ট্রাওর।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ব্লেস কমপাওরে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত জানানোর কয়েক ঘণ্টা পর সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান সেনাপ্রধান।
সেনাপ্রধান বলেন, রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশে সাংবিধানিক ধারা ফেরাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা নিয়ে কাজ করবো।
এর আগে, তুমুল বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বিবৃতি দেন প্রেসিডেন্ট কমপাওরে। বিবৃতিতে ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার আহ্বানও জানান ২৭ বছর ধরে পশ্চিমা আফ্রিকার দেশটি শাসন করা এই সামরিক শাসক।
প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের কথা সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রচারের পর রাজধানী ওয়াগুডুগুসহ বার্কিনা ফাসোজুড়ে উল্লাসে মাতেন সরকারবিরোধী রাজনীতিক কর্মীরা।
২৭ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতার মেয়াদ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়ায় বিক্ষোভে নামে সরকারবিরোধীরা। কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী বৃহস্পতিবার পার্লামেন্ট ভবন, সরকারি দলের প্রধান দপ্তর ও রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দপ্তরে হামলা চালায়। পার্লামেন্টে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দিয়ে লুটপাটও করে। তছনছ করে টেলিভিশন ভবনও।
বিক্ষোভ ঠেকাতে বৃহস্পতিবার রাতে জরুরি অবস্থা জারি করে সংসদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট। এরপর দেশব্যাপী বিক্ষোভ আরও জোরদার হয়।
সহিংসতায় অন্তত ৩০ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন বলে দাবি করেন বিরোধী দলের শীর্ষ নেতা বেনেওয়েন্ডা সাঙ্কারা।
এই পরিস্থিতিতে কমপাওরে মেয়াদ বৃদ্ধির উদ্যোগ থেকে পিছু হটলেও ২০১৫ সাল পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের ঘোষণা দেন। কিন্তু তার এ ইচ্ছাও প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভকারীরা।
প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে শুক্রবার বিকেলেও জনগণকে সরকারি স্থাপনা দখলের আহ্বান জানান বিরোধী দলের নেতা জেফিরিন ডায়াবের।
এর কয়েক ঘণ্টা পর টেলিভিশন ও রেডিওতে দেওয়া ভাষণে কমপাওরে বলেন, তিনি এখনও রাষ্ট্রপ্রধান এবং তিনি পদত্যাগ করবেন না।
বিশ্লেষকদের ধারণা, তার এই ঘোষণা ও বিরোধীদের মারমুখী অবস্থানে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও মারাত্মক আকার ধারণের শঙ্কা দেখা দিলে সেনাবাহিনীর চাপে পদত্যাগে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট।
প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করে বিরোধী নেতা জেফিরিন ডায়াবের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
১৯৮৭ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসেন ব্লেইস কমপাওর। এরপর থেকে চার চারবার বিতর্কিত নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এবছর পুনরায় ক্ষমতার মেয়াদ বৃদ্ধির করার উদ্যোগ নেওয়া হলে চলতি সপ্তাহের শুরুতে দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৪