রোম: লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির বিস্ময়কর চিত্রকর্ম মোনালিসার বাস্তব মডেল বলে যাকে ধারণা করা হয় সেই লিসা ঘেরারদিনির দেহাবশেষের সন্ধান পাওয়া গেছে! ইতালির ফ্লোরেন্সেই ওই নারীর সমাধি রয়েছে বলে ধারণা করেছেন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুসন্ধানকারীরা। খবর গার্ডিয়ানের।
ইতালির একদল গবেষক আগামী মাসেই ফ্লোরেন্সের একটি সন্নাসি মঠে রেনেসাঁর নারী মোনালিসার মডেল লিসার হাড়গোড়ের সন্ধানে খননকাজ শুরু করবেন বলে পরিকল্পনা নিয়েছেন।
যদি তারা সফল হন তাহলে ভিঞ্চির এ শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্মে আসলে কাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তা নিয়ে এতোদিনের বিতর্কের অবসান ঘটবে।
এ রহস্য বহু জ্ঞানী, শিল্পরসিককে শতশত বছর ধরে একটি গোলকধাঁধার মধ্যে রেখেছে। এ রহস্যের জট খুলতে তৈরি হয়েছে অসংখ্য তত্ত্ব।
১৬ শতকের শিল্পী এবং জীবনীকার গিয়োরজিও ভাসারি লেখেন, মোনালিসা আসলে তৎকালীন ইতালির ধনাঢ্য রেশম ব্যবসায়ী ফ্রানসেসকো ডেল জিয়োকনদোর স্ত্রী।
ভিঞ্চির এ শিল্পকর্মের সঙ্গে ঘেরারদিনির বহুদিনের ঐতিহ্যগত সম্পর্ক রয়েছে। ইতালিতে এ নারী লা জিয়োকোন্দা এবং ফ্রান্সে লা জেকোদেঁ নামে পরিচিত। এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো এ নারীর অস্তিত্ব নিশ্চিত করা।
কয়েক বছর আগে ইতালির একজন সৌখিন ঐতিহাসিক বলেছিলেন, জেরারদিনি ১৪৭৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দাবি করেন, তিনি তার মৃত্যুসনদ খুঁজে পেয়েছেন যাতে তার মৃত্যু তারিখ দেওয়া আছে ১৫ জুলাই, ১৫৪২ সাল। তাকে সমাধিস্থ করা হয়েছে ফ্লোরেন্সের কেন্দ্রস্থলে সেন্ট উরসুলা মঠে।
ঘেরারদিনি সন্ধানের প্রকল্পপ্রধান এবং শিল্প ইতিহাসবিদ সিলভানো ভিনসেতি বলেন, এ মাসের শেষের দিকে ঠিক ওই জায়গাতেই খনন কাজ শুরু করা হবে।
তিনি জানান, ঘেরারদিনির মৃতদেহ খুঁজে পেতে যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে তা হলো- মোনালিসার প্রথমে ভূগর্ভে রাডার ঢুকিয়ে ওই মঠে কোনো কবর আছে কিনা তা সন্ধান করা। কোনো হাড় খুঁজে পেলে পরীক্ষা করে দেখা হবে তা ১৫৪২ সালে ষাটোর্ধ বয়সে যেসব নারী মারা গেছেন তাদের মধ্যে কোনো নারীর সঙ্গে মেলে কি না।
আরো নির্দিষ্ট করে সনাক্ত করতে ঘেরারদিনির জীবদ্দশায় জানা সম্ভাব্য রোগবালাই এবং হাড়ের গঠনও মিলিয়ে দেখা হবে। একই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হাড় খুঁজে পেলে গবেষকরা কার্বন ডেটিং পরীক্ষা করবেন।
এরপর ডিএনএ সংগ্রহ করা হবে। পরে ওই ডিএনএ এর সঙ্গে ঘেরারদিনির সন্তানদের ডিএনএ মিলিয়ে দেখা হবে। জানা যায়, তার সন্তানদের অনেককে ফ্লোরেন্সের একটি ব্যাসিলিকায় (বিশেষ কাঠামোর গির্জা) সমাধিস্থ করা হয়েছে।
সবশেষে যদি মাথার খুলির অংশবিশেষ উদ্ধার করা যায় তাহলে এরমাধ্যমে তার মুখের গঠন পুনরুদ্ধরের চেষ্টা করা হবে। একাজে সফল হলেই মোনালিসার সেই রহস্যময় ভুবনমোহিনী হাসির অধিকারী দুর্লভ নারী হবেন ঘেরারদিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১১